দেশের সময় ওয়েব ডেস্কঃ পরিযায়ী শ্রমিকদের নিজ রাজ্যে ফেরাতে রেল মন্ত্রক তথা ‘স্বেচ্ছাচারের’ বিরুদ্ধে বুধবার ক্ষোভ উগড়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সরাসরি অভিযোগ, কেন্দ্র রাজনীতি করছে। রাজ্যের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করে ট্রেন পাঠিয়ে দিচ্ছে। তাতে বিপদ বাড়ছে রাজ্যের। এই প্রসঙ্গেই এদিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত কথোপকথন নিজেই ফাঁস করলেন মুখ্যমন্ত্রী।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “আমি অমিত শাহকে বলেছিলাম, এতো টিম পাঠাচ্ছেন পাঠান। আপনার যদি মনে হয় আমার সরকার পারছে না, আপনি নিজে দায়িত্ব নিন না। আপনি করোনাটাকে সামলান। আমার কোনও আপত্তি নেই”। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “তবে হ্যাঁ, আমি তাঁকে থ্যাঙ্কস জানাচ্ছি। উনি এখানে প্রেজেন্ট নেই। তাও বলছি, উনি বলেছিলেন, না না তেমন তো কিছুই হয়নি। সরকার ভেঙে দেব কী করে?”

কোভিড ও আমপানের বিপর্যয় মোকাবিলা নিয়ে সব জেলার জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে এদিন বৈঠক করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরিযায়ী শ্রমিকদের নিজ রাজ্যে পাঠানোর ব্যাপারে রেলের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেন, “রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করে তো রেলের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। তা করেনি। ওদের কি কোনও দায়বদ্ধতা নেই?” তাঁর কথায়, “রেল মর্জিমতো কাজ করছে। গায়ের জোর দেখাচ্ছে। রাজ্যের যে তাতে বিপদ হচ্ছে তা কীবুঝতে পারছে না! এতো বড় দুর্যোগ সামলাব, মানুষের দুর্ভোগ সামলাব নাকি ওদের রাজনীতি সামলাব?” এই প্রসঙ্গেই অমিত শাহর কথা তোলেন মমতা।

সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরাতে কিন্তু আমাদের আপত্তি ছিল না। ওঁরা আমাদেরই ভাই বোন। কিন্তু আমরা ওঁদের ফেরানোর জন্য একটা ট্রেনের শিডিউল করেছিলাম। তা রেলকেও জানিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ গতকাল সকালে রেল থেকে জানাল, মহারাষ্ট্র থেকে ৩৭ টা ট্রেন ঢুকবে বাংলায়। তখন মহারাষ্ট্র সরকারকে ফোন করি। জানতে পারি, ওরাও জানত না। বলল, পরশু রাত দুটোয় রেল জানিয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, এটা কি মগের মুলুক। পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে অনেকেই এখন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। তাদের থেকে নতুন করে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে জেলায়। মালদহে সংক্রমণ বেড়ে গিয়েছে। উত্তর দিনাজপুর যেখানে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত কারও সংক্রমণ ছিল না, সেখানে পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য হঠাৎ করে সংক্রামিতের সংখ্যা বেড়েছে। একসঙ্গে এতো পরিযায়ী শ্রমিক ঢুকে পড়লে রাজ্য সরকার তাঁদের কোথায় রাখবে? প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে এতো মানুষকে একসঙ্গে কোয়ারেন্টাইনে রাখার সুবিধা তো নেই।

এ ব্যাপারে রেলমন্ত্রক সরকারি ভাবে কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি। কিন্তু রেলের এক কর্তা বলেন, পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যে পাঠানোর ব্যাপারে রেলের দিক থেকে গোড়ায় কিছুটা অব্যবস্থা হয়েছিল, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। সম্পূর্ণ নতুন রকমের একটা সংকটের মুখোমুখি আমরা। তাই প্রতিটি পা মেপে ফেলতে হচ্ছে। তাতেও ভুল ত্রুটি হতেই পারে। তবে গোড়ায় ঠিক করা হয়েছিল, যে রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকরা ফিরছেন সেই রাজ্যের অনুমতি ছাড়া ট্রেন পাঠানো হবে না। কিন্তু দেখা গেল, পশ্চিমবঙ্গ কোনও ট্রেনের অনুমতিই দিচ্ছে না। অনেক বলার পর, হাতে গোনা কয়েকটা ট্রেন চাইল। তার পর বলল, এক মাস ধরে একশ ট্রেন ঢুকতে দেওয়া হবে।

রেলের ওই কর্তার কথায়, রাজ্য সরকার যখন এ কথা বলছে, তখন দেখা যাচ্ছে মহারাষ্ট্র, গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, দিল্লিতে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকরা অধৈর্য্য হয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা কেউ হেঁটে, কেউ গাড়ি ভাড়া করে রওনা হয়ে যাচ্ছেন রাজ্যের উদ্দেশে। তাতে বিপদ বাড়ছে। এই বিষয়টি রাজ্যকে জানিয়েও ফল হয়নি। তাই বাধ্য হয়েই রেল সিদ্ধান্ত নেয় যে রাজ্যের কোনও অনুমতি নেই। রেলমন্ত্রক নিজে থেকেই ট্রেন পাঠাবে বিভিন্ন রাজ্যে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here