পেট্রাপোল স্থল বন্দর দিয়ে পণ্য রফতানি চালু করতে জিরো পয়েন্টে দু’দেশের ক্লিয়ারিং এজেন্টদের বৈঠক হল

0
1445

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বাংলাদেশ,নেপাল, ভুটান, সীমান্তের সমস্ত বাণিজ্য করিডর দিয়ে অত্যাবশ্যক পণ্য চলাচল শুরু করার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। তার প্রেক্ষিতে

পেট্রাপোল স্থল বন্দর দিয়ে অত্যাবশ্যক পণ্য রফতানির কাজ শুরু করার উদ্দেশ্যে পদক্ষেপ নিয়েছে প্রশাসন । মঙ্গলবার পেট্রাপোলে বৈঠক করলেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলার জেলাশাসক চৈতালি চক্রবর্তী, বনগাঁর পুলিশ সুপার তরুণ হালদার, রাজ্য সরকার নিযুক্ত উত্তর ২৪ পরগনা জেলার নোডাল অফিসার সঞ্জয়কুমার থাড়ে, বনগাঁর মহকুমাশাসক কাকলি মুখোপাধ্যায়। ছিলেন শুল্ক দফতর ও বিএসএফের কর্তারা। এদিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ক্লিয়ারিং এজেন্ট সংগঠনের প্রতিনিধি এবং পণ্য রফতানি ও আমদানিকারী সংগঠনের প্রতিনিধিরাও।

 প্রশাসন সূত্রের খবর, পেট্রাপোল  স্থলবন্দর এলাকায় প্রায় দু’হাজার পণ্য ভর্তি ট্রাক আটকে আছে দীর্ঘদিন ধরে। ওই সমস্ত পণ্য রফতানির জন্য বাংলাদেশে যাওয়ার কথা। ট্রাকে পাটবীজ, মাছের খাবার তৈরির উপকরণের মতো অত্যাবশ্যক পণ্যও রয়েছে।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বৈঠকে আটকে থাকা পণ্য কী ভাবে দ্রুত বাংলাদেশে পাঠানো সম্ভব, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এরপর আজ বুধবার পেট্রাপোল সীমান্তের জিরোপয়েন্টে দু’দেশের ক্লিয়ারিং এজেন্ট সংগঠনের প্রতিনিধি সহ পণ্য রফতানি ও আমদানিকারী সংগঠনের প্রতিনিধিরা যৌথ বৈঠক করেন।

দীর্ঘ সময় বৈঠকের পর পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী জানান, ‘‘সীমান্তে আটকে থাকা ট্রাকগুলির মধ্যে প্রায় ৪০০টি ট্রাকে অত্যাবশ্যক পণ্য রয়েছে বলে কেন্দ্রের দেওয়া তালিকা থেকে জানা গেছে। বৈঠকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, অত্যাবশ্যক পণ্য নিয়ে ট্রাক চালকেরা যাবতীয় সুরক্ষা নিয়ে তবেই জিরো পয়েন্টে পণ্য বোঝাই ট্রাক নিয়ে যাবে এবং সেখানেই বেনাপোলের ট্রাকে পণ্য হস্তান্তর করে খালি ট্রাক নিয়ে ফিরে আসবে । জিরো পয়েন্টে বাংলাদেশের উর্দ্ধতন কতৃপক্ষ এই ভাবে কাজের প্রক্রিয়াকে আইনত ভাবে মেনে নিয়ে আজই যদি লিখিত অনুমতি দেয় ,তাহলে এই মুহুর্তেই কাজ শুরু করা সম্ভব৷ এখন সম্পূর্ন ভাবে বাংলাদেশ শুল্ক বিভাগের উপরেই বিষয়টি দাঁড়িয়ে আছে৷ কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের তরফে এখন কোন আর বিশেষ বিধিনিশেষ নেই।এই ২৫০০ ট্রাকের পণ্যরফতানির ক্ষেত্রে৷

লক ডাউনে দীর্ঘ দিন বন্ধ ভারত বাংলাদেশ আমদানি ও রপ্তানির কাজ। কেন্দ্রের নির্দেশ মত দুই দেশের বাণিজ্যিক ব্যবস্তা চালু করতে সামাজিক দূরত্ব বাজায় রেখে পেট্রাপোলের জিরো পয়েন্টে বেনাপোল ক্লিয়ারিং সংগঠনের কাছে পণ্য খালিকরার প্রস্তাবে দিলেন পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং সংগঠন।

প্রশাসন সূত্রের খবর, সম্প্রতি কেন্দ্র ও রাজ্যের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বৈঠকে পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং ও ব্যবসায়ী সমিতি গুলিকে জানানো হয় তারা চাইলে পেট্রাপোল ও বেনাপোলের জিরো পয়েন্টে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আমদানি ও রপ্তানির কাজ চালু করতে পারে। সেই মত আজ বুধবার সকালে বেনাপোলের ক্লিয়ারিং এজেন্ট সংগঠন ,ট্রাক ব্যবসায়ী ও কাউন্টার সমিতির সঙ্গে বৈঠক করে পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট ও ব্যবসায়ী সমিতির প্রতিনিধিরা। সেখানে ভারতের পক্ষ থেকে জিরো পয়েন্টে পণ্য খালি করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত ইতিবাচক তেমন কোন উত্তর পাওয়া যায়নি বলেই জানা গিয়েছে, বাংলাদেশের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের উত্তরের অপেক্ষায় আটকে রয়েছে পেট্রাপোল সীমান্তের পণ্য রফতানির কাজ৷

গত মঙ্গল বার প্রশাসনের বৈঠকে পরামর্শ দিয়েছেন পেট্রাপোল এক্সপোর্টার্স অ্যান্ড ইমপোর্টার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের  সভাপতি পরিতোষ বিশ্বাস। তাঁর কথায় , ‘‘বৈঠকে বলেছিলাম, সীমান্তের জিরো পয়েন্টে এ দেশের ট্রাক থেকে বাংলাদেশের ট্রাকে পণ্য তুলে নেওয়া হোক।’’ যদিও জিরো পয়েন্টে পণ্য ওঠানো-নামানো কাজের পরিকাঠামো কতটা রয়েছে, তা নিয়ে যথেষ্ঠ সংশয় প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্ট মহল।  সীমান্তের স্থানীয় মানুষও বিশেষ ভাবে চিন্তিত,যে যদি এখন সীমান্ত খুলে দেয় ওদেশের মানুষ এদেশে প্রবেশ করবে আর তাতেই বিপদ বাড়বে, কারণ সংবাদ মাধ্যমে জানতে পারছেন সে দেশের করোনা পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ, তাই তাঁরা চাননা কোন ভাবে ওপারের শ্রমিকরা এ পারের শ্রমিকদের সঙ্গে এই মুহুর্তে কাজ করুক।

প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, এই সমস্ত বিষয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। তারপরে দু’দেশের মধ্যে আলোচনায় পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ‘‘কী ভাবে বাণিজ্যের কাজ শুরু করা যায়, তা নিয়ে এ দিন পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়েছে। স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত বিষয়টিও এ ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’’ রফতানিকারীরা আগেই অত্যাবশ্যক পণ্য রফতানির দাবি তুলেছেন।  আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তাঁরা। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন,  আটকে থাকা ট্রাকের মধ্যে মালপত্র নষ্ট হচ্ছে। দীর্ঘদিন ট্রাক আটকে থাকায় ট্রাকগুলিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এখনই ট্রাকগুলি বেনাপোলে পাঠাতে না পারলে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা পরবর্তী সময়ে তা নিতে অস্বীকার করতে পারেন।  তা ছাড়া, পার্কিংয়ে ট্রাক থাকায় রোজ ট্রাক প্রতি ফি বাবদ ১৪০০-১৫০০ টাকা করে রফতানিকারীদের দিতে হবে।

লকডাউন পরিস্থিতিতে বাণিজ্য বন্ধের কেন্দ্রের কোনও নির্দেশ ছিল না। কেন্দ্রের লকডাউন নির্দেশিকায় সীমান্ত দিয়ে অত্যাবশ্যক পণ্যের যাতায়াত চালু রাখার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে কার্যত বন্ধ। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের দাবি, রাজ্য সরকার কোনও রকম আইনি বিজ্ঞপ্তি জারি না করে একতরফা সীমান্ত বন্ধ করেছে। 

এক্ষেত্রে রাজ্য প্রশাসনের যুক্তিও যথেষ্ঠ গুরুত্বপূর্ণ ছিল, সীমান্তের ও পারে বাংলাদেশের জেলাগুলিতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়েছে। বাণিজ্য চালু থাকলে এ দেশের ট্রাক চালকদের বাংলাদেশে পণ্য খালি করতে গিয়ে কয়েক দিন থাকতে হবে। কোনও ভাবে চালক সংক্রামিত হলে এলাকায় তা ছড়িয়ে পড়বে। বিষয়টির গুরুত্ব উড়িয়ে দেওয়া যায় না। জটিলতা কাটিয়ে উঠে কবে ফের রফতানি স্বাভাবিক হবে সে দিকেই এখন তাকিয়ে রয়েছে দু’দেশের আমদানিকারী রফতানিকারীরা। অন্যদিকে লকডাউনের জেরে বন্ধ এই পেট্রাপোল স্থল বন্দরের কয়েক হাজার শ্রমিকরাও কাজ ফিরে পাওয়ার আশায় দিন গুনছেন।

Previous articleপ্রয়াত ইরফান খান জীবনযুদ্ধ থামল অভিনেতার
Next articleপৃথিবীতে, আছড়ে পড়বে কি ‘মাস্ক’ পরা সেই গ্রহাণু! কি বলছেন বিজ্ঞানীরা জানুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here