দেশের সময় ওয়েব ডেস্কঃ দুর্গম জঙ্গলের ভেতর দিয়ে পথ। হাসপাতাল তো দূর, যানবাহনের টিকিও মেলে না। মাওবাদী আতঙ্ক তো রয়েছেই। সিআরপিএফের টহলদারি ভ্যানের উপরেই নিশানা থাকে তাদের। তবে এইসব কিছুই বাধা হয়নি কর্তব্যনিষ্ঠার কাছে। অন্তঃসত্ত্বা যুবতীকে নিরাপদে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়াটাই প্রাথমিক কর্তব্য ছিল জওয়ানদের। জঙ্গলের ভেতর দিয়ে প্রায় ৬ কিলোমিটার পথ প্রসূতীকে কাঁধে চাপিয়ে নিয়ে গেলেন জওয়ানরা। কাশ্মীরের পর মানবিকতার আরও এক নজির ছত্তীসগড়ে।

জঙ্গলে ঘেরা বিজাপুরের পেডেড়া গ্রাম। ২৪ ঘণ্টা এই গ্রাম ও তার আশপাশের এলাকায় কড়া নজরদারি চালান সিআরপিএফ জওয়ানরা। এই ঘটনা মঙ্গলবারের। সেদিনও জঙ্গলের ভিতরে টহল দিচ্ছিলেন জওয়ানরা। গ্রামবাসীদেরই একজন খবর দেন এক যুবতীর অবস্থা শঙ্কাজনক। অথচ তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার লোকের অভাব। পায়ে হেঁটে এতটা পথ জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে যেতে রাজিও নন কেউ।

যুবতীর নাম বুড়ি। তাঁর পরিবার জানিয়েছে, প্রসবকালীন নানা জটিলতা ছিল তাঁর। প্রসব যন্ত্রণা ওঠার পরে দ্রুত তাঁকে হাসপাতালে নিযে যেতে হত। কিন্তু লোকজন পাওয়া যায়নি। ভরসা ছিল জওয়ানরাই। তাঁরাও ডাকে সাড়া দিয়ে দ্রুত চলে আসেন যুবতীর বাড়িতে। কোম্পানি কম্যান্ডার অবিনাশ রাই বলেছেন, ‘‘রোজকারের রুটিন টহলের সময়েই আমরা খবর পাই এক পরিবার বিপদে পড়েছে। অন্তঃসত্ত্বার শারীরিক অবস্থা ভাল নয়। আর দেরি করিনি। টিম নিযে সেখানে পৌঁছে যাই।’’

কাপড়, কম্বল দিয়ে গদি তৈরি করে দড়ি বোঁধে ঝোলা তৈরি করা হয়। তার মধ্যে যুবতীকে বসিয়ে কাঁধে চাপিয়ে নেন জওয়ানরা। শুরু হয় দীর্ঘ যাত্রা। প্রায় ৬ কিলোমিটার জঙ্গলের ভিতর দিয়ে হেঁটে যুবতীকে তাঁরা পৌঁছে দেন হাসপাতালে। গোটা পথ যুবতীর মনোবল বাড়ানোর চেষ্টাও করেন জওয়ানরা।

বিজাপুর জেলা হাসপাতালে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন যুবতী। চিকিৎসকরাও বলেছেন, বেশি দেরি হলে প্রাণ সংশয়ের আশঙ্কা ছিল। এই খবর ইতিমধ্যেই ভাইরাল। মানবিকতার পাশাপাশি জওয়ার কর্তব্যপরায়ণতায় মুগ্ধ দেশ। প্রশংসায় ভরে গেছে সোশ্যাল মিডিয়ার দেওয়াল। কম্যান্ডার অবিনাশ রাই বলেছেন, সাধারণ মানুষের বিপদে সবসময়েই পাশে থাকবেন সেনা জওয়ানরা। সে পরিস্থিতি যতই বিপদসঙ্কুল হোক না কেন, বা সমস্যা যতই জটিল হোক না কেন, ঢাল হয়ে দাঁড়াবেন জওয়ানরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here