পার্থ সারথি নন্দী, বনগাঁ: সোলার মালা, ফুল, পুজোর নানা সরঞ্জামে ঠাসা রয়েছে বস্তায়। শুক্রবার সকালে পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন ব্যবসায়ীরা। সীমান্ত শহর বনগাঁয়(Bangaon) বিশ্বকর্মা পুজোর (Vishwakarma Puja) আয়োজনের অন্ত নেই। ভালো ব্যবসার আশায় প্রত্যেকেই। চূড়ান্ত ব্যস্ততা থাকার কথা গোটা বাজারজুড়ে। কিন্তু পুজোর আগের দিন সকালে বনগাঁর বিভিন্ন মার্কেট , ‘ট’ বাজারের (Taw Bazar) চিত্রটা ছিল একেবারে উলটো। মাছি মারার অবস্থা দোকানে দোকানে। “আগের মতো আর সেই বিক্রি নেই” একটাই কথা মুখে মুখে ঘুরছে ব্যবসায়ীদের।

বনগাঁয় রাস্তার ধারে এভাবেই রাত কাটল বিশ্বকর্মা পুজোর সরঞ্জাম বিক্রেতাদের ৷

শহর বনগাঁয় চিরকালই বিশ্বকর্মা পুজোর বিশাল রমরমা। এই পুজো কার্যত শারদোৎসবের রূপ নেয় এখানে। তবে করোনা অতিমারির জেরে গত দু’বছর সেভাবে সাড়ম্বরে পুজো হয়নি। এ বছর বাজার উঠবে বলেই আশা ছিল পুজোর নানা উপকরণ ও প্যান্ডেল সাজসজ্জার সরঞ্জাম বিক্রেতাদের। কিন্তু, শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ক্রেতাদের ভিড়, ঠেলাঠেলির কোনও লক্ষণ নেই গোটা বনগাঁয় নিউ মার্কেটে।

রাত পোহালেই কর্মের দেবতা বিশ্বকর্মার পুজো। পুজোর আগে ভালো লাভের আশায় থাকেন বাজারের ছোটোখাটো ফুটপাথের দোকান থেকে শুরু করে বড় কারবারীরাও। অথচ, সেই ভাবে জিনিসপত্র বিক্রি না হওয়ায় চিন্তায় পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয়দের পাশাপাশি দূর-দূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরাও এখানে এসে বিকিকিনি শুরু করেন। বিশ্বকর্মা পুজোর কয়েকদিন আগে থেকেই নিকটবর্তী গ্রামও শহরের বহু ব্যবসায়ী ব্যবসার জন্য তাঁদের পসরা নিয়ে হাজির হয় লক্ষী লাভের আশায়। ঠাকুরনগর থেকে আসা এক ব্যবসায়ী মোহন বিশ্বাস বলেন, “ব্যবসার জন্য এতদূর এসেছি। কিন্তু ব্যবসার অবস্থা এ বছর ভালো নেই। আমি এখানে দীর্ঘ দশ বছর আসছি।

শুক্রবারে সকালে এসেছি কিন্তু দুপুর থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে থামছেই না একটা মালাও বিক্রি হয়নি এদিন বাড়ি ফেরার পয়সাও হাতে আসেনি তাই এখানে রাস্তার পাশেই রাত কাটিয়ে পুজোর সকালের অপেক্ষায় রয়েছি , যদি ক্রেতাদের দেখা মেলে৷ যতদিন যাচ্ছে, ব্যবসার পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এখানকার অনেক পুজো জাঁকজমক করে হতো, সেটা এখন অনেক ছোট হয়ে যাচ্ছে। সে কারণে আমাদের বিক্রি-বাট্টাও কমছে।”

গত দু’বছর করোনার কারণে সেইভাবে ব্যবসা হয়নি। বনগাঁয় ছোট, বড় মিলিয়ে কয়েকশো পুজো হয়। এবারে পুজোর সংখ্যা কমার পাশাপাশি কমেছে পুজোর জৌলুসও। অনেক জায়গাতেই নিয়ম রক্ষায় পুজো হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন স্থানীয়রা। অনেকেরই মত, আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণেই ছন্দ হারিয়েছে বনগাঁর বিশ্বকর্মা পুজো। অনেক ব্যবসায়ীর মতে, বনগাঁর অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মূলত ট্রান্সপোর্ট ব্যবসার উপরে নির্ভর করে ৷

বহু ট্রাক পরিবহন ও ট্রাক মালিকদের কাজের অবস্থা ভাল নেই, ট্রাকের ভাড়া হচ্ছে না সেভাবে ৷ সীমান্ত বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত কয়েক হাজার ট্রাক রয়েছে এই শহরে যার বেশির ভাগই অচল অবস্থায় পড়ে রয়েছে কয়েক মাস ধরে ৷ ব্যবসায়ীদের কথায় তারই জেরে ট্যাকে টান পড়েছে ৷ সেই কারণেই বিশ্বকর্মা পুজোর সংখ্যা কমেছে এ বছর৷

ব্যবসায়ী বিনয় সিংহ বলেন, “ এবার দেরি বর্ষা এল। পুজোর মুখে সব ব্যবসায়ীরাই অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন বলে ধারণা৷ বিশেষ করে বস্ত্র ও এই ধরনের পুজোর উপকরণের জিনিসপত্র নিয়ে যাদের মূলত ব্যবসা তাঁদের বিশেষ ভাবে ক্ষতি হওয়ার উপক্রম হয়েছে এই বর্ষা ৷ রাস্তায় লোকজন সেভাবে বের হয়নি। ফলে বিক্রি কমেছে ৷এ বছর একদমই বেচাকেনা নেই। অন্য বছর এই জায়গায় তিল ধারণের জায়গা থাকতো না। আজ পুজোর সকালের চিএটাও প্রায় একই রয়েছে সকাল থেকেই বৃষ্টিপাত জারি রয়েছে ৷

ঠাকুরনগরের বাসিন্দা উমারাণী সরকারের কথায় আজ সকালবেলাটাই শুধু হাতে আছে। ঠাকুরের আশীর্বাদে দেখি কতটুকু ব্যবসা হয়। অনেক টাকার মাল এনেছি। কেনা দামটাই তুলতে পারব কিনা সেই চিন্তায় আছি।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here