দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বহুবার বলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা পারেননি, প্রশান্ত কিশোর করে দেখালেন।
শুধু দিদি-র ছবিই থাকবে।
নিজের লেটার হেডে দিদি-র ছবি ব্যবহার করা, এলাকায় ঢাউস ঢাউস সব কাটআউটে দিদি-র ছবি-র সঙ্গে নিজের ছবি সেঁটে দেওয়া, — আর সে সবের মাধ্যমে প্রভাব জাহির করা তৃণমূলে বহুদিনের দস্তুর। কখনও বা এও দেখা যায়, দিদি-র ছবির তুলনায় নেতার ছবি বড়!
অথচ দিদি অনেক আগেই বুঝেছিলেন, এঁদের অনেকেরই এলাকায় সুনাম নেই। কারও বিরুদ্ধে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ, তো কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতি-স্বজনপোষণের, কেউ বা এলাকার মানুষের থেকে একেবারেই বিচ্ছিন্ন। স্থানীয় ভাবে সেই প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার খেসারতই যে লোকসভা ভোটে দিতে হয়েছে, তা দলের ময়নাতদন্তের রিপোর্টেও মোটা দাগে লেখা রয়েছে।
সুতরাং আর কারও ছবিই থাকবে না।
সোমবার সকালে নতুন ক্যাম্পেন শুরু করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, – ‘দিদিকে বলো’। নজরুল মঞ্চে সেই সাংবাদিক বৈঠকে দেখা গেল, নীল স্যাটিন কাপড়ের ব্যাকড্রপে মঞ্চে একা বসে রয়েছেন দিদি। ইদানীং কালে দিদি-র সব সাংবাদিক বৈঠকে এমন কবে হয়েছে? বরং পরিচিত ছবি হল, দিদি-র ডান-দিকে বাঁ দিকে ঠেসাঠেসি করে বসেন নেতা মন্ত্রীরা। তা নিয়ে দলে রেষারেষিও রয়েছে বলে বাজারে চালু গসিপ!
অনেকের মতে, সোমবারের এই ফ্রেমটাই বুঝিয়ে দিল মমতা থুড়ি প্রশান্ত কিশোরের কৌশলটা কী?
তৃণমূলে এই কৌশলও অবশ্য নতুন নয়। ষোলো-র ভোটে প্রশান্ত কিশোরকে ছাড়াই এই কৌশল বের করে ফেলেছিলেন দিদি। ভোটের আগে চিটফান্ড, সিন্ডিকেট, নারদ কাণ্ড নিয়ে যখন তোলপাড় চলছে, দিদি বলেছিলেন, ২৯৪ টি আসনে তিনিই প্রার্থী। অর্থাৎ স্থানীয় প্রার্থী নয়, তাঁকে দেখে যেন মানুষ ভোট দেন।
এ বারও ওষুধটা সেই এক। ফারাক হল, নতুন পেশাদার মোড়ক লাগানো হয়েছে তাতে,- ‘দিদিকে বলো’। অর্থাৎ এলাকার সমস্যা থেকে শুরু করে যাবতীয় কিছু সরাসরিই দিদিকে বলতে পারেন। এমনকী তৃণমূলের স্থানীয় নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেও দিদি-র উপরেই ভরসা করা যায়। তিনিই মুশকিল আসান।
ও হ্যাঁ, এ দিন সাংবাদিক বৈঠকের পর তৃণমূলের সব বিধায়ক, জেলা সভাপতি, জেলা পরিষদ সদস্য ও ব্লক সভাপতিদের নিয়ে নজরুল মঞ্চে মিটিং করেন মমতা। তার পর প্রশান্ত কিশোরের সংস্থার ছেলেমেয়েরা তাঁদের হাতে পাটের তৈরি একটা ব্যাগ ধরিয়ে দেন। সেই ব্যাগ ভর্তি দিদির ছবি দেওয়া স্টিকার, কার্ড, প্রচার পত্র। পরে নজরুল মঞ্চ ছেড়ে বেরনোর সময়েই তাঁদের গাড়ির পিছনে পোস্টার সেঁটে দেয়-প্রশান্ত বাহিনী। শুধু দিদি-র ছবি। আর কেউ নেই।