দেশের সময় ওয়েবডেস্ক:: কথিত আছে ১৯৭৫ সালে এক ভয়াবহ ভুমিকম্পে নাকি কেঁপে উঠেছিল হিমাচল প্রদেশের প্রত্যন্ত ‘গুয়ে’ গ্রাম। সেই ভুমিকম্পে, মাটি থেকে প্রায় ৬০০০ মিটার ওপরে থাকা গ্রামটির সব কিছু ওলোটপালোট হয়ে গিয়েছিল। আর সেই ভুমিকম্পই তুলে এনেছিল এক চাঞ্চল্যকর ইতিহাস। পাতাল ঘুম ছেড়ে উঠে এসেছিলেন ১৪০০ শতাব্দীর বৌদ্ধ সন্ন্যাসী ‘সাঙ্ঘা তেনজিং‘। তবে জীবিত নয়, মমি হিসেবে। মমিটি এতটাই ভালো ভাবে সংরক্ষিত অবস্থায় ছিল, যে মমিটির চামড়া এবং মাথার চুল দুইই অবিকৃত অবস্থায় ছিল । ২০০৪ সালে আইটিবিপি জওয়ানরা নাকি উঁচু পাহাড়ে রাস্তা তৈরি করতে গিয়ে সন্ন্যাসী ‘সাঙ্ঘা তেনজিং’-এর মমিটি পান। স্থানীয় মানুষের কাছে গল্প শোনা যায়, সন্ন্যাসী সাঙ্ঘা তেনজিং জীবিত অবস্থাতেই নিজেকে মমি করার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। চিন, জাপানেও বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের এরকম মমির খোঁজ পাওয়া গেছিল। বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের নিজেদেরকে মমি বানানোর প্রথাকে বলা হয় শোকুশিনবৎসু ৷ প্রচলিত আছে মৃত্যুর বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই তাঁরা প্রস্তুতি নেন। খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ প্রায় ছেড়েই দেন। এক জায়গায় ধ্যানে মগ্ন থাকেন। ধীরে ধীরে উপবিষ্ট অবস্থাতেই মৃত্যু হয় তাঁদের। শরীরের জলশুন্যতা ও হিমশীতল আবহাওয়ায় প্রাকৃতিক ভাবেই মমিতে পরিণত হন শ্রদ্ধেয় বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা। পেনসিল্ভেনিয়া ইউনিভার্সিটির আর্কিওলজি ও অ্যান্থ্রোপলজি মিউজিয়ামের স্কলার ভিক্টর মেয়ার মমিটি পরীক্ষা করে জানিয়েছিলেন, মমিটি খুব কম করে হলেও ৫০০ বছরের পুরানো। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ধ্যানে মগ্ন থাকা অবস্থায় তেনজিং যখন বুদ্ধে বিলীন হয়ে গিয়েছিলেন তখন তাঁর বয়েস ছিল মাত্র ৪৫ বছর। বর্তমানে গুয়ে গ্রামে ‘সাঙ্ঘা তেনজিং-এর মন্দির হয়েছে। সেই মন্দিরের ভেতরে রাখা কাচের বাক্সে সংরক্ষিত আছে ৫০০ বছর আগের মমিটি। গ্রামবাসীরা বৌদ্ধ সন্যাসীর মমিকে ঈশ্বর রূপে পুজো করেন। দেশ বিদেশের পর্যটকরা দেখতে আসেন সাঙ্ঘা তেনজিং-এর মমিটিকে। মমি বলতেই মনে ভেসে ওঠে মিশরীয় সভ্যতা, ইনকা সভ্যতার মমিদের ছবি। কিন্তু ভারতেও মমি তৈরির প্রথা ছিল তা ভাবতেই অবাক লাগে। মিশরীয় সভ্যতায় মমি বানাতে মৃতদেহের শরীরে বিশেষ ধরনের রাসায়নিকের প্রলেপ লাগানো হতো। কিন্তু ‘সাঙ্ঘা তেনজিং-এর মমিতে কোনও রাসায়নিকের প্রলেপ লাগানো হয়েনি। তবুও এত বছর ধরে এই মমি কিভাবে মাটির তলায় নিখুঁত ভাবে সংরক্ষিত ছিল সেটাও অবাক করে প্রত্নতত্ববিদদের। ‘সাঙ্ঘা তেনজিং-এর মমিটিকে ঘিরে রয়েছে একটি রহস্যও। এখনও নাকি বাড়ছে মমিটির চুল এবং নখ। বিজ্ঞানীরা অবশ্য এটিকে ভক্তির আতিশয্য বলেছেন, মানতে নারাজ ভক্তরা। লাহুল স্পিতির ঐতিহাসিক টেবো মনাস্ট্রি থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে থাকা এই গ্রাম বছরে সাত আট মাস বরফে ঢাকা থাকে। ভ্রমণ প্রেমীরা এমন জায়গা হাতছাড়া করতে চান না, তাই সুযোগ পেলেই দেশ-বিদেশ থেকে হিমাচলের গুয়ে গ্রামে ছুটে আসেন সকলে ‘সাঙ্ঘা তেনজিং- এর মমি রহস্যের সন্ধ্যানে৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here