দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ হিমবাহ ভাঙা জলের তোড়ে প্রলয় চলছে উত্তরাখণ্ডের জোশীমঠে। তুষারধসে ভেসে যাচ্ছে একের পর এক গ্রাম। পাহাড়ের খাঁজ বেয়ে ভীষণ সেই জলের তোড় লণ্ডভণ্ড করে দিচ্ছে সবকিছু। হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ছে সেতু। অলকানন্দা ও ধৌলিগঙ্গার জলস্তর বিপজ্জনকভাবে বেড়ে গেছে। প্রবল ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রাজ্য প্রশাসন। ইতিমধ্যেই খবর মিলেছে, ঋষিগঙ্গা বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রায় শতাধিক শ্রমিক নিখোঁজ। ঘটনার সময় তাঁরা সেখানেই কাজ করছিলেন। বন্যার জলের তোড়ে তাঁদের অনেকেই ভেসে গিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। অন্তত ১০০ থেকে ১৫০ জনের মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে। এখনও অবধি তিনটি মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে বলে খবর।

ভয়াবহ তুষারধসের কবলে পড়ল উত্তরাখণ্ড । রবিবার সকালে চামোলি জেলার জোশিমঠের তপোবনে নন্দাদেবী হিমবাহে ধস নামে। অলকানন্দা নদীতে ঋষিগঙ্গা বাঁধ ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ধৌলিগঙ্গার বাঁধে ফাটল দেখা গিয়েছে। ধৌলিগঙ্গা নদীর জলস্তর দ্রুত বাড়ছে। নদী তীরবর্তী গ্রামগুলি প্লাবিত হয়েছে বলে সংবাদসংস্থা সূত্রে জানা যাচ্ছে। ধৌলিগঙ্গা এলাকায় রেনি গ্রামে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঋষিগঙ্গা বিদ্যুৎ প্রকল্পের দেড়শো জনেরও বেশি শ্রমিক নিখোঁজ বলে সংবাদসংস্থা সূত্রে জানা যাচ্ছে। উত্তরাখণ্ডের মুখ্যসচিব ওম প্রকাশ জানিয়েছেন, চামোলি জেলায় ১০০-১৫০ জনের মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে।

চার জেলায় হাই অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। উদ্ধারকাজের জন্য শ’খানেক ITBP জওয়ানদের ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (NDRF)-ও। ঘটনাস্থলে যাচ্ছেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী ত্রিবেন্দ্র সিং রাওয়াত।

উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, প্রবল বৃষ্টি ও প্লাবনের জেরে চামোলির রেনি গ্রামে ঋষিগঙ্গা প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। অলকানন্দায় নিচু এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের এলাকা থেকে সরানো হয়েছে। অসম থেকে উত্তরাখণ্ডের পরিস্থিতি নিয়ে খোঁজ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। গোটা দেশ উত্তরাখণ্ডের পাশে রয়েছে বলে টুইট করেছেন মোদী। এই ঘটনায় খোঁজ নিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও। নয়াদিল্লি থেকে আরও NDRF দলকে উত্তরাখণ্ডে এয়ারলিফট দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শাহ।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টুইট করে বলেছেন, “গোটা দেশ উত্তরাখণ্ডের পাশে আছে। আমরা গোটা বিষয়টার ওপর নজর রাখছি। উদ্ধারকারী দলের সঙ্গে কথা বলে প্রতি মূহূর্তের খবর জানছি। বিপন্নদের জন্য প্রার্থনা করছে সারা দেশ।”
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ টুইট করে বলেছেন, “দেবভূমিকে রক্ষার জন্য সবরকম ব্যবস্থা করা হবে। দিল্লি থেকে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর আরও কয়েকটি দলকে উত্তরাখণ্ডে পাঠানো হচ্ছে। উদ্ধারকাজ কতটা এগোচ্ছে তার বিস্তারিত খবর রাখছি আমি। সবরকমভাবে সাহায্য পাঠানো হবে।”

উত্তরাখণ্ডের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে ছয় কলাম ভারতীয় সেনা। সাহায্যের জন্য উত্তরাখণ্ড সরকারকে চপার দিয়েছে ভারতীয় সেনা।

উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, সবরকম পদক্ষেপ করছে সরকার। বাসিন্দাদের গুজবে কান না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে, উত্তরাখণ্ডের ঘটনায় সতর্ক উত্তরপ্রদেশও। গঙ্গা তীরবর্তী জেলাগুলিতে হাই অ্যালার্ট জারি করেছে উত্তরপ্রদেশ সরকার।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই জানান, ‘ITBP-র দুই দল ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। দেরাদুন থেকে তিন NDRF দল আনা হচ্ছে। বায়ুসেনার চপারে করে আরও তিন দল রওনা দেবে ঘটনাস্থলে। ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছে SDRF ও স্থানীয় প্রশাসন’। ইতিমধ্যেই হেল্পলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে। উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, বিপর্যয় মোকাবিলা কেন্দ্রের ফোন নম্বর ১০৭০ ও ৯৫৫৭৪৪৪৪৮৬।

এই ঘটনা প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন বলেন, ‘এটা মর্মান্তিক ঘটনা। এটা প্রাকৃতিক বিপর্যয়। উত্তরাখণ্ড সরকারকে সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী’। উত্তরাখণ্ডের ঘটনায় টুইটারে দুঃখপ্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here