অশোক মজুমদার

একটা সহজ বিশ্লেষণকে কদর্য কুৎসায় পরিণত করলো বঙ্গ রাজনীতির কুনাট্য। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সব সময় সহজ উপমা দিয়ে একটা জটিল পরিস্থিতিকে ব্যাখ্যা করেন। রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, করোনাকে পাশ বালিশ করেই আমাদের বাঁচতে হবে। যার সহজ অর্থ হল, করোনাকে সঙ্গী করেই মানুষকে বাঁচতে হবে, এটা এত সহজে যাবে না। সেই সামান্য উপমাটুকু ঘিরে গত ক’দিন ধরে একশ্রেণির মানুষ যে কুনাট্যের অবতারণা করেছেন তার জবাব দেওয়ার জন্যই এই লেখাটা। এই উপমার সূত্র ধরেই ময়দানে নেমে পড়েছেন কোন কাজ না থাকা বিজেপি ও সিপিএমের লোকজন এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের দোসর কুৎসাবাজরা।

যারা মুখ্যমন্ত্রীর কুৎসা করছেন, তারা কিন্তু একটু খুঁজলেই সারা পৃথিবীর বিভিন্ন মহলে তার কথার প্রতিধ্বনি শুনতে পাবেন। দীর্ঘদিন লকডাউন চালানো যায়না, মানুষ খাবে কী, যাবেন কোথায়? তাই এটা কোন সমাধান হতে পারেনা। মানুষকে সবরকম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েই করোনার মোকাবিলা করতে হবে। এই তো মোদ্দা কথা। একথাটাই তো বারবার বলছেন পৃথিবীর সব রাষ্ট্রনায়কেরা। এই সরল সত্যটা ভুলে শুধুই ‘পাশ বালিশ’ নিয়ে মেতে থাকা তাদের মনের অন্ধকার দিকটাকেই তুলে ধরলো। কুৎসা ঢেকে দিতে চেষ্টা করলো মুখ্যমন্ত্রীর করোনা সতর্কতাকে। মনে রাখবেন, আপনাদের মত ভাড়াটে কুৎসাবাজরা মুখ্যমন্ত্রীর কথার বিকৃত ব্যাখ্যা করলেও সাধারণ মানুষ তার কথা ঠিক বোঝেন। মুখ্যমন্ত্রীর এই সতর্কতা বার্তা নিয়ে তাদের মনে কিন্তু কোন প্রশ্ন নেই। কুৎসার বদলে আপনারা যদি পথে নেমে করোনার মোকাবিলা করতেন কিংবা ছুটে যেতেন করোনা দুর্গতদের কাছে তাতে অনেক বেশি কাজ হত। কিন্তু কী আর করা যাবে? আপনাদের মত মিডিয়ার গুডবুকে থাকা কুৎসাবাজদের মনের গঠনটাই আলাদা।

অথচ পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে প্রতিদিনই। আমরা এখন করোনা আক্রান্ত দেশগুলির মধ্যে ৮ নম্বরে। রোজই বাড়ছে মৃত্যু আর আক্রান্তদের সংখ্যা। হাজারে হাজারে পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যে ফেরা পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে। কুৎসাবাজরা ভুলে গেছেন ‘হু’ তো বটেই এমনকি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকও বলেছেন ভাইরাসের সঙ্গে আমাদের বাঁচা শিখতে হবে। শুধু বাংলার মুখ্যমন্ত্রী কেন সব রাজ্য সরকারই তো করোনাকে একটা বাস্তবতা হিসেবে মেনে নিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার কথা বলছেন। তাহলে মুখ্যমন্ত্রী ভুল বললেন কোথায়? গালমন্দ শুরু করার আগে একটুও ভাববেন না? শুধুই ঝগড়া লাগিয়ে দেওয়ার ধান্দায় থাকলে নিজেদের ঘরও কিন্তু ভাঙে এটা মনে রাখবেন! এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তো বটেই একজন মহিলার প্রতি যে ভাষায় তারা কথা বলছেন তাতে তাদের নোংরা মানসিকতা আরও প্রকট হচ্ছে।

পৃথিবীতে সব মারণরোগই হার মেনেছে মানুষের কাছে। এভাবেই এগিয়েছে সভ্যতা। আজ হোক বা কাল, মানুষের কাছে করোনাও হারবে। কিন্তু সময়ের খাতায় থেকে যাবে কুৎসাবাজদের কদর্য আচরণের কথা। কুৎসার আয়নায় নিজেদের মুখ দেখে তখন আপনাদের নিজেদেরই চমকে উঠতে হবে। মনে পড়লো মাইকেলের সেই অমোঘ লাইন – অলীক কুনাট্য রঙ্গে মজে লোক রাঢ়ে বঙ্গে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here