দেশের সময় : মহারণ ২৪। আর এই যুদ্ধে বিজেপিকে রুখে দেওয়াই একমাত্র লক্ষ্য তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এজন্য অবশ্য কাউকে সঙ্গে নেওয়ার প্রয়োজন নেই বলে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। বার্তা দিয়েছেন একলা চলার। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন, বাংলায় শুধু তৃণমূল আর দেশে ইন্ডিয়া।
এরপরই প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা সুর চড়াচ্ছিলেন। বলছিলেন, রাজ্যে সাত-আটটি আসন ছাড়তে হবে। না হলে তৃণমূলের সঙ্গে সমঝোতার কোনও প্রশ্নই আসে না। তবে প্রদেশ নেতৃত্ব কী বলছে, তা নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নয় কংগ্রেস হাইকমান্ড। বরং তারা চাইছে, তৃণমূলের সঙ্গে বাংলায় জোট গড়েই লোকসভা নির্বাচনে লড়তে।
ইতিমধ্যেই দিল্লির কংগ্রেস শিবির থেকে বার্তা দেওয়া হয়েছে, তারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলতে রাজি। তবে কোনও প্রদেশ নেতৃত্ব নয়, কথা বলবেন সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী কিংবা মল্লিকার্জুন খাড়্গের মতো শীর্ষ নেতৃত্ব।
কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএমের জোট রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব বাংলায় তৃণমূলের হাত ধরতে চাইলে তাদের পুরনো জোটের কী হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, তৃণমূল ও কংগ্রেস জোট হলে সিপিএমের সঙ্গে এ রাজ্যে কংগ্রেসের যে জোট বা আসন সমঝোতা হবে না, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিচার করলে সিপিএমের সঙ্গে জোটের চেয়ে তৃণমূলের সঙ্গে জোট গড়ে লড়াই করা কংগ্রেসের কাছে বুদ্ধিমানের কাজ।
কারণ, এতে বাংলায় কংগ্রেসের কী ফল হল, তার চেয়েও অনেক বড় বিষয় জাতীয় স্তরে ইন্ডিয়া জোটকে শক্তিশালী করা। এদিকে তৃণমূলের হাত ধরার যে মরিয়া চেষ্টা শুরু হয়েছে কংগ্রেসের, তা নিয়ে অবশ্য সিপিএম নেতৃত্ব এখনও মুখ খোলেনি। পরিস্থিতির উপর নজর রেখেছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট।
সোনিয়া-রাহুল ঘনিষ্ঠ দিল্লির এক কংগ্রেস নেতা ইতিমধ্যেই বার্তা দিয়েছেন, রাজ্য রাজনীতির কথা মাথায় রেখে প্রদেশ নেতৃত্ব হয়তো চাইছে, একলা লড়াই করতে কিংবা সিপিএমের সঙ্গে জোট গড়ে লড়তে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এটা লোকসভা নির্বাচন। ফলে জাতীয় রাজনীতির কথাটা সবার আগে মাথায় রাখতে হবে। আমাদের লক্ষ্য, ইন্ডিয়া জোট মজবুত করা। তাই খোলা মনে, বড় হৃদয় নিয়ে এবং মুখ বন্ধ রেখে শরিকদের সঙ্গে আসন সমঝোতা করতে হবে। বড় স্বার্থের জন্য প্রয়োজনে বিসর্জন দিতে হবে ক্ষুদ্র স্বার্থ।
এই বার্তাতেই স্পষ্ট, কংগ্রেসের হাইকমান্ড মমতার হাত ধরতে মরিয়া। এআইসিসি’র একটা বড় অংশ চাইছে, কোনও জেদাজেদি না করে, ইন্ডিয়া জোটের আসন সংখ্যা বাড়াতে। ফলে সেটা কংগ্রেসের প্রতীকে নাকি শরিকের প্রতীকে জয় আসছে, তা পরের ব্যাপার।
কংগ্রেসের পাঁচ সদস্যের অ্যালায়েন্স কমিটি মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ড, তামিলনাড়ু, কেরল, পাঞ্জাব, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যে দলের অবস্থান নিয়ে প্রদেশ নেতৃত্বের সঙ্গেআলোচনা শুরু করেছে। একইসঙ্গে চলছে রাহুল গান্ধীর ভারত ন্যায় যাত্রার প্রস্তুতি।
হিন্দি বলয়ের তিন রাজ্যে বিজেপির কাছে হার মানতে হয়েছে কংগ্রেসের। এই পরিস্থিতিতে ইন্ডিয়ার আসন সমঝোতা কতটা বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়ে ঝুলছে হাজারো প্রশ্ন। রামমন্দির ঘিরে হিন্দু ভাবাবেগ উস্কে দিতে আসরে নামছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই পরিস্থিতিতে লোকসভা নির্বাচনের লড়াইয়ে রাহুল গান্ধী হাতের শেষ তাস টেবিলে রেখেছেন।
জানিয়েছেন আবার ভারত যাত্রা হবে। তবে এবার মণিপুর থেকে মুম্বই পর্যন্ত ভারত ন্যায় যাত্রা শুরু করতে চলেছেন রাহুল। রামমন্দির উদ্বোধনের ঠিক এক সপ্তাহ আগে, ১৪ জানুয়ারি যাত্রা শুরু হবে। ওই যাত্রা যখন পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে যাবে, তখন তৃণমূল যাতে অংশ নেয়, সেটাই চাইছেন রাহুল গান্ধীরা। তবে তৃণমূল তাতে অংশ নেবে কি না তা নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখনও কিছু বলেননি।
রাহুলের ন্যায় যাত্রায় তৃণমূলের যোগ দেওয়া বা না দেওয়া, দু’টিরই বিশেষ রাজনৈতিক তাৎপর্য থাকবে। আপাতত সেদিকেই নজর থাকবে রাজনৈতিক মহলের।