দেশের সময় ,পেট্রাপোল: ভারত থেকে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে গরু পাচার করার তদন্তে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। ইতিমধ্যেই বর্ডার সিকিওরিটি ফোর্স ও কাস্টমসের একাধিক আধিকারিককে জেরা করেছে সিবিআই। এর মধ্যেই এবার বাংলাদেশ থেকে ভারতে ইলিশ পাচার করতে গিয়ে উত্তর ২৪ পরগনার পেট্রাপোল সীমান্তে ১০০ কেজি ইলিশ সমেত সিএসএফের কাছে হাতেনাতে ধরা পড়েছে এক ব্যক্তি৷ হাতেনাতে ধরা পড়ল এক ব্যক্তি।

সূত্রের খবর, পাচারের ঘটনা সামনে আসার পরে সীমান্তে টহলদারি বাড়ানো হয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁর হরিদাসপুর লাগোয়া পেট্রাপোল সীমান্তে রুটিন তল্লাশি চালাচ্ছিল বিএসএফ। তখনই একটা ট্রাক দেখে সন্দেহ হয় তাঁদের। ট্রাকের চালকের বক্তব্যে অসঙ্গতি ধরা পড়ে। তারপরেই ট্রাকের মধ্যে তল্লাশি শুরুকরে বিএসএফ আধিকারিকরা। আর তাতেই দেখা যায় ট্রাকে আড়াল করে রাখা হয়েছে ৬টি বস্তা।

এভাবেই বিএসএফ এর চোখে ধূলো দিয়ে পেট্রাপোল সীমান্ত পেরিয়ে ব্যাগ ভর্তি ইলিশ ঢুকছে ভারতে৷

জানা গিয়েছে, এই বস্তা দেখেই বিএসএফের সন্দেহ হয়। বস্তাগুলি খুলে দেখা যায়, তার মধ্যে ভর্তি রয়েছে ইলিশ। বস্তাগুলির মিলিত ওজন ১০০ কেজি। বিএসএফ জানিয়েছে, এই ইলিশের বাজারদর ১ লক্ষ টাকারও বেশি। বেআইনিভাবে ইলিশ পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে ওই ব্যক্তিকে।

সূত্রের খবর, যে ট্রাক চালককে গ্রেফতার করা হয়েছে তার বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুরে। জেরায় ওই ব্যক্তি বিএসএফকে জানিয়েছে, ভারত থেকে যন্ত্রপাতি নিয়ে বাংলাদেশে ডেলিভারি দিতে গিয়েছিল সে। ফেরার সময় বাংলাদেশের এক ব্যক্তি তার ট্রাকে ছ’বস্তা ইলিশ তুলে দেয়। তাকে বলা হয় বনগাঁর এক ব্যক্তির কাছে ইলিশগুলি পৌঁছে দিতে।

এই কাজের জন্য ছ’হাজার টাকা দেওয়া হয়েছিল তাকে। এই ঘটনায় আর কেউ যুক্ত রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে বিএসএফ। তাদের ধারণা, এই ঘটনায় আরও অনেকেই যুক্ত রয়েছে। বনগাঁর যে ব্যক্তির কাছে ইলিশ পাঠানোর কথা বলা হয়েছিল, সেই ব্যক্তিরও খোঁজ করছে পুলিশ।

বাংলাদেশ থেকে ভারতে ইলিশ রফতানি করার জন্য আবেদন করেছিলেন প্রায় ২০০ জন। তাঁদের মধ্যে ৯ জনকে বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিয়েছে। প্রসঙ্গত, এবার বাংলাদেশের পদ্মায় প্রচুর ইলিশ ধরা পড়েছে। তার দামও অনেকটা কম। ফলে বাংলাদেশ থেকে ইতিমধ্যেই ১৪৫০ টন ইলিশ পশ্চিমবঙ্গে এসেছে। এই ইলিশের আমদানির ফলে বাংলায় ইলিশের যোগান বেড়েছে। ফলে ইলিশের দাম কিছুটা কমবে বলেই আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।

কিন্তু তারপরেও এবার ইলিশ পাচার করার চেষ্টা হচ্ছে। এই ঘটনা সামনে আসায় নজরদারি আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসএফ।

উল্লেখ্য, গত অগষ্ট মাসে বিএসএফ গোপন সূত্রে খবর পেয়ে , ট্রাকের কেবিনে লুকিয়ে রাখা ৯টি সাদা ব্যাগে ইলিশ আনা হচ্ছিল সে গুলি উদ্ধার করে। বিএসএফের দাবি, সেগুলি মুলত পাচারের জন্য এপারে আনা হচ্ছিল। এই ঘটনায় আটক করা হয় বিপ্লব শীল নামে এক যুবককে। তাঁর বাড়ি বনগাঁয়। ধরা পড়া ইলিশ এবং ট্রাকটি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।এদিন বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসছিল ওই ইলিশ। বিএসএফ সূত্রে জানাগিয়েছে ধরা পড়া ইলিশের আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ১১ লক্ষ ২৬ হাজার টাকা।

জেরায় ওই ধৃত যুবক বিএসএফকে জানিয়েছিল, গত ৪ অগস্ট বাংলাদেশে গিয়েছিলেন তিনি। মিরাজ চৌধুরি নামে এক ব্যক্তি তাঁর কাছে ব্যাগভর্তি ইলিশ দেন। তাঁকে বলা হয়, খোকন নামে এক ব্যক্তি পেট্রাপোল সীমান্তের নরহরিপুর গ্রামের কাছে ব্যাগগুলি নিয়ে নেবেন। এই কাজের জন্য তাঁকে পাঁচ হাজার টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়। এই ঘটনায় পঙ্কজ নামে এক ব্যক্তি জড়িত বলেও বিএসএফ সূত্রে জানাযায়।

বেশ কিছুদিন ধরেই গোপনে ও পার বাংলা থেকে এ রাজ্যে ইলিশ পাচার করছেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। ফের এদিন হাতেনাতে ধরা পড়ল ও পার বাংলার পদ্মার ইলিশ।বেশ কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশ থেকে ভারতে ইলিশ রফতানি বন্ধ রয়েছে। এ রাজ্যের ভোজন রসিকেরা গঙ্গার ইলিশেই স্বাদ মেটাচ্ছেন। গত দু’বছরে বাংলায় সে ভাবে ইলিশ জালে পড়েনি। এ বছর প্রচুর ইলিশ ওঠার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছিলেন মৎস্যজীবীরা।কিন্তু এখনও পর্যন্ত হতাশ ক্রেতা-বিক্রেতারা। অসাধু ব্যাবসায়ীরা এই সময়ে অতিরিক্ত মুনাফার জন্য ইলিশ পাচার করার চেষ্টা করছিল বলে জানিয়েছে বিএসএফ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here