-:শুভ জন্মদিন:-

আজ ১৭ই সেপ্টেম্বর কবি বিনয় মজুমদারের জন্মদিন। বেঁচে থাকলে ৮৭ বছরে পড়তেন। ঠাকুরনগর স্টেশনে "বিনোদিনী কুঠিরে" বিনয় মজুমদার তাঁর শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন। বন্ধুবান্ধবদের অনেকে কবি হলেও কবিতার সঙ্গে আমার পরিচয় খুবই সামান্য। কিন্তু কবিতা পড়া আমার অবসর বিনোদন বলাই যায়। কবি বিনয় মজুমদারের সঙ্গেও আমার পরিচয়, বলতে পারেন প্রথম দেখা, কবিতারই সূত্রে। সেই পুঁজি নিয়ে তাঁর সম্পর্কে কিছু লেখা দুঃসাহস বললেও কম বলা হয়। তবুও অনুরোধে ঢেঁকি গেলার মত কিছু লিখতে হচ্ছে। এই অনধিকার চর্চা নিজগুণে ক্ষমা করে দেবেন। আমি একজন সামান্য আলোকচিত্রী। ছবি তোলার সূত্রেই মানুষটার প্রতি আগ্রহী হয়েছিলাম। কৃতি ছাত্র, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, তার আগে পড়েছেন প্রেসিডেন্সি কলেজে, আবার সন্দীপন দা, সুনীল দা, শক্তি দা, দীপক দা, জ্যোতি দা’র মত কবি ও লেখকরা তাঁর কবিতা নিয়ে সসম্ভ্রম আলোচনা করেন, তাহলে নিশ্চয়ই খুব বড় ব্যাপার। এই আগ্রহ থেকে তাঁর কবিতা পড়ার দুঃসাহস হয়েছিল আমার। সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার প্রাপ্ত এই কবি লোকচক্ষুর অন্তরালেই সারাজীবন থেকে গেলেন। কলেজ জীবন ও চিত্র সাংবাদিকতা করার সময় বিনয়দার সাথে কয়েক বার দেখা হয়েছে। কবিতা নিয়ে কোনো আলোচনা করার দুঃসাহস ছিলনা কিন্তু সাধারণ গ্রামগঞ্জে বসবাসকারী মানুষদের নিয়ে বহু কথা হয়েছে। তাঁর পাঠকরা ফিরে এসো চাকা, অঘ্রাণের অনুভূতিমালা কিংবা নক্ষত্রের আলোয়....বইটির কবিতাগুলিকে বাংলা কবিতার একেকটা মাইলস্টোন বলে মনে করেন। বিনয় মজুমদার সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার পেয়েছিলেন কিন্তু তাঁর সবচেয়ে বড় পুরস্কার তাঁর পাঠকরা। যারা তাঁর ‘একা একা কথা বলি’ র মত কবিতাগুলিকে বেদবাক্যের মত উচ্চারণ করেন। দীর্ঘদিন অসুস্থতায় ভুগেছেন, বিচ্ছিন্ন থাকতে চেয়েছেন মানুষের কাছ থেকে কিন্তু বাংলা কবিতার মনস্ক পাঠক বিনয় মজুমদারকে অস্বীকার করতে পারেননি। বিনয় নামক নক্ষত্রের আলো আলোকিত করেছে বাংলা কবিতাকে। তথাকথিত জনপ্রিয় কবি বলতে যা বোঝায় তা কিন্তু তিনি ছিলেন না। আমি কবিতার বিচারক নই, সে চেষ্টাও করবো না। তবে তাঁর সামান্য যে দু-চারটে কবিতা আমি পড়েছি তাতে মনে হয়েছে বাংলা কবিতায় তিনি যেন একটা নির্জন দ্বীপের মত জেগে রয়েছেন। একটা নিবিষ্ট মন নিয়ে সে দ্বীপে প্রবেশ করলেই বিনয়ের সঙ্গে দেখা হবে পাঠকের। কিন্তু সে চেষ্টা খুব একটা হয়নি। বেশি আলোচনা হয়েছে গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাকের সঙ্গে তাঁর প্রেম ও মানসিক অসুস্থতা নিয়ে। হিরে ফেলে কাঁচ নিয়ে হৈচৈ করাটাই তো আমাদের স্বভাব। বনগাঁর প্রাক্তন চিত্রসাংবাদিক এবং দেশের সময় কাগজের সম্পাদক পার্থসারথি নন্দী বিনয় মজুমদারের উপর বহুবছর ধরেই কাজ করছে। তারই কিছুটা ঝলক "স্মৃতিমেদুর বিনয়" নামে তথ্যচিত্র টি 'দেশের সময় ' ইউটিউব চ্যানেল সহ বেশ কিছু জায়গায় দেখানো হবে। আর প্রতিবছর জন্মদিনে ঠাকুরনগর প্লাটফর্মে একটা ঝাপসা ছবিতে ফুল মালা দেওয়া হয়। এক সময় কবির বাড়িতে বাড়িতে এই দিনটি অন্যান্য কবিরা আসতেন। সময়ের সাথে সাথে সেই রেশ কমে গেছে। এই হচ্ছে মোটামুটি পরলোকগত বিনয় মজুমদারের জন্মদিন পালন। বিনয় মজুমদার সেই বিরল শ্রেণীর কবি যিনি তাঁর জীবনকেই কবিতার বিষয়বস্তু বানিয়ে ফেলেছিলেন। এক গভীর বেদনায় তাঁর কবিতারা একা একাই মহীরুহ। অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে অব্যক্ত ভাষারাই কবির কবিতা হয়ে উঠেছে। প্রতিবছর জন্মদিনে ঠাকুরনগর প্লাটফর্মে একটা ঝাপসা ছবিতে ফুল মালা দেওয়া হয়। এক সময় কবির বাড়িতে এই দিনটিতে অন্যান্য কবিরা আসতেন। সময়ের সাথে সাথে সেই রেশ কমে গেছে। পরলোকগত বিনয় মজুমদারের জন্মদিন পালন বলতে এটুকুই। প্রাক্তন সাংসদ মমতা বালা ঠাকুরের উদ্যোগে বিনোদিনী কুঠির সংরক্ষণ করার কাজ শুরু হলেও তা সম্পূর্ণ হয়নি। বাংলার মহান কবি ও মন্ত্রীগণ এই বিষয়ে আলোকপাত করলে ভালো হয়

আজ কবির জন্মদিন। আমি তাই সকল কবিতাপ্রেমী মানুষদের কাছে অনুরোধ করবো কবি বিনয় মজুমদারের জন্মদিনটি উদযাপন করুন। যার যেমন খুশি। দেখুন ভিডিও:

এই বিস্ময় কবিকে আমার প্রণাম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here