দেশের সময় , কলকাতা: রেশন দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন বনগাঁর দাপুটে তৃণমূল নেতা শঙ্কর আঢ্য ওরফে ডাকু । গ্রেফতারির পর থেকেই তিনি দাবি করে আসছিলেন, তাঁকে নাকি ফাঁসানো হচ্ছে। আর আজ শনিবার ফের একবার সেই চক্রান্তের তত্ত্বই শোনা গেল বনগাঁর প্রাক্তন পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্যর গলায়।
‘রেশন ‘দুর্নীতি’কাণ্ডেজ্যোতিপ্রিয় মল্লিক হেফাজতে থাকাকালীন কীভাবে কাগজ-কলম পেলেন, তা নিয়েই এবার প্রশ্ন তুলে দিলেন শঙ্কর। বললেন, “উনি কাস্টডিতে কীভাবে পেন পেলেন, কীভাবে কাগজ পেলেন?তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। এটা শুধুমাত্র ষড়যন্ত্র।”পাশাপাশি আবার দাবি করেছেন, রেশন ‘দুর্নীতি’র সঙ্গে তিনি কোনও ভাবেই যুক্ত নন।
ধৃত মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের হয়ে কত টাকা লেনদেন করেছেন?’ আবার সেই প্রশ্নের মুখোমুখি হলেন ইডির হাতে গ্রেফতার হওয়া বনগাঁ পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান
শঙ্কর আঢ্য ওরফে ‘ডাকু’র ইডি হেফাজতের মেয়াদ ফুরিয়েছে। শনিবার তাঁকে আদালতে হাজির করানো হবে। তার আগে ইডি দফতর থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় শঙ্করকে। তখনই সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হন তিনি। তাঁকে মন্ত্রীর টাকার লেনদেন নিয়ে প্রশ্ন করা হলে শঙ্কর বলেন, ‘‘আমরা কিছুই জানি না। এক পয়সাও নিইনি। এটা একটা অভিযোগ। এর কোনও প্রমাণ নেই।’
‘ডাকু’ আরও বলেন, ‘‘আমার কোনও মিল নেই, আমি রেশন সরবরাহকারীও (ডিসট্রিবিউটর) নই। ফলে খাদ্য দুর্নীতির সঙ্গে আমি কোনও ভাবে জড়িত হতে পারি না।’’ এর পরেই তাঁর প্রশ্ন, ‘‘হেফাজতে থাকাকালীন উনি ( মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়) কী ভাবে কলম পেলেন, কাগজ পেলেন, সেটা দেখা হোক। তা হলে সত্যিটা বোঝা যাবে।’’
গত ৫ জানুয়ারি শঙ্করের বনগাঁর বাড়িতে প্রায় ১৭ ঘণ্টা টানা তল্লাশি চালায় ইডি। তার পর রাতে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। শঙ্করকে নিয়ে যাওয়ার সময়ে স্থানীয়দের বিক্ষোভের মুখে পড়েছিল ইডি। পরে তাঁকে আদালতে হাজির করিয়ে ইডি জানায়, ২০ হাজার কোটি টাকার বিদেশে লেনদেন করেছেন শঙ্কর। রেশন ‘দুর্নীতি’র সঙ্গে সেই টাকার যোগ থাকতে পারে বলে ইডির অনুমান।
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি, ওই ২০ হাজার কোটির মধ্যে অন্তত ৯ থেকে ১০ হাজার কোটি জ্যোতিপ্রিয়ের। শঙ্কর অবশ্য সে সব অভিযোগ প্রথম থেকেই অস্বীকার করে আসছেন। তবে হাসপাতাল থেকে চিঠি লেখার কথা ইডির জেরায় স্বীকার করে নিয়েছেন ধৃত মন্ত্রী। চিঠিটিতে টাকার লেনদেনের কথা লেখা ছিল। ইডি সেই চিঠি হাতে পেয়েছে।
উল্লেখ্য, রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক আগেই গ্রেফতার হয়েছেন রেশন দুর্নীতি মামলায়। জ্যোতিপ্রিয়র সঙ্গে এই শঙ্কর আঢ্যর যথেষ্ট ঘনিষ্ঠ যোগ ছিল বলেই জানা যাচ্ছে। গ্রেফতারির পর হাসপাতালে থাকাকালীন জ্যোতিপ্রিয়র একটি চিঠিও নাকি ইডির হাতে এসেছে। ইডির দাবি, সেখানে নাম ছিল শঙ্করের। শঙ্করকে যেদিন বনগাঁর বাড়ি থেকে ইডি গ্রেফতার করে, সেদিনও বনগাঁর প্রাক্তন পুরপ্রধানের স্ত্রী দাবি করেছিলেন, তাঁকে বলা হয়েছিল জ্যোতিপ্রিয়র জন্যই গ্রেফতার করা হয়েছে। যদিও শঙ্কর ও তাঁর পরিবারের তরফে বার বার দাবি করা হয়েছে, শুধুমাত্র রাজনৈতিক সম্পর্কই ছিল তাঁদের।
এদিকে ইডির তরফে আবার আদালতে দাবি করা হয়েছে, রেশন দুর্নীতির কালো টাকা ভিনদেশে পাচার হয়েছে। আর এই শঙ্করের বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ের ব্যবসাও রয়েছে। সেক্ষেত্রে ইডির সন্দেহ, এই বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ের সংস্থাগুলির মাধ্যমেই দুর্নীতির টাকা বাইরে পাচার হয়েছে। আজ শঙ্কর আঢ্যকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, জ্যোতিপ্রিয়র হয়ে তিনি কত টাকা বাইরে পাঠিয়েছেন? প্রশ্ন শুনে শঙ্করের দাবি, ‘আমি কিছু জানি না। এক পয়সাও নিইনি। এটা শুধুই অভিযোগ, কোনও প্রমাণ নেই।’