দেশের সময়, ওয়েবডেস্কঃ স্বপ্নে ঘটে যেমন। আইকনের সামনে তাঁর দুটি রেকর্ড ভেঙে দিচ্ছেন অনুজ। ইতিহাস এভাবেই রচিত হয়ে থাকে, তেমমন ঘটল বুধবার মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে।

৪১তম ওভারের চতুর্থ বলটি লং লেগ আর ডিপ মিডউইকেটের মাঝে খেলেই দৌড় শুরু করলেন বিরাট কোহলি। এই দৌড়টি এই ম্যাচের বাকি সিঙ্গলসগুলির থেকে একটু আলাদা। সচিন তেন্ডুলকরের সামনে তাঁকে টপকে যাওয়ার দৌড় ছিল ওটা। এক দিনের ক্রিকেটে ৫০তম শতরানের দৌড় ছিল ওটা। ওয়াংখেড়ের মাঠে তখন শব্দব্রহ্ম। “কোহলিইইইই, কোহলিইইইই” চিৎকার। এক সময় এই মাঠেই উঠত “সচিন, সচিন” ধ্বনি। বুধবার তিনি মাঠে বসেই শুনলেন চিৎকার পাল্টেছে। আর যাঁর জন্য চিৎকার, সেই বিরাট শতরান করার পর উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দিলেন সচিন। মাস্টার ব্লাস্টার আপ্লুত তাঁর ছাত্রের কীর্তিতে।

শচীন তেন্ডুলকারের ৪৯তম ওয়ান ডে সেঞ্চুরি টপকে বিরাট কোহলি করলেন ৫০তম সেঞ্চুরি। শুধু তাই নয়, বিশ্বকাপে শচীনের ৬৬৯ রানের মহানজিরও ভাঙল বিরাটের ব্যাটে।

বিরাট এক দিনের ক্রিকেটে ৫০তম শতরানটি করে প্রথমেই হেলমেট, গ্লাভস খুলে দু’হাত তুলে সচিনকে প্রণাম জানালেন। বিরাট এর আগেও সচিনকে প্রণাম করেছিলেন। সে কথা সচিন নিজেই জানিয়েছেন। সমাজমাধ্যমে সচিন লেখেন, “ভারতের সাজঘরে তোমার সঙ্গে যখন প্রথম দেখা হয়েছিল, সতীর্থেরা তোমাকে বলেছিল আমাকে প্রণাম করতে। এটাই নাকি ভারতীয় দলের সজঘরের নিয়ম। তুমি সেই ইয়ার্কি না বুঝে আমাকে প্রণাম করতে গিয়েছিলে। আমি হাসি থামাতে পারিনি। আজ তুমি আমার মন ছুঁয়ে নিলে। তোমার প্রতিভা এবং খেলার প্রতি আবেগ আমার মন ছুঁয়ে গিয়েছে। সেই বাচ্চা ছেলেটা আজ বিরাট হয়ে গিয়েছে। আমি প্রচণ্ড খুশি। আমি সব থেকে খুশি এক জন ভারতীয় আমার এই রেকর্ড ভেঙেছে। আর বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের মতো বড় মঞ্চে করার কৃতিত্বটাই আলাদা। আর আমার ঘরের মাঠে করাটা সত্যিই কেকের উপর রাখা চেরির মতো।”

ইডেনে শচীনের ৪৯তম সেঞ্চুরি স্পর্শ করেছিলেন কোহলি। তারপর শেষ ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে হয়ে যেত এই মহানজির। কিন্তু একটুর জন্য মিস হয়েছিল স্বপ্নপূরণ। কিন্তু শচীনের ঘরের মাঠে তাঁরই দুটি নজির গড়ে কোহলি প্রমাণ করলেন তিনিই এই মুহূর্তে ভারতীয় ক্রিকেটের কিং, মানে রাজা। ১০৬ বলে ১০০ রান করেন কোহলি,যার মধ্যে ছিল ৮টি চার ও একটি ছয়।

এদিন দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও শুভমন গিল (চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন) ফিরে যাওয়ার পরে কোহলি দায়িত্ব নিয়ে দলকে টেনেছেন।  কোহলি ৫৯ বলে ৫০ রান করেছেন প্রথমে, তারপর খেলা যত গড়িয়েছে তাঁর ব্যাট চওড়া হয়েছে।  ইডেনের মতো একইভাবে শ্রেয়স আইয়ারকে সঙ্গে করে এই মহাকীর্তি গড়লেন ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে। যে মাঠে শচীন একটা সময় বলবয় ছিলেন। সেই মাঠেই মাস্টারকে টপকে কোহলি এক মাইলস্টোনে পৌঁছে গেলেন। 

বুধবার ওয়াংখেড়ে আরও একটি মুহূর্তের সাক্ষী থাকল। মাঠে বিরাট যখন তাঁর রেকর্ড ভাঙা ইনিংস খেলছেন, তখন সচিন যেমন গ্যালারিতে ছিলেন, তেমনই ধারাভাষ্য দিচ্ছিলেন ভিভ রিচার্ডস। বিরাটের কাছে সচিন যেমন বিগ্রহ, তেমনই সচিনের কাছে ভিভ। একেক যুগের ক্রিকেট নায়কেরা উপস্থিত ছিলেন ওয়াংখেড়েতে। ইতিহাসের সাক্ষী হচ্ছিল মুম্বইয়ের মাঠ। যে মাঠে ১২ বছর আগে বিশ্বকাপ জিতেছিল ভারত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here