দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ শনিবার সুখবর শুনিয়েছিল হাওয়া অফিস। বঙ্গোপসাগরে ঘনীভূত নিম্নচাপ শক্তি বাড়িয়ে রবিবার দক্ষিণবঙ্গে কয়েক পশলা বৃষ্টির মুখও দেখিয়েছে। সোমবারও একই ছবি দেখা গিয়েছে।

একে তো দক্ষিণবঙ্গে এবার বর্ষার আগমন অনেকটা পরে হয়েছে। তার উপর আবার শুরু থেকেই হোঁচট খাচ্ছে বৃষ্টি। এখনও অবধি টানা একদিনও দক্ষিণবঙ্গে ভারী বৃষ্টি দেখা যায়নি। যা হয়েছে, সবটাই বিক্ষিপ্ত। উল্টে রোদের তাতে পুড়ে যাওয়ার জোগাড়। সঙ্গে আর্দ্রতাজনিত তীব্র অস্বস্তি। আষাঢ় পার করে শ্রাবণ শেষ হতে চলল। এখনও ৪৬ শতাংশ ঘাটতি রয়ে গিয়েছে বর্ষার বৃষ্টির। মাথায় হাত চাষিদের। পাট পচানোর জলটুকুও বাড়ন্ত। আমন ধান তো রোপনই করা যায়নি অধিকাংশ জায়গায়।

কোথাও কোথাও মাটির তলার জল তুলে চাষের কাজে লাগানো হচ্ছে। খরচ বাড়ছে কৃষকদের। ভূগর্ভের জলের সঞ্চয়ও নষ্ট হচ্ছে। কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “আমাদের দুশ্চিন্তা পুরুলিয়া, বাঁকুড়া এবং বীরভূম নিয়ে। পুরুলিয়াতে অত বেশি ধান না হলেও বাঁকুড়াতে ধান হয়। বীরভূমে তো হয়ই। সেদিক থেকে আমরা একটু কমের দিকে আছি। যদি এই বৃষ্টিটা হয়, তবু একটু রক্ষা।”

নিম্নচাপের দৌলতে শ্রাবণের শেষবেলায় কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে বর্ষার আমেজ। মঙ্গলবার সকাল থেকেই দফায় দফায় ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে ভিজছে কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকা। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের জেরে মঙ্গলবার দিনভর বৃষ্টি চলবে। সঙ্গে বইবে ঝোড়ো হাওয়া।

আজ থেকে বৃষ্টি বাড়বে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে। তবে বৃষ্টি বাড়লেও তা কৃষকদের মুখে হাসি ফোটাতে পারবে কি না তা নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ রয়েছে। কারণ, সেই নিম্নচাপ শক্তি বাড়ালেও সরে গিয়েছে ওড়িশা-অন্ধ্র উপকূলের দিকে। ফলে দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা অনেকটাই ফিকে হয়েছে। বিক্ষিপ্ত ভারী বৃষ্টি হতে পারে, তবে তাতে চাষের সমস্যা মিটবে না।

মঙ্গলবার ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রামে। বুধবার ভারী বৃষ্টি হতে পারে ঝাড়গ্রাম, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। বৃহস্পতিবার ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে মাত্র দুই জেলা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরে। মূলত উপকূল এলাকায় বৃষ্টির দাপট লক্ষ্য করা যাবে। উল্লেখযোগ্য, এই তিনদিনের একদিনও কলকাতায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখছে না আলিপুর আবহাওয়া দফতর। কয়েক পশলা কিংবা হালকা-মাঝারি বৃষ্টিতে ভিজতে পারে মহানগর।

নিম্নচাপের পূর্বাভাস পেয়ে সোমবারই জরুরিকালীন বৈঠকে বসে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর। দক্ষিণবঙ্গের সমস্ত জেলাশাসকের সঙ্গে বৈঠক করেন বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের সচিব। এখনও পর্যন্ত বৃষ্টি মোকাবিলায় কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন বৈঠকে। বৈঠকে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলি যাবতীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছে, তেমনটাই জানিয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর। সূত্রের খবর, এই বৈঠক চলাকালীন মৎস্যজীবীদের কত নৌকা ফিরে এলো, তার সদুত্তর না পেয়ে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের সচিব।

এদিকে ক্রমশ গভীর হচ্ছে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপ। যার জেরে মঙ্গলবার থেকেই বৃষ্টির পরিমাণ বাড়বে দক্ষিণবঙ্গে। সঙ্গেই ৪০ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে বইবে ঝোড়ো হাওয়া। আগামী ১১ অগাস্ট পর্যন্ত তুমুল বৃষ্টিপাতের ইঙ্গিত দিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সমস্ত জেলাতেই বৃষ্টিপাত হবে। ফলে কিছুটা হলেও জ্বালাপোড়া গরমের হাত থেকে রেহাই পেল বঙ্গবাসী। যদিও এই বৃষ্টিপাতের জেরে দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির ঘাটতি খুব একটা মিটবে না বলেই মত আবহাওয়াবিদদের।

উল্লেখ্য, গত ২৪ ঘন্টায় ১১.২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে শহরে। ঘন্টায় ২৫ থেকে ৩০কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়াই বয়েছে। সোমবার দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩১.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৬.৪ ডিগ্রি। বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমান ছিল ৯২ শতাংশ।

উত্তরবঙ্গে, বিশেষত পাহাড়ে আপাতত ভারী বা অতিভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। ডুয়ার্স ও সমতলের এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হবে আগামী কয়েকদিন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here