দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ এবারের বিধানসভা নির্বাচনে উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় ভোটের ফল ৩৩-০ হয়ে যেতে পারে। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীর তালিকা ঘোষণা হওয়ার পরই এমন দাবি করলেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।

শুক্রবার তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হওয়ার পর প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে উত্তর ২৪ পরগনা  জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি তথা হাবরা বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “জেলায় বিজেপি যা লাফাচ্ছিল তাতে কোনও কেন্দ্রে প্রার্থী নিয়ে অসুবিধা আছে কিনা তা নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে তাতে জেলায় ৩৩-০ হয়ে যেতে পারে।”

জেলায় যারা প্রার্থী হতে পারেনি তাতে দলের বিরুদ্ধে কোন ক্ষোভ তৈরি হবে কিনা সেই প্রশ্নের উত্তরে তৃণমূল প্রার্থী জানান, তাঁদের ক্ষোভ তৈরি হওয়ার কোনও কারণ নেই। তাকেও যদি প্রার্থী না করে দল শুধুমাত্র কাজ করার নির্দেশ দিত তাহলে তিনি সেই নির্দেশই পালন করতেন। রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস ২২১টি আসন জিতে সরকার গঠন করবে বলেও জানান বলেও দাবি করেন জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি।

গাইঘাটা বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী নরোত্তম বিশ্বাস,
বনগাঁ বিধানসভা (উত্তর) কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী শ্যামল রায়,
বাগদা বিধান সভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী পরিতোষ কুমার সাহা,

এদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী ঘোষণা করতেই আমডাঙা বিধানসভা কেন্দ্রের সন্তোষপুরে বিক্ষুব্ধ কর্মী সমর্থকরা ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন এদিন। দু’বারের তৃণমূলের বিধায়ক রফিকার রহমানকে সরিয়ে এবার আমডাঙায় প্রার্থী করা হয়েছে দেগঙ্গার বাসিন্দা মুস্তাক মুর্তজাকে। এতেই রফিকার অনুগামী কর্মী সমর্থকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে অবরোধ শুরু করে। তাঁদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীকে ভুল বুঝিয়ে প্রার্থী করা হয়েছে মুর্তজাকে। বহিরাগতকে তাঁরা মানবেন না বলেও জানান। প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করতে হবে বলেও দাবি করেন বিক্ষোভকারীরা। প্রার্থী বদল করা নিয়ে প্রাক্তন বিধায়ক রফিকুর রহমান বলেন “এই নিয়ে আমার কোন ক্ষোভ নেই। কিন্তু আমডাঙার দলীয় কর্মীদের ক্ষোভ রয়েছে।”

উল্লেখ্য, এবারে ৬৪ জন বিধায়কের নাম কাটা পড়ল শাসক তৃণমূলের প্রার্থিতালিকা থেকে। যা থেকে স্পষ্ট, ‘কঠিন’ বিধানসভা ভোটে ‘কঠোর’ প্রার্থিতালিকা তৈরি করেছেন তৃণমূলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিধানসভা ভোটের আগে থেকেই প্রার্থিতালিকা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছিলেন মমতা। পাশাপাশি, তিনি তথ্য নিয়েছেন ভৌট-কৌশলী প্রশান্ত কিশোরের সংস্থার কাছ থেকেও। প্রশান্তের সংস্থার কর্মীরা সরেজমিনে গিয়ে প্রার্থীদের সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছেন। ‘স্বচ্ছ ভাবমূর্তি’-র বিষয়ে যেমন খোঁজ নেওয়া হয়েছে, তেমনই খোঁজ নেওয়া হয়েছে এলাকায় সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর জনপ্রিয়তা এবং কর্মদক্ষতার বিষয়েও। পাশাপাশিই, বিজেপি-র সঙ্গে ‘যোগাযোগ’ নিয়েও আবশ্যিক খোঁজখবর করা হয়েছে। সমস্ত দিক খতিয়ে দেখেই দলনেত্রী মমতা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

যে সমস্ত বিধায়ক তাঁদের পুরোন আসনে দাঁড়াতে চাননি, তাঁদের সঙ্গে কোনও আপসে যেতে চাননি মমতা। যেমন দক্ষিণ কলকাতা বাসিন্দা এক বিধায়ক নেত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন, তাঁর গ্রামীণ কেন্দ্র থেকে সরিয়ে এনে তাঁকে যেন কলকাতার ৪০-৫০ কিলোমিটারের মধ্যে একটি কেন্দ্রে টিকিট দেওয়া হয়। কারণ, তাঁর কেন্দ্রটিই প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দূরে। সেখানে নিয়মিত যাতায়াত করা কঠিন। মমতা তাতে কর্ণপাত করেননি। এবং শেষপর্যন্ত প্রার্থিতালিকায় ওই বিধায়ককে রাখেননি। কিছু বিধায়ককে বাদ দেওয়া হয়েছে অসুস্থতা এবং বয়সের কারণে। অনেকে আবার লোকসভা ভোটের নিরিখে বিপুল ভোটে বিজেপি-র চেয়ে পিছিয়ে ছিলেন। অনেকের জীবনযাপন নিয়ে প্রশ্ন ছিল। স্থানীয় স্তরে অভিযোগও ছিল। অনেকে ‘নিষ্ক্রিয়’ হয়ে পড়েছিলেন বলেও খবর পৌঁছেছিল কালীঘাটে। যেমন নদিয়ার এক বিধায়ককে বাদ দেওয়া হয়েছে সাংগঠনিক ব্যর্থতা এবং নিষ্ক্রিয়তার কারণে। আবার রাজ্যের এক প্রাক্তন মন্ত্রীকেও বাদ দেওয়া হয়েছে একই কারণে। অপর এক প্রাক্তন মন্ত্রীকে বাদ দেওয়া হয়েছে তাঁর জীবনযাপন নিয়ে এলাকায় বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ থাকায়।

রায়দিঘির বিধায়ক দেবশ্রী রায়কে এবার টিকিট দেওয়া হয়নি। কারণ, কিছুদিন আগেই দেবশ্রী জানিয়েছিলেন, তিনি আর রায়দিঘিতে দাঁড়াতে চান না। দলকে বলেছেন অন্য কেন্দ্র দিতে। প্রার্থিতালিকা থেকেই বোঝা যাচ্ছে, দেবশ্রীর আবেদন মানেনি দল। অন্য কেন্দ্র দেওয়া তো দূরের কথা! তাঁকে তালিকা থেকেই ছেঁটে ফেলা হয়েছে। বাদ পড়ে অনেকে ভেঙে পড়েছেন। অনেকে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন। তাঁদের মধ্যে আরাবুল ইসলামের মতো দুঁদে এবং দাপুটে নেতাও রয়েছেন। শুক্রবার প্রার্থিতালিকা ঘোষণার সময় মমতা জানান, এ বারের তালিকা থেকে আশি ঊর্ধ্ব এমন অনেককেই বাদ দেওয়া হয়েছে।প্রার্থিতালিকা প্রকাশের পর দেখা যাচ্ছে ৬৪ জন বিধায়ক বাদ পড়েছেন। তার মধ্যে আবার পাঁচ জন মন্ত্রীও আছেন। তাঁরা হলেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র,কারিগরি শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং উদ্যানপালন দফতরের মন্ত্রী আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা। যাঁদের বয়স ৮০-র ঊর্ধ্বে।এই দলে রয়েছেন এমন বিধায়কের সংখ্যা ১১। সেই তালিকায় রয়েছেন, সিঙ্গুরের বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। হাওড়া শিবপুরের বিধায়ক জটু লাহিড়ি, দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীর বিধায়ক গোবিন্দ চন্দ্র নস্কর।

তবে বয়সজনিত কারণে বেশ কিছু বিধায়ক, মন্ত্রী বাদ পড়লেও, এর বাইরেওযাঁদের ঠাঁই হয়নিএমন বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য নাম উঠে এসেছে তালিকায়। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন দেবশ্রী রায়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘির বিধায়ক তিনি। এ ছাড়াও বাতিলদের তালিকায় রয়েছেন সোনালি গুহ, স্মিতা বক্সি, দীপেন্দু বিশ্বাসের মতো বিধায়করা। তৃণমূল যে এ বার তরুণ প্রজন্মের উপরই জোর দিতে চাইছে, সে ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল আগেই। সেই ঝোঁকই বজায় রয়েছে ঘোষিত প্রার্থিতালিকায়। দল যে নতুন প্রজন্ম নিয়েই বিধানসভা ভোটের কঠিন লড়াইয়ে সামিল হতে চায়, তা-ও তালিকায় স্পষ্ট।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here