দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ৯৮ সালের ১ জানুয়ারি তৃণমূলের পত্তন করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পর থেকে বিশ বছরের বেশি সময় কেটে গিয়েছে। কিন্তু ভাঙনের আশঙ্কা কখনও গ্রাস করেনি তৃণমূলকে। তাও আবার ঠিক ভোটের মুখে। কখনও কোচবিহার তো কখনও মেদিনীপুর, কখনও আবার আসানসোল থেকে ক্ষোভ-অসন্তোষ দলা পাকিয়ে উঠছে।


পরিস্থিতি যখন এমনই তখন মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গে কর্মিসভার মঞ্চ থেকে মমতা অর্থবহ ভাবে বলেন, “আমি বড় না ও বড় এ সব করার কোনও প্রয়োজন নেই। দশ বছর পার্টির থেকে খেয়ে, দশ বছর সরকারের থেকে সবটা খেয়ে ভোটের সময়ে এর ওর সঙ্গে বোঁচকা বাঁধলে বরদাস্ত করব না। এটা মাথায় রাখবেন।”
একুশের ভোটের অনেক আগে ইতিমধ্যেই কোচবিহারের তৃণমূল বিধায়ক মিহির গোস্বামী বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। কোচবিহারের আর এক বিধায়ককে দল তথা প্রশান্ত কিশোরের বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছে। ব্যারাকপুরের সাংসদ শীলভদ্র দত্ত প্রকাশ্যেই বলছেন, তিনি আর তৃণমূলের টিকিটে প্রার্থী হবেন না। বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ব্রাহ্মণদের দাবি দাওয়া না মেটালে কলকাতা অবরুদ্ধ করে দেব। আসানসোলের প্রাক্তন মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি অভিযোগ জানাচ্ছেন, স্রেফ রাজনৈতিক কারণে আসানসোলকে কেন্দ্রের অনুদান নিতে দেওয়া হয়নি।

আর এ সবের উপরে দলের অন্যতম দাপুটে ও মজবুত নেতা শুভেন্দু অধিকারী পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, একসঙ্গে কাজ করা সম্ভব নয়। শুভেন্দুর সঙ্গে একঝাঁক নেতা, কর্মী তৃণমূল ছাড়বেন বলে অনেকে মনে করছেন।
সার্বিক এই প্রেক্ষাপটেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন ওই মন্তব্য করেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, দিদি হয়তো মানুষকে বোঝাতে চেয়েছেন, এঁরা ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য দল ছাড়ছেন বা বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। অথচ বাস্তব হল, এঁরা গত দশ বছরে কেউ কম পাননি। সরকারের থেকে পেয়েছেন, সেই সঙ্গে দল থেকে পেয়েছেন।

দিদি এদিন আরও বলেন, “৩৬৫ দিন যাঁরা মানুষের সঙ্গে যাঁরা ছিলেন, তাঁদেরই পরীক্ষা দিতে হবে। এমন পরীক্ষা দেবেন, বিজেপি পালানোর পথ পাবে না।” সেই সঙ্গে দলের কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, “মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলে কোনও অপরাধ হয় না। মিলেমিশে কাজ করুন। এ বড় না বি বড় দেখার দরকার নেই। অর্জুনের মতো লক্ষ্য স্থির করুন।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই কথার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। তিনি বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই করে-কম্মে খাওয়ার খোলা ছাড় দিয়েছিলেন। কারণ তিনি জানতেন, তৃণমূলের কোনও মতাদর্শ নেই। ফলে দলে মতাদর্শগত বাঁধুনি নেই। আগে স্রেফ সিপিএম বিরোধিতার জন্য একটা ফ্যান ক্লাব ছিল। এখন সিপিএম দুর্বল হওয়ায় সেটাও আর নেই। এমন দলের অস্তিত্ব টিকে থাকতে পারে না।”


অন্যদিকে শুভেন্দু ঘনিষ্ঠরা বলেন, সরকার থেকে খাওয়া, পার্টির থেকে খাওয়া— এসব কথা ‘দাদা’র ক্ষেত্রে খাটে না। ২০১১ সালে বাংলায় পরিবর্তন আনার লড়াইয়ে শুভেন্দু অধিকারীর অপরিসীম ভূমিকা ছিল। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নন্দীগ্রামের আন্দোলন না করলে এই সরকারটাই হয়তো তৈরি হত না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here