এবার কি তবে সিপিএম (বঙ্গ):অশোক মজুমদার

0
677

অশোক মজুমদার, কলকাতা: এবারের ভোটে রাজ্যে তৃণমূল-সিপিএম সংঘর্ষ প্রায় ঘটেনি বললেই চলে। জায়গায় জায়গায় খুলেছে সিপিএমের পার্টি অফিসগুলি। বিভিন্ন পাড়ার মোড়ের বোর্ডে পুরনো জায়গায় লোকে পড়ুক বা না পড়ুক নিয়মিত গণশক্তি দেখা গেছে। বহুদিন আগেই বাড়ি ফিরেছে একদা ঘরছাড়া সিপিএমের লোকজন।

জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিভিন্ন পদক্ষেপকে বাঁ হাতে ফুল দেওয়ার মত করে সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সাধুবাদ দেওয়ার মত বিরল ঘটনাও ঘটেছে। তবুও সিপিএমের শত্রু তালিকায় রাজ্যে তৃণমূল এখনও ১ নম্বরে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় সিপিএম তাত্ত্বিকরা বিজেপিকে ১ নম্বর শত্রু মনে করলেও রাজ্যে এখনও তৃণমূলই তাদের একমাত্র শত্রু। পশ্চিমবঙ্গের সিপিএমের এই ধন্ধমূলক বস্তুবাদ সত্যি বোঝা মুশকিল!

গোটা দেশের ছবিটা অবশ্য আলাদা। সেখানে সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে কর্মীরা বিজেপির বিরুদ্ধে তাদের সুর আরও চড়া করছেন। তারা বলছেন, বিজেপিই এখন দেশের মানুষের প্রধান শত্রু। দেশ জুড়ে বিজেপি বিরোধী একটা যুক্তফ্রন্ট গড়ার দাবি তুলছেন তারা। তখন কুয়োর ব্যাঙ রাজ্য সিপিএমের এই অকারণ তৃণমূল বিরোধিতার কোন ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া সত্যিই দুষ্কর! তাদের চোখে বিজেপি নয়, তৃণমূল এখনও প্রধান শত্রু।

দিন যায়, রাত যায়, বছর ঘোরে, বদলে যায় জাতীয় রাজনীতির বাস্তবতা। তবুও বঙ্গ সিপিএম তাদের অবস্থানে অনড়। তাদের রাজনৈতিক অবস্থান দেখে বোঝা যায় চলতি সময়ের থেকে তারা বহু পিছিয়ে আছেন। বঙ্গ সিপিএমে সময় ও আধুনিকতার কোনও ছোঁয়া লাগেনা!

সিপিএমে এমনিতেই বহুদিন ধরে বৃদ্ধতন্ত্রের দাপট, দলে কোণঠাসা যুবক-যুবতীরা। তরুণদের পার্টি নেতৃত্বে পৌঁছনোর, স্বাধীনভাবে চিন্তাভাবনা করার মূল বাধা এরাই। আদ্যিকালে পড়া কিছু রাজনৈতিক মতবাদ ও গোঁড়া দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে এরা দল চালান। বাইরের পৃথিবীর কোন খোঁজখবরই এরা রাখেননা। এমনকি সময়ের ধাক্কায় মার্কসবাদেও কত নতুন ব্যাখ্যা ও আলোচনা এসেছে তারও খোঁজ রাখেননা এরা! ফলে নতুন পরিস্থিতিতে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেননা। ধাক্কা খায় দল। তরুণদের দলে টানার কোন ক্ষমতাই এদের নেই।

দলে যারাই কখনও প্রশ্ন তোলেন, পৌঁছতে চান মানুষের কাছাকাছি, তখনই দল বিরোধী, মানুষের শত্রু, পুঁজিপতি কিংবা সাম্রাজ্যবাদীদের দালাল বলে দল থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয় তাদের। এই গোঁড়া ও যুক্তিহীন মানুষদের রোষে পড়েই দলে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন সুভাষ চক্রবর্তীর মত জনপ্রিয় নেতা, সইফুদ্দিন চৌধুরীর মত সংগঠক। দলের ক্ষমতাসীন লবি এবং পার্টি ব্যুরোক্র্যাটদের হাতে এদের চূড়ান্ত হেনস্থা হয়েছে।

এর ফলে এরা কেউ বা দল ছেড়েছেন, কেউ বা সুভাষ চক্রবর্তীর মত চুপচাপ হয়ে গেছেন। দলের দক্ষিণ ২৪ পরগণার দাপুটে নেতা ও মন্ত্রী রেজ্জাক মোল্লাও দল ছেড়েছিলেন বাস্তবের সঙ্গে কোন সম্পর্ক না রাখা এই দলীয় মাতব্বরদের দাপটেই। পরবর্তীকালে কান্তি গাঙ্গুলিও এদের হাত থেকে রেহাই পাননি। সাম্প্রতিককালে দলের বিরুদ্ধে মুখ খুলে সমালোচনার শিকার হতে হয়েছে অনিল তনয়া অজন্তাকে। এদের অপকর্মের পরিণতিতেই সিপিএম আজ রাজ্য বিধানসভায় শূন্য হয়ে গেছে। মানুষ আর তাদের সঙ্গে নেই।

তবুও এদের শিক্ষা হয়নি! এই তো সেদিন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র জোর গলায় ঘোষণা করলেন – এরাজ্যে বিজেপির পাশাপাশি তৃণমূল বিরোধিতায়ও অটল থাকবে দল। বোঝাই যাচ্ছে এটা দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিরোধী অবস্থান।

সূর্যবাবু কিংবা সুজন চক্রবর্তীদের মত রাজনৈতিক পড়াশোনা আমার নেই। তবে মার্কসবাদ যতটুকু পড়েছি তাতে জানি প্রধান শত্রু নিরূপণ মার্কসবাদের একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। প্রধান শত্রু সবসময় একটাই থাকে, তা কখনও দুটো হয়না। তার বিরুদ্ধেই থাকে লড়াই, বামেদের ভাষায় শ্রেণীসংগ্রামের বর্শামুখ।

প্রবল তৃণমূল বিরোধিতা এবং রাজ্যের ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়ার দুঃখে এখনও সিপিএম তৃণমূল বিরোধিতা ছাড়তে পারছে না। অথচ তাদের ভাষাতেই বিজেপি দেশের একমাত্র ফ্যাসিস্ট দল।

মার্কসবাদীদের কাছে ফ্যাসিস্টদের থেকে বড় শত্রু আর কে হতে পারে? আর যাইহোক তৃণমূল তো ফ্যাসিস্ট দল নয়। তাদেরই কেন্দ্রীয় নেতারাও তা বলেননি। দলের বিশ্লেষণও তা বলছে না। তাহলে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে রাজ্য সিপিএমের এই সমদূরত্বের লাইন তাদের কোথায় পৌঁছে দেবে আমি জানিনা!

দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও বলেননি, দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতাও তা নয়, তবুও গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়লের মত সূর্যবাবুরা তৃণমূল বিরোধিতায় অটল থাকছেন। এতে দুর্বল হচ্ছে বিজেপি বিরোধিতা।

প্রশ্ন উঠছে, বঙ্গ সিপিএম কতটা বিজেপি বিরোধী তা নিয়ে। ভুল রাজনীতি রাজ্য রাজনীতিতে সিপিএমকে একা করে দিয়েছে, এটা দিনের আলোর মত স্পষ্ট। তারপরও অন্ধ তৃণমূল বিরোধিতা ও বিজেপি আর তৃণমূলকে একাসনে বসানোর রাজনীতি বঙ্গ সিপিএমকে দলের মধ্যেও ধীরে ধীরেএকা করে দিচ্ছে। এই সাধারণ সহজ সত্যটুকু স্বীকার না করলে সিপিএম (বঙ্গ) লেখা সাইনবোর্ডের দেখা পাওয়া এখন শুধুই সময়ের অপেক্ষা।

কিছুদিন পর হয়তো বঙ্গ রাজনীতির মাঠঘাট থেকে আপনাদের মুষ্টিবদ্ধ হাতের সেই চিরচেনা বিপ্লবী চিন্তাধারাটাও বিলুপ্ত হয়ে যাবে কমরেডস!!

Previous articleকলকাতা থেকে আসা অ্যাম্বুল্যান্স চালককে মারধরের অভিযোগ বনগাঁ হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের বিরুদ্ধে
Next articleধামসা বাজিয়ে আদিবাসী উৎসবে নাচের তালে পা মেলালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here