দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ সঙ্ঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুর এর কথায়, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঠাকুরবাড়িতে পুলিশ এসে হুমকি দিয়ে বলে গিয়েছিল,থানায় গিয়ে দেখা করতে। ঠাকুরবাড়ির সদস্যদের প্রতি এমন আচরণ মেনে নিতে পারছেন না মতুয়া ভক্তরা,তাই তাঁরা বুধবার বিকেলে থানার সামনে ডাঙ্কা-কাঁসি-নিশান নিয়ে অবস্থান-বিবিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন ৷
সঙ্ঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুরকে মিথ্যে অভিযোগে ফাঁসানোর চেষ্টার অভিযোগে গাইঘাটা থানায় স্মারকলিপি দিয়েছেন বেশকিছু মতুয়া ভক্তরা। অতীতে একবার চুরির মিথ্যে অভিযোগের জেরে জেল খাটতে হয়েছিল শান্তনুকে। ফের তাঁর বিরুদ্ধে বীণাপাণি ঠাকুরের সই জাল করার অভিযোগ তুলে ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে। সঙ্ঘাধিপতির এই অসম্মান তাঁরা মেনে নেবেন না। সেই মর্মে এই স্মারকলিপি দিয়েছেন মতুয়ারা৷বনগাঁর এসডিপিও অশেষবিক্রম দস্তিদার জানান, ‘‘পুলিশের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তা আমরা খতিয়ে দেখছি।’’
উল্লেখ্য, বীণাপাণি ঠাকুরের একটি চিঠি নিয়ে শুরু হয়েছে এই চাপানউতোর। এনআরসি ঢুকে পড়ল ঠাকুরনগরের ঠাকুরবাড়িতেও। নাগরিকত্ব বিল সমর্থন না করলে লোকসভা ভোটে তৃণমূলের পাশ থেকে সড়ে দাঁড়াবে মতুয়ারা। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠানো মতুয়া মহা সংঘের বড়মার ‘সই করা’ এই চিঠি নিয়ে দিনভর তোলপাড় হচ্ছে ঠাকুরবাড়ি।
বীণাপাণিদেবীর সই করা চিঠি হাতে নিয়ে ঠাকুরবাড়িতে সাংবাদিক সম্মেলনও করেন তাঁর নাতি, বিজেপি নেতা শান্তনু ঠাকুর। ঠিক তার পরেই ওই চিঠি বড়মা সই করতে পারেন না বলে মন্তব্য করেন বড়মার ছেলের বউ, তৃণমূল সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর।
শান্তনু জানান, যে চিঠি মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠানো হয়েছে তাতে বলা হয়েছে দু এক দিনের মধ্যে নাগরিকত্ব বিল পেশ হবে রাজ্যসভায়। তখন যেন তৃণমূলের পক্ষ থেকে তা সমর্থন করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী মতুয়াদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বলে উল্লেখ করে ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, যদি তৃণমূল নাগরিকত্ব বিল সমর্থন না করে, তাহলে আগামী লোকসভার ভোটে মতুয়ারা তৃণমূলের পাশ থেকে সরে দাঁড়াবে।
এরপরেই সাংবাদিক বৈঠক করে তৃণমূলের সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর বলেন, “বড়োমার একশো বছর হয়ে গেছে। তিনি ঠিক করে সই করতে পারেন না। ওঁর সই নিয়ে তদন্ত হোক।” পাশাপাশি তাঁর দাবি, দল এই নাগরিকত্ব বিলে সমর্থন দিলে ক্ষতি হবে মতুয়াদের। অসমের মত পরিস্থিতি হবে এই রাজ্যে।
মতুয়া ভোট কোনদিকে তা নিয়ে গত কয়েক বছর ধরেই জোর টানাপড়েন চলছে তৃণমূল ও বিজেপির। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মতুয়া মহাসংঘের বড়মার সুসম্পর্ক মাথায় রেখেও সম্প্রতি সেখানে ভাগ বসানোর চেষ্টায় কসুর করেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গত ২রা ফেব্রুয়ারি ঠাকুরনগরে মতুয়া মহাসংঘের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে ঠাকুরবাড়িতে গিয়ে বড়মার আশীর্বাদ নিয়ে যান মোদী। তৃণমূল ছেড়ে যাওয়া মুকুল রায়ের উপস্থিতি ছাড়া যা সম্ভব হতো না বলে তৃণমূল শিবিরের দাবি। যার জন্য মতুয়ারা কার পাশে দেখাতে পরের দিনই সেখানে পাল্টা জনসভা করে রাজ্যের শাসকদল।
এনআরসি নিয়ে সবুজ আর গেরুয়া শিবিরের কাজিয়াও তুঙ্গে। তাই লোকসভা ভোটের আগে ঠাকুরবাড়ির গেরুয়া অংশ এনআরসিকে হাতিয়ার করলে পাল্টা শিবির যে ছেড়ে কথা বলবে না এটা ভাবাই বাহুল্য।অন্যদিকে বয়সের ভারে ন্যুব্জ হলেও বড়মাই এখনও শেষ কথা। তাই তাঁকে সামনে রেখেই এনআরসি ইস্যুতে লড়াইয়ে নেমে পড়ল ঠাকুরবাড়ি। চিঠিতে সত্যিই কি তিনি সই করেছেন, না ব্যাপারটা অন্যরকম, জলঘোলা চলছেই। সেই সাথে স্থানীয় মানুষ এবং মতুয়া সম্প্রদায়ের মধ্যেও একটা চাপা উত্তেজনার পারদ বাড়ছে,বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা৷
ছবি গুলি তুলেছেন -দেবানন্দ পাইন।