দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ আরজি কর হাসপাতালে তরুণী পড়ুয়া-চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পরে পেরিয়ে গেছে ১৮ দিন। ঘটনার পরেই অভিযোগ উঠেছিল, আরজি করের থার্ড ফ্লোরের সেমিনার রুমে অর্থাৎ ক্রাইম সিনে নানা রকম পরিবর্তন ঘটেছে। এবার সামনে এল, সেদিনকার সেমিনার হলের একটি ভিডিও, যাতে এই অভিযোগেরই সত্যতা প্রমাণ হয়
বলে মনে করছেন অনেকে। এই ভিডিওর সত্যতা অবশ্য যাচাই করেনি ‘ দেশের সময়’।
সেমিনার হলের কতটা ভিতরে ঢুকেছিল ওই ভিড়, তা-ও স্পষ্ট নয় ভিডিও দেখে। তবে সেদিনের সেই ভিড়ের মধ্যেই এমন কিছু লোকজনকে দেখা গেছে, যা দেখে নতুন করে প্রশ্ন উঠে গেছে, ক্রাইম সিন আদৌ সুরক্ষিত ছিল কিনা, তাই নিয়ে!
ভিডিও তে দেখা গেছে, ওই ভিড়ের মধ্যে রয়েছেন হাসপাতালের ফরেন্সিক বিভাগের কর্তা দেবাশিস সোম। এই দেবাশিস সোম এখন সিবিআই তদন্তের স্ক্যানারে। রবিবার তাঁর বাড়িতে তল্লাশি করে তাঁকে নিজাম প্যালেসে ডেকে নিয়ে যায় সিবিআই। জানা গেছে, দেবাশিস আরজি করের ফরেন্সিক বিভাগের সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরে যুক্ত। ওই বিভাগের ডেমনস্ট্রেটর পদে রয়েছেন তিনি।
এ ছাড়াও আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের কাউন্সিলেরও সদস্য দেবাশিস। তিনি রয়েছেন কলেজের ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশনের কমিটিতেও। এই দেবাশিস সন্দীপের অত্যন্ত ‘ঘনিষ্ঠ’ বলেই খবর মিলেছে আরজি কর সূত্রে। এমনকি হাসপাতালে তিনি নিজের বিভাগের চেয়ে বেশি থাকতেন, অধ্যক্ষ সন্দীপের ঘরের পাশে একটি ঘরে। অভিযোগ, হাসপাতালের ফরেন্সিক মেডিসিন বিভাগে তাঁর অতিরিক্ত দাপট ছিল।
এছাড়াও ঘটনার দিনের ভাইরাল হওয়া ভিডিওয় দেখা গেছে, শান্তনু দে নামের এক আইনজীবী সেখানে উপস্থিত। তিনি সন্দীপ ঘোষের নিজস্ব আইনজীবী তথা ছায়াসঙ্গী বলে জানা গেছে। ঘটনার দিন সকাল সকাল তিনি ক্রাইম সিনে কীভাবে পৌঁছে গেছিলেন, কেনই বা গেছিলেন, ভিডিও দেখে সেই প্রশ্ন উঠেছে সমস্ত মহলে।
শুধু তাই নয় আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের আর এক ছায়াসঙ্গী প্রসূন চট্টোপাধ্যায়কেও দেখা গেছে ওই ভিডিওর ভিড়ে। স্বাস্থ্য ভবনের একাংশের মতে, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে তিনি ডেটা এন্ট্রি অপারেটর হিসাবে কাজ করেন। সেই সঙ্গেই তাঁর আরজি করে আসা-যাওয়া ছিল সন্দীপ ঘোষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সূত্রে। ঘটনার দিন সকাল সকাল তিনিই বা কীভাবে পৌঁছে গেলেন ক্রাইম সিনে, সেকথাও ভাবাচ্ছে সকলকে।
৪৩ সেকেন্ডের ওই ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এনে দাবি করা হল, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের জরুরি বিভাগের চারতলার যে সেমিনার হল মহিলা চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়েছিল, ভিডিয়োটি সেই সেমিনার হলের। শুধু তা-ই নয়, মহিলা চিকিৎসকের দেহ উদ্ধারের ঠিক পর পরেই সেখানকার দৃশ্য ওই ভিডিয়োয় বন্দি রয়েছে বলেও দাবি করা হচ্ছে। যদিও ভিডিয়োয় নিহত মহিলা চিকিৎসকের দেহ দেখা যাচ্ছে না ।
ভিডিয়ো দেখেও কোনও ভাবেই বোঝার উপায় নেই যে, সেটি কবে, কখন তোলা হয়েছে। আরজি কর্তৃপক্ষও এ বিষয়ে সরকারি ভাবে কিছু জানায়নি। মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় তদন্তভার এখন সিবিআইয়ের হাতে। তারাও এ ব্যাপারে কিছু বলেনি সরকারি ভাবে।
বৃহস্পতিবারই সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর মামলার শুনানি চলার সময়ে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিবালকে ভর্ৎসনা করে প্রশ্ন করেন, ৯ তারিখ সকাল ১০টা ১০-এ ঘটনার জেনারেল ডায়েরি করা হয়েছে। এর পরে ক্রাইম সিন সিল করা হয়েছে রাত ১১টার পরে, এতক্ষণ কী হচ্ছিল?
এমনকি এই প্রশ্নও উঠেছে আদালতের বিচারপতিদের তরফে, যে এফআইআর করতে কেন রাত হয়ে গেল, তার আগে কেনই বা ময়নাতদন্ত সারা হয়ে গেল নির্যাতিতার।
শুধু তাই নয়, ক্রাইম সিনে যে কিছু অদলবদল করা হয়েছিল, সে নিয়ে প্রথম থেকেই অভিযোগ করে এসেছেন নির্যাতিতার মা-বাবা। তাঁরা দাবি করেন, ঘটনার খবর পেয়ে সেদিন সকালে আরজি করে পৌঁছনোর পরে সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে তাঁদের বাইরে অপেক্ষা করিয়েছিল পুলিশ। মেয়ের মুখটাও দেখতে দেয়নি কেউ। অবশেষে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে মেয়েকে দেখতে পাওয়ার অনুমতি পেয়েছিলেন তাঁরা। অথচ সে সময়ে এত বহিরাগত লোকজনের ভিড় ছিল সেমিনার রুমে। এই সময় ধরে সেখানে কী হয়েছিল, সে প্রশ্ন তুলেছেন নির্যাতিতার মাও।