দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ শুক্রবার দলের বিধায়ক, নেতা, মন্ত্রীদের নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, অনেকে চাইছে আমি মরে যাই। শুনে রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী কেঁদে ফেলেছিলেন বলেও জানা গিয়েছে।
ভার্চুয়াল বৈঠক দেখার অধিকার সাংবাদিকদের ছিল না। সাধারণেরও নয়। তাই দিদিকে সে কথা বলতে তৃণমূলের বাইরে কেউ দেখেননি। তবে ঘটনা হল, গত পরশু বৃহস্পতিবারও একই কথা বলেছিলেন। রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক ছিল দিদির। সেই বৈঠক ফেসবুকে লাইভ হয়েছিল। তাতেও দেখা যায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক সময়ে বলছেন, “অনেকে চায় আমি তাড়াতাড়ি মরে যাই। অনেকে মৃত্যু কামনা করে। তাতে আমার কিছু যায় আসে না। জন্মেছি একদিন মরতে হবে, তা নিয়ে আমি ভাবি না”।
শনিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই কথা নিয়েই তাঁকে কটাক্ষ করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। তিনি বলেন, “বালাই ষাট। উনি দীর্ঘজীবী হোন। একটা আকণ্ঠ দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারের কীভাবে পতন ঘটছে, একটা অত্যাচারী-স্বৈরাচারী দল কীভাবে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ছে তা দেখে যেতে হবে তো!” অধীরবাবু আরও বলেন, “এটা শুনে মনে হচ্ছে দেউলিয়া হয়ে গেছে, ভোট চাইতে ভেক ধরতে হচ্ছে”।

আবার বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, “কার মনে কী আছে, বোঝা দায়! মুখ্যমন্ত্রী যখন বলছেন, তখন নিশ্চয়ই জানেন কারা এসব ভাবছেন। উনি পুলিশ মন্ত্রী, তদন্ত করুন। নইলে লোকে ভাববে সহানুভূতি কুড়োতে নেমেছে”।

অধীর-সুজনরা যে কথা বলেছেন, তাতে তৃণমূলের অনেকের গায়ে জ্বালা ধরারই কথা। বিশেষ করে যাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আবেগ দিয়ে ভালবাসেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য বাঁচেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য মরতেও কুণ্ঠা নেই।
তৃণমূলের এক নেতার কথায়, দিদি হয়তো এই আবেগটাই উস্কে দিতে চাইছেন। এটা মেনে নিতে দ্বিধা নেই যে ৯৮ সালে যে উদ্দেশ্য নিয়ে দল শুরু হয়েছিল, সেই কারণটাই আর নেই। দশ বছর হল সিপিএম ক্ষমতায় নেই। একে তো দলের সুস্থির মতাদর্শ নেই (আজন্ম বিজেপি বিরোধী বলা যাবে না), উপরি সিপিএম বিরোধিতার আবেগ ও ক্রোধটাও উবে গেছে। তাই হতে পারে এই প্রথম বার তৃণমূল যখন ভাঙনের মুখে, নেতৃত্বের প্রতি একাংশের অনাস্থা দেখা যাচ্ছে, বলা হচ্ছে, ‘এক সঙ্গে কাজ করা সম্ভব নয়’, তখন দিদি হয়তো আবার দলের মধ্যে আবেগ উস্কে দিতে চাইছেন। যে আবেগ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঘিরে আবর্তিত। যে আবেগ তৃণমূলকে সংকটের পরিস্থিতিতে ক্ষুদ্র ব্যক্তিস্বার্থের উর্ধ্বে ঐক্যবদ্ধ করতে পারে। দলের ওই নেতার কথায়, এই আবেগ যদি ম্যাজিকের মতো কাজ করে তা হলে বুঝতে হবে এখনও আশা রয়েছে। যদি তা কাজ না করে, যদি এটা নিয়ে বা সুব্রত বক্সীর কান্না নিয়ে আড়ালে আবডালে দলের মধ্যেই হাসাহাসি চলে তা হলে অবশ্যই চিন্তা রয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here