দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ২০১৮ সালের ১০ নভেম্বরের কথা মনে পড়ে!
সেদিন নন্দীগ্রামে যখন শহিদ স্মরণ হচ্ছিল, কলকাতায় তখন চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধন হচ্ছে। অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খান, বলিউড-টলিউড মায় জম্পেশ সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অনেক মন্ত্রীও। শুধু তা নয়, সাধারণত ১৪ মার্চ নন্দীগ্রাম দিবসেও গত কয়েক বছরে কলকাতা থেকে কোনও বড় মন্ত্রীকে যেতে দেখা যায়নি নন্দীগ্রামে।
মঙ্গলবার সেই নন্দীগ্রামেই শুভেন্দু অধিকারীর পাল্টা সভা করতে গেলেন ফিরহাদ হাকিম, পূর্ণেন্দু বসু-দোলা সেন প্রমুখ নেতারা। যদিও আড়েবহরের বিচারে শুভেন্দুর জমায়েত বিশাল জনসভার চেহারা নিলেও, তৃণমূলের সভা ছিল অনেকটাই পথসভার মতো।
মঙ্গলবার সেই সভা থেকেই নাম না করে শুভেন্দুকে মিরজাফর বলে আক্রমণ শানালেন রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।
এদিন ববি হাকিম বলেন, “মিরজাফর তখনও ছিল। এখনও আছে। বাংলার মানুষ বিশ্বাস করে মমতাকে।” পুজোর পরে একটি সভা থেকে তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেছিলেন শুভেন্দু। স্বামী বিবেকানন্দকে উদ্ধৃত করে বলেছিলেন, “আমি আমি করে কিছু হয় না। আমরা আমরা করলেই টিকে থাকা যায়। আমি আমি হল সর্বনাশের মূল।” তারপর নন্দীগ্রাম কলেজের মাঠে বিজয়া সম্মিলনীতে দাঁড়িয়ে পরিবহণমন্ত্রীর বলেছিলেন, “প্যারাসুটেও নামিনি, লিফটেও উঠিনি। সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে ভাঙতে ভাঙতে এই জায়গায় এসেছি।”
এদিন সেই দুই মন্তব্যেরই যেন জবাব দিতে চাইলেন ববি। তিনি বলেন, “আমি আমি করে কিছু হয় না। আমরা আমরা করতে হয়। আমরা একক ভাবে কেউ বড় নই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া নন্দীগ্রামের আন্দোলন হয় না।” বন্দরের বিধায়ক আরও বলেন, “আমরাও কেউ হেলিকপ্টারে উড়ে আসিনি। সিঁড়ি বেয়েই উঠেছি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই সিঁড়ি তৈরি করে দিয়েছেন”।
তৃণমূলনেত্রীর নেতৃত্বের উচ্চতা বোঝাতে পুরমন্ত্রী আরও বলেন, “গান্ধীজি ছাড়া যেমন ভারতবর্ষ ভাবা যায় না, মাও সে তুঙ ছাড়া যেমন চিন ভাবা যায় না, লেনিন ছাড়া যেমন রাশিয়া হয় না, তেমন মমতা ছাড়া বাংলা হয় না।”
যদিও অধীর চৌধুরী থেকে মুকুল রায় সকলেই এদিন ববির বক্তব্যকে খণ্ডন করতে চেয়েছেন। অধীরবাবু বলেন, “মুর্শিদাবাদের রাজনীতিতে শুভেন্দুর সঙ্গে আমার বিরোধ কোন স্তরের তা সবাই জানে। তবে এটা সত্যি যে শুভেন্দুই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নন্দীগ্রামের আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ওতে মমতার কোনও কৃতিত্ব নেই।” অন্যদিকে মুকুলবাবু বলেন, “নন্দীগ্রামে সভা বরাবর শুভেন্দুই করত। তৃণমূলের কেউ যেত না। পাল্টা সভা করে ওরাই খেলো হয়ে গেল”।
এদিন সকালে গোকুলনগরের সভা থেকে কার্যত বিদ্রুপের সুরে শুভেন্দু বলেছিলেন, “বাহ রে বাহ! ১৩ বছর পরে নন্দীগ্রামকে মনে পড়েছে?” বিকেলের সভা থেকে ববি বলেন, “আমরা কেউ নন্দীগ্রামকে ভুলিনি। কখনও আমি এসেছি, কখনও পার্থদা এসেছেন, কখনও বা বক্সীদা এসেছেন। সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামকে যেদিন ভুলে যাব সেদিন আর মন্ত্রী থাকার অধিকার থাকবে না। তোমার নাম আমার নাম, সিঙ্গুর-ভাঙড়-নন্দীগ্রাম।”
নাম না করে শুভেন্দুর উদ্দেশে তোপ দেগে ববি আরও বলেন, “কেউ কেউ বিজেপির হাত শক্ত করতে চাইছে। পশ্চিমবাংলাকে যোগীর রাজ্য বানাতে চাইছে। যারা ভাবছে বিজেপির পালে হাওয়া দিয়ে তৃণমূলকে দুর্বল করবে, তারা মূর্খের সঙ্গে বাস করছে।”
তবে এসব চাপানউতোরের বাইরে দিনের শেষে স্বতঃস্ফূর্ততা, আবেগ ও ভিড়ের নিক্তিতে দুই সভার ওজন স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। বিশেষ করে শুভেন্দু যখন বলছেন, “আমার রাজনৈতিক পথের কথা বলব। কোথায় হোঁচট খাচ্ছি, কোথায় অস্বচ্ছন্দ বোধ করছি, কোথায় গর্তে ভরা সব বলব।” সেই সময়ে কার্যত গণগর্জনে ফেটে পড়ছিল উপচে পড়া মাঠ। বিকেলের সভায় অবশ্য সেই দৃশ্য দেখা যায়নি।