একদিকে নন্দীগ্রাম দিবসে মমতার ট্যুইট, অন্যদিকে ‘ভারত মাতা’র নামে স্লোগান তোলেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু

0
1080

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ এ যেন কয়েক হাজার ভোল্টেজের সভা। বিদ্যুৎ খেলে যাচ্ছে চারিদিকে। দুই, রাজনৈতিক কৌতূহল এবং ওজনের ধারে ও ভারে।

সেই সভা থেকে মঙ্গলবার বেলা পৌনে ১২টা নাগাদ শুভেন্দু অধিকারী রীতিমতো আগ্রাসী মূর্তিতে যে বার্তা দিলেন তাতে স্পষ্ট জবাব রইল না ঠিকই, কিন্তু বোঝা গেল অভিমুখ পরিষ্কার। ‘রাজনৈতিক দম্ভ’, ‘পদে পদে হোঁচট খাওয়া’, ‘গর্ত ও অস্বাচ্ছন্দ্যের পরিবেশ’ ভেঙে বেরিয়ে আসতে চাইছেন তিনি।


২০০৭ সালে নন্দীগ্রাম পুনর্দখলের চেষ্টা চালিয়েছিল সিপিএম। নন্দীগ্রামের ভূমি উচ্ছেদ কমিটি এই দিনটি পালন করে রক্তস্নাত সূর্যোদয়ের দিন হিসাবে। শহিদদের স্মরণ করা হয় সেখানে।

মঙ্গলবার বেলা ১১টা নাগাদ শুভেন্দু যখন সেই মঞ্চে পৌঁছন ততক্ষণে সভাস্থল উপচে পড়ছে ভিড়ে। অন্তত কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত রাস্তায় জনস্রোত। তা দেখে উজ্জীবিত এই তরুণ দাপুটে নেতা বলেন, “আমি জানি, সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা অপেক্ষা করে রয়েছেন—আমি কী বলব! তাঁরা জানতে চান শুভেন্দু কী করবে।” এর পরেই তিনি বলেন, “হ্যাঁ আমি বলব। নিশ্চয়ই বলব। রাজনীতি করতে গিয়ে কোথায় হোঁচট খাচ্ছি, কোথায় আমার পথ গর্তে ভরা, কোথায় স্বাচ্ছন্দ্যের অভাব হচ্ছে সব বলব। তবে আজ নয়। ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির পবিত্র মঞ্চ থেকে নয়।”


ওদিকে তখন অনুগামী, সমর্থকদের গর্জণ, হাততালিতে কান পাতা দায়। কেউ বা হতাশ, দাদা কি স্পষ্ট করে কিছু বলবেন না?

কিন্তু না, স্পষ্ট করে না বললেও ইশারা-ইঙ্গিতে বোঝাতে বাকি রাখলেন না শুভেন্দু অধিকারী। ভূমি উচ্ছেদ কমিটির ব্যানারে কেন শুভেন্দু সভা করছেন সেই প্রশ্ন গতকাল সোমবার তুলেছিলেন পুরমন্ত্রী ববি হাকিম। নন্দীগ্রামের হাজরাকোটে তাই আজ পাল্টা সভাও রেখেছে তৃণমূল। ববি, পূর্ণেন্দু-দোলারা সেই সভায় সম্ভবত থাকবেন।


কার্যত সেই সভার দিকেই ইঙ্গিত করে শুভেন্দু বলেন, “বাহ রে বাহ! ১৩ বছর পরে নন্দীগ্রামকে মনে পড়েছে? ভোটের আগে আসছেন। ভোটের পরে আসবেন তো?” এ কথা যখন তিনি বলছেন, দেখা যাচ্ছে তাঁর শরীরের ভাষা বদলে যাচ্ছে। চোয়াল শক্ত, হাতের মুঠো উঁচিয়ে ধরেছেন। সেই সঙ্গে বলেন, “লড়াইয়ের মাঠে দেখা হবে। রাজনীতির মঞ্চে দেখা হবে। কি, আপনারা সঙ্গে আছেন তো?” ওমনি জবাব আসে ভিড় থেকে।


শুধু তা নয়, এদিনের বক্তৃতায় কাকে উদ্দেশ্য করে শুভেন্দু এ কথা বলেছেন, কে জানে! তিনি বলেন, “ক্ষমতার দম্ভ নিয়ে রাজনীতি করিনি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করেছি।” সভার শেষে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবেই ‘ভারত মাতা’র নামে স্লোগান তোলেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক।

অন্যদিকে এদিন,নন্দীগ্রাম দিবসে সারা পৃথিবীব্যাপী রাজনৈতিক হিংসায় যাঁদের মৃত্যু হয়েছে তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । মঙ্গলবার ট্যুইটারে পোস্টের মধ্যে দিয়ে এই শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন তিনি। এদিন ট্যুইটারে মমতা লেখেন,”আজ নন্দীগ্রাম দিবস -‘নতুন ভোর’-এর নামে বর্বর গণহত্যার ১৩ তম বার্ষিকী। যাঁরা বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক হিংসার কারণে প্রাণ হারিয়েছে তাঁদের সকলের প্রতি আমার শ্রদ্ধা। শান্তিকে সবসময় জিততেই হবে।” এদিকে এই নন্দীগ্রাম দিবসেই এলাকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি অন্য বার্তা দিচ্ছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। 

সিঙ্গুর আন্দোলনের পর ২০০৭ সালের নন্দীগ্রাম আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই বাংলার রাজনীতিতে নিজের মাটি কার্যত পাকাপাকি ভাবে শক্ত করেন তৃণমূল নেত্রী তথা বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সালেম গোষ্ঠীর প্রকল্পের জন্য তৎকালীন বাম সরকারের জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলে গ্রামবাসীরা। ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি বা বিইউপিসির নামে শুরু হয় আন্দোলন। জমি ও জীবিকা হারানোর ভয়ে আন্দোলন শুরু করেন গরীব কৃষিজীবী গ্রামবাসীরা। আর শুধু গ্রামবাসীরাই নয়, আন্দোলনে সমল হয়েছিল বিরোধী রাজনৈতিক দল, এমনকি তৎকালীন শাসক দলের নেতারাও। যদিও নিজেদের সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসেনি তৎকালীন বাম সরকার। যার ফলশ্রুতি, রক্তে ভেসেছিল নন্দীগ্রামের মাটি। নিখোঁজ হয়ে যান বেশ কয়েকজন, যাঁদের আজও হদিশ নেই।

পরবর্তী সময়ে অবশ্য ক্ষমতায় এসে বারেবারেই সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম সহ রাজ্যের সর্বত্র কৃষকদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কৃষকদের উন্নতিকল্পে বেশকিছু পদক্ষেপও করেছে তাঁর সরকার। এমনকি নন্দীগ্রাম আন্দোলনের অন্যতম কাণ্ডারি শুভেন্দু অধিকারীকে ওখান থেকেই বিধায়ক করেছেন মমতা। কিন্তু সাম্প্রতিককালে সেই শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গেই দলের সম্পর্ক নিয়ে তৈরি হয়েছে জল্পনা। ইতিমধ্যেই পূর্ব মেদিনীপুরে বিভিন্ন জায়গায়, এমনকি ভিন জেলাতেও শুভেন্দু অধিকারীর একক ছবি দিয়ে পড়েছে পোস্টার ও ব্যানার। যার নেপথে রয়েছেন ‘দাদার অনুগামী’রা। এমনকি নন্দীগ্রাম দিবসেও এখনও পর্যন্ত দলের মঞ্চে দেখা যানি শুভেন্দুবাবুকে। পরিবর্তে এদিন গোকূলনগর হাইস্কুলের মাঠে ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির আযোজিত সভায় দেখা যায় তাঁকে৷ এদিকে ফিরহাদ হাকিম, দোলা সেন এবং পূর্ণেন্দু বসুকে নিয়ে এদিন সভার আয়োজন করেছেন জেলার তৃণমলূ নেতা শেখ সুফিয়ানও।

এক্ষেত্রে এই নন্দীগ্রাম দিবসের সভা, পালটা সভার মধ্যে দিয়ে রাজ্য রাজনীতি নতুন কোনও মোড় নেয় কি না এখন সেদিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল।

বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য, মঙ্গলবার নন্দীগ্রামের চিত্রনাট্য এখানেই শেষ নয়। বিকেলে হাজরাকোটে তৃণমূলের সভা হবে। সেখানে ববি-পূর্ণেন্দুরা কী জবাব দেন, তা দেখার। গোকুলনগরের ভিড় ও হাজরাকোটের জমায়েত নিয়েও নিশ্চয়ই তুলনা চলবে।
তবে হ্যাঁ, মঙ্গলবার নন্দীগ্রামের এই সভার পরে বলে দেওয়া যায়, দেওয়াল লিখন ক্রমে পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। শুভেন্দুর রাজনৈতিক অভিমুখও যেন ক্রমশ পরিষ্কার হচ্ছে, সেটা ক্রমশ সচ্ছ ভাবে দেখা যাচ্ছে।

“অন্তরকলহের ক্যানসারে আক্রান্ত তৃণমূল”, শুভেন্দু অধিকারী প্রসঙ্গে বললেন অধীর চৌধুরী

Previous articleলাইভ-বিহার ভোটগণনা: তেজস্বীদের থেকে একক যুদ্ধে এগিয়ে বিজেপি,চলছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই
Next articleলাইভ:বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আপডেট- এগিয়ে বিজেপি, নীতীশের দল তৃতীয় স্থানে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here