দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ইয়াস ঘূর্ণিঝড়ের আগে পর্যালোচনা বৈঠক সারলেন মুখ্যমন্ত্রী। নিজেই এই নিয়ে টুইট করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর টুইট, আজ দুপুরে ইয়াস ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে সম্পর্কিত জেলাগুলির ডিএম এবং এসপি, সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সংস্থার সমস্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিপর্যয় মোকাবিলার প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করেছি। শনিবার থেকেই প্রশাসনিক স্তরে কার্যত যুদ্ধকালীন তৎপরতায় এই ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে।

তাঁর টুইট, সমস্ত কর্মকর্তাকে ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার আশ্রয়কেন্দ্রগুলি নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় ও নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে থেকে মানুষকে সরিয়ে আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসনের কার্যক্রম দ্রুত শুরু করতে বলা হয়েছে। মমতার টুইট, মৎসজীবীদের অবিলম্বে ফিরে আসতে সতর্ক করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে ( 1070 এবং 033-22143526)। সমস্ত এজেন্সিকে তৎপর থাকতে বলা হয়েছে। ত্রাণ সামগ্রী পাঠানো হয়েছে এবং ক্যুইক রেসপন্স টিমকেও তৎপর থাকতে বলা হয়েছে। আমি সবাইকে সজাগ থাকার জন্য অনুরোধ করছি।

শক্তি বাড়িয়ে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে চলেছে ইয়াস। শনিবার সকালে পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে। আগামীকালের মধ্যে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে। এরপর উত্তর-উত্তর পশ্চিম দিকে এগোবে। সোমবার ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। এর পরের ২৪ ঘণ্টায় অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। এরপর ফের উত্তর -উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হবে যশ। বুধবার সকালে পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশা উপকূলে পৌঁছবে এই অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়।

আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানানো হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে এই  ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা বেশি। বুধবার সন্ধ্যায় আছড়ে পড়তে পারে যশ। তবে গত বছরের ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড় আমফানের থেকে যশের দাপট কম হওয়ার সম্ভাবনা। হাওয়া অফিস সূত্রে খবর, রাজ্যে ৪০-৪৫ কিমি বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইবে। মঙ্গলবার হাওয়ার বেগ হতে পারে ঘণ্টায় ৭০ কিমি।

আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, ২৫ মে থেকে রাজ্যের উপকূলবর্তী জেলায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি শুরু হবে। কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টি হতে পারে পরবর্তী সময়ে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়বে। বাকি জেলাগুলিতেও বৃষ্টি হবে। ২৬ মে ভারী বৃষ্টি হবে রাজ্যে। ২৭ মে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উত্তাল হতে পারে সমুদ্র। ২৩ মে থেকে সমুদ্রে মৎস্যজীবীদের যেতে নিষেধ করা হয়েছে। যাঁরা মাঝ সমুদ্রে রয়েছেন, তাঁদের ২৩ তারিখ সকালের মধ্যে ফিরে আসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

ইয়াস-এর মোকাবিলায় সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়েছে রাজ্য। পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূলবর্তী গ্রামগুলিতে ঘুরে ঘূর্ণিঝড় নিয়ে সতর্কতামূলক প্রচার চালাচ্ছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ)। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই ২ কোম্পানি এনডিআরএফ মোতায়েন করা হয়েছে জেলায়। খুব তাড়াতাড়ি আনা হবে আরও ২ কোম্পানি।

সেকেন্ড এনডিআরএফ-এর ইনস্পেক্টর রাজকুমার শীল দাবি করেছেন, ঘূর্ণিঝড় নিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে দিঘার উপকুল এলাকার গ্রামগুলিতে চষে বেড়াচ্ছেন জওয়ানরা। গ্রামবাসীদের বোঝানো হচ্ছে, তাঁরা যেন ঝড়ের আগেই কাঁচা বাড়ি ছেড়ে সরকারি আশ্রয়স্থলে চলে যান। ময়দানে নেমেছেন রাজকুমার নিজেও।

শনিবার প্রশাসনের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে দিঘায় হাজির হন পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি। দিঘা-ওড়িশা সীমানার পদিমা ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা ঘুরে দেখেন তিনি। জেলাশাসক বলেন, ‘‘আজ রামনগর, কাঁথি এবং খেজুরির বিভিন্ন এলাকার পরিদর্শন করছি। যে সব এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি বেশি হতে পারে সেখানে স্থানীয় বাসিন্দাদের কোথায় সরানো হবে, কোথায় রাখা হবে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমরা স্থানীয় হাসপাতালগুলিও ঘুরে দেখছি। বিপর্যয়ের পর যদি বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটে সে সময় বিকল্প কী ব্যবস্থা রয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সমুদ্রের বাঁধ নির্মাণের কাজও খতিয়ে দেখছি। কাদের, কোথায় কী ভাবে নিয়ে যাওয়া হবে তার পরিকল্পনা আজ রাতের মধ্যে সারা হয়ে যাবে। কেউ করোনা আক্রান্ত হলে তাঁদের সেফ হোমে রাখার যথোপযুক্ত ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।’’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here