দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ একজনের টুইটে বলা হয়েছে, ‘‌দেশনায়ক দিবস’‌ পালনের কথা। অন্যজন আবার টুইট করেছেন, ‘‌পরাক্রম দিবস’‌ নিয়ে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শনিবার সকালে যে টুইট করলেন, তা থেকে স্পষ্ট নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিন ঘিরে দুই রাজনীতিবিদের অবস্থান। 

নেতাজি জয়ন্তীতেও কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত? এদিন সকালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতায় যেন সেই বিরোধের সুরই বাঁধা হল!

শনিবার সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিন উপলক্ষে শহরে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও একগুচ্ছ কর্মসূচি রয়েছে। মোদী–মমতা সাক্ষাতের সম্ভাবনাও রয়েছে। তার আগে সকালে টুইট করে মমতা লেখেন, ‘দেশনায়ক সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫ তম জন্মদিনে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাই। উনি ছিলেন প্রকৃত নেতা। মানুষের ঐক্যে বিশ্বাসী ছিলেন। আমরা আজকের দিনটা ‘দেশনায়ক দিবস’ হিসাবে পালন করছি। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে বর্ষব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।’‌

অন্যদিকে, শনিবার সকালেই মোদীর টুইট, ‘মহান মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতমাতার সত্যিকারের পুত্র নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিনে শত প্রণাম। দেশের স্বাধীনতার জন্য তাঁর ত্যাগ এবং আত্মনিবেদন সবসময় স্মরণ করা হবে।’‌ এরপর হ্যাশট্যাগ করে লেখেন ‘পরাক্রম দিবস।’

মমতা দ্বিতীয় টুইটে বলেছেন, ‘রাজারহাটে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হবে। নামকরণ হবে ‘আজাদ হিন্দ ফৌজ’–এর নামে। এছাড়া নেতাজির নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো খরচ রাজ্য সরকার বহন করবে। যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বিদেশের নানা বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ থাকবে।’‌ তৃতীয় টুইটে শনিবারের কর্মসূচির কথা লেখেন মমতা। বলেন, ‘এক বৃহৎ পদযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে আজ। চলতি বছর প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারেডও নেতাজির নামেই উৎসর্গ করা হবে। 

শনিবার ১২.‌১৫ মিনিটে সাইরেন বাজানো হবে। প্রত্যেককে আর্জি জানাচ্ছি, বাড়িতে শঙ্খ বাজাবেন।’‌ সেই সঙ্গে মমতা আরও একবার ২৩ জানুয়ারি জাতীয় ছুটি ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। টুইটে লেখেন, ‘২৩ জানুয়ারির দিনটিকে জাতীয় ছুটি ঘোষণা করুক কেন্দ্র।’‌ এরপর তিনি হ্যাশট্যাগ করে লেখেন ‘দেশনায়ক দিবস।’

এদিন শ্যামবাজার থেকে রেড রোডে সুভাষচন্দ্রের মূর্তির পাদদেশ পর্যন্ত মিছিল করবেন মুখ্যমন্ত্রী। বেলা ১২.‌১৫ নাগাদ ওই শোভাযাত্রা শুরু হবে। মুখ্যমন্ত্রীর ওই মিছিল ধর্মতলায় পৌঁছনোর কিছু পরেই শহরে এসে পৌঁছনোর কথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। একদিনের কলকাতা সফরে জাতীয় গ্রন্থাগারে সুভাষচন্দ্র শীর্ষক এক আলোচনাসভায় পৌরোহিত্য করার কথা রয়েছে মোদির। তারপরে তিনি যাবেন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে। সেখানে সুভাষচন্দ্রকে নিয়ে একটি স্থায়ী গ্যালারির উদ্বোধন করবেন তিনি। এছাড়া দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশ নেওয়া বাংলার বিপ্লবীদের নিয়ে আরও একটি গ্যালারির উদ্বোধন করার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। 


নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মজয়ন্তীকে পরাক্রম দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আজ বিকেলে কলকাতায় আসছেন মোদী। তার আগে এদিন সকালে এলগিন রোডে নেতাজির বাসভবনে যান মমতা। সেখানে তিনি বলেন, “আমি পরাক্রম মানে বুঝিনা। বাংলা না হিন্দি ভাষা তা জানিনা। তবে আমার কাছে উনি দেশপ্রেমিক। দেশনায়ক। যিনি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যান। আমরা চাই দেশ যেন এগিয়ে যাই। নেতাজী এক চিন্তা, আদর্শ, দর্শন।”
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “কেন আমরা দেশনায়ক দিবস করেছি জানেন? কারণ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম নেতাজিকে দেশনায়ক আখ্যা দিয়েছিলেন। আর রবীন্দ্রনাথের লেখা জনগণমন অধিনায়ক কে জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন নেতাজি। আমার গায়ে কাঁটা দিচ্ছে, আমি কাঁপছি, আমি বলছি।”

এদিনও ঠারেঠোরে কেন্দ্রের সমালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “নেতাজি, রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ আমাদের মুখস্থ। পড়ে এসে বলতে হয় না। নেতাজি প্ল্যানিং কমিশন তৈরি করেছিলেন। নেতাজিকে যদি শ্রদ্ধাই জানাবে তাহলে প্ল্যানিং কমিশন তুলে দেওয়া হল কেন?”
বিকেলে ন্যাশনাল লাইব্রেরি ও ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে অনুষ্ঠান রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। সেখানে আমন্ত্রিত মুখ্যমন্ত্রীও। কিন্তু সকালে যে ভাবে পরাক্রম দিবস অস্বীকার করলেন তাতে প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আদৌ মুখ্যমন্ত্রী যাবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।


মুখ্যমন্ত্রীর এই অবস্থান প্রসঙ্গে আবার রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় বলেছেন, “পরাক্রম দিবস ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। অথচ তার বিরোধিতা করছেন মুখ্যমন্ত্রী। সব কিছুতে বিরোধিতা করা উচিত নয়। এতে যুক্তরাষ্ট্রীয় ঐক্যের ক্ষেত্রে ভুল বার্তা যায়।”

নেতাজির বাসভবন থেকে সোজা শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্য সরকার সেখান থেকে পদযাত্রার আয়োজন করেছে। সেই পদযাত্রায় অংশ নেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন অরূপ বিশ্বাস, ফিরহাদ হাকিম, ইন্দ্রনীল সেন সহ সরকারের মন্ত্রীরা। সেই সঙ্গে রয়েছেন নুসরত জাহান, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ সাংসদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here