রেশন বণ্টন দুর্নীতি মামলায় প্রথম চার্জশিট পেশ করল ইডি। মঙ্গলবার কলকাতার নগর দায়রা আদালতে এই চার্জশিট পেশ করে তারা। ইডি সূত্রে খবর, চার্জশিটে রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, মিল ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমান ছাড়াও রয়েছে দশটি ভুয়ো সংস্থার নাম। এই সংস্থাগুলির মাধ্যমে দুর্নীতির কালো টাকা সাদা করা হয়েছে বলে তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর।

দেশের সময়, কলকাতা : ২৬ অক্টোবর গভীর রাতে রেশন দুর্নীতির অভিযোগে রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ওরফে বালুকে গ্রেফতার করেছিলেন তদন্তকারীরা। গ্রেফতারের ৪৭ দিনের মাথায় মঙ্গলবার রেশন দুর্নীতি মামলায় মন্ত্রী বালু সহ ১২ জনের নামে আদালতে চার্জশিট জমা দিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।


মঙ্গলবার বেলা ১২টা নাগাদ ইডির তদন্তকারী অফিসার আলিপুর আদালতে চার্জশিট পেশ করেছেন।

আদালত সূত্রের খবর, ১৬২ পাতার চার্জশিট জমা দিয়েছে ইডি। মন্ত্রী বালু, রেশন ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমান সহ ১২ জনের নাম রয়েছে চার্জশিটে।

১৬২ পাতার চার্জশিটে ইডির তরফে দাবি করা হয়েছে, ১০০ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। তবে তদন্তের শেষে টাকার এই পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছে ইডি। এই মামলার তদন্তে নেমে ইতিমধ্যেই ২২ কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করেছে ইডি।

ইডি সূত্রে আগেই জানা গিয়েছিল, রেশন দুর্নীতির টাকা অন্য খাতে বিনিয়োগ করতে কেবল নিজের স্ত্রী-কন্যাই নন, শ্যালক এবং শাশুড়িকেও ব্যবহার করেছিলেন প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। রেশন বণ্টন দুর্নীতি মামলায় অবৈধ উপায়ে পাওয়া টাকাকে বৈধ করতে জ্যোতিপ্রিয় ভুয়ো সংস্থা খুলেছিলেন বলেও দাবি করে ইডি। এই সংস্থাগুলির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন জ্যোতিপ্রিয়-‘ঘনিষ্ঠ’ মিল মালিক, অধুনা ইডির হাতে ধৃত বাকিবুরও।

কীভাবে রেশনের টাকা ঘুরপথে বেহাত হয়েছিল, আদালতে জমা দেওয়া চার্জশিটে তার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে বলে ইডি সূত্রের দাবি।  তদন্তে নেমে ইডি জানতে পেরেছে, মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় নিজে পাঁচটি কোম্পানির ডিরেক্টর অর্থাৎ মালিক ছিলেন। একইভাবে মন্ত্রী ঘনিষ্ট রেশন ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমানও পাঁচটি কোম্পানির মালিক।

রেশন দুর্নীতি মামলায় মঙ্গলবারই আদালতে প্রথম চার্জশিট পেশ করেছে তদন্তকারী সংস্থা। কীভাবে রেশনের টাকা ঘুরপথে বিভিন্নজনের হাতে পৌঁছত, তাতে কারা কারা জড়িত, চার্জশিটে এসবেরই বিস্তারিত উল্লেখ করেছেন তদন্তকারীরা।

সূত্রের খবর, রেশনে প্রায় তিরিশ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। আর কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সেই অঙ্কের খোঁজ পেয়েছে। জ্যোতিপ্রিয়র মদতেই বাকিবুরের দুর্নীতি দিনকেদিন বেড়ে গিয়েছে। এমনকী দুর্নীতির টাকা উপার্জন করে বাকিবুর সেই টাকা ঘুরপথে মন্ত্রীকে পাঠিয়েছেন, এমন বিস্ফোরক তথ্যও উল্লেখ করেছে ইডি।

পুরনিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে নেমে রেশন বণ্টন দুর্নীতির কথা জানতে পারেন গোয়েন্দারা। তারপর তদন্তে নেমে উঠে আসে চাল-আটা কলের মালিক বাকিবুর রহমানের নাম। তাঁকে গ্রেফতারের কয়েকদিনের মধ্যেই ইডির হেজাফতে আসেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। এই দু’জনকে জেরা করতে উঠে আসে রেশন দুর্নীতির একের পর এক  তথ্য। গোয়েন্দাদের কাছে মন্ত্রী স্বীকার করেন, বাকিবুর রহমানের কাছ থেকে তিনি ৯ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here