দেবব্রত সেনগুপ্ত, কলকাতা: আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রাক্কালে প্রেস ইনফর্মেশন ব্যুরোর (PIB) উদ্যোগে কলকাতা প্রেসক্লাবে উপস্থিত হলেন স্বনামধন্যা চারজন কৃতি নারী। নারী শক্তির প্রকৃত মর্যাদা এবং কন্যা সন্তানের যথাযথ লালন পালন, নারী জাতির সমস্যা এবং তা সম্ভাব্য সমাধান সকল বিষয়েই উঠে আসলো তাদের বক্তব্যে । কৃতি নারীরাই আরো বহু নারীকে বিশেষ প্রযত্নের মাধ্যমে উপরের স্তরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে বিশেষ জোর দেন তারা।

তাদের সাথে মঞ্চ আলোকিত করে উপস্থিত থাকলেন, ইন্ডিয়ান ইনফরমেশন সার্ভিস এর ১৯৯৮ ব্যাচের আধিকারিক- শ্রী ভূপেন্দ্র কাইন্থোলা। তিনি বর্তমানে কলকাতা পিআইবি কার্যালয়ের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের পূর্বাঞ্চলীয় মহা নির্দেশক। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা সুচারু দায়িত্বে তাকে দেখা গেল।

প্রথমে বক্তব্য রাখলেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ কলেরা অ্যান্ড ইনটারিক ডিজিজেস এর ডাইরেক্টর ডক্টর শান্তা দত্ত। ডক্টর দত্ত একটি কন্যা সন্তানের লালন পালনের গুরুত্ব , তার সঠিক বিকাশ, এবং বিশেষ করে আর্থিকভাবে এবং সামাজিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার বিষয়ে বিশেষ জোর দিলেন। তিনি তার জীবনের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে নারীর উন্নতির পথপ্রদর্শন করলেন। এছাড়াও একজন নারীর যে সমস্যা তা নিঃসংকোচে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের ফলপ্রসু প্রয়াসের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বিশেষ জোর দিলেন ডঃ দত্ত।

দ্বিতীয় বক্তা ছিলেন জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার ডাইরেক্টর ডক্টর ধৃতি ব্যানার্জি। ডক্টর ব্যানার্জি রবীন্দ্রনাথের কবিতার লাইন ” চিত্ত যেথা ভয়শূন্য উচ্চ যেথা শির” উল্লেখ করে বললেন ভয়ের কারণে নারীকে যেন নতমস্তক হতে না হয়। তিনি লিঙ্গবৈশাণের সমস্যা সম্পর্কে আলোকপাত করলেন। তার সংস্থাতে তিনি একশো বছরের মধ্যে প্রথম ডিরেক্টর- এই কথার মাধ্যমে বুঝিয়ে দিলেন বিগত দিনে নারী কত পিছিয়ে থেকেছে সামাজিক প্রেক্ষাপটের কারণে। নারী হওয়ার কারণে একটা আলাদা লড়াই করে তবেই তাকে সামাজিক প্রতিষ্ঠার জায়গায় আসতে হয়।

এক্ষেত্রে নারীকেই তিনি আরো অনেক নারীকে হাত ধরে তুলে নিয়ে আসার মাধ্যমে উন্নয়নের পথ দেখানোর কথা উল্লেখ করেছেন। ডক্টর ব্যানার্জি শিক্ষা ক্ষেত্রে স্তরে স্তরে ছাত্রী সংখ্যা কমে যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন। যত উচ্চশিক্ষা তত যেন ছাত্রী সংখ্যা কমিয়ে আসে শিক্ষা ক্ষেত্রে। এর প্রতিকারের জন্য তিনি বিশেষ জোর দিলেন।

সাঁতার জগতে উল্লেখযোগ্য কৃতি সাঁতারু তাহরিনা নাসরিন। উলুবেড়িয়ার নিমদীঘির  সাধারণ পরিবারের মেয়ে নাসরিন জিব্রাল্টার প্রণালী জয় করেন গত বছর। মাত্র চার ঘন্টা ২৩ মিনিটে ১৫.১ কিলোমিটার জলপথ পার করেন এই কৃতি সাঁতারু। ইতিপূর্বে ইংলিশ চ্যানেল থেকে শুরু করে আরো অনেক কৃতিত্বের পালক যুক্ত আছে তার সাঁতারু জীবনে। নাসরিন জানালেন একটি অতি সাধারণ পরিবারের মেয়ে যখন জীবনে ব্যতিক্রমী কোন পথ অবলম্বন করে উল্লেখযোগ্য কিছু করে তখন সামাজিক সমস্যাকে অতিক্রম করেই করতে হয়। একটি সাধারণ পরিবারের মেয়েকে সামাজিক লড়াইয়ের মুখে পড়তে হয় প্রথমেই।

এক্ষেত্রে তার বাবা মায়ের সহযোগিতার কথা তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন। তার কথায় ঘরে-বাইরে মেয়েদেরকে সমানভাবে কাজ করতে হয় । এছাড়াও সামাজিক সমালোচনা এবং অন্যান্য সমস্যা অতিক্রম করতে হয় তাকে এবং তার পরিবারকে। বহু মেয়ে এই তাকে চক্রে আটকে থাকে তাদের প্রতিভা সঠিক দিশা বা সম্মান পায় না।

হেলথ প্রমোশন এন্ড এডুকেশন দপ্তরের পূর্ববর্তী ডিন, ডাইরেক্টর প্রফেসর এবং দপ্তরের প্রধান ডক্টর মধুমিতা দুবে। ডক্টর দুবের মতে কোন মানুষ জন্ম লগ্নে পুরুষ বা মহিলা হন না। প্রথমে এসে থাকে এক শিশু। সমাজ তাকে লিঙ্গভেদ এবং আচরণের বৈষম্য তৈরি করে দেয়। ডক্টর দূরে লিঙ্গ নির্বিশেষে সন্তানকে কৃতি এবং বৃহত্তর জগতে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাবা মায়ের বিশেষ ভূমিকার কথা উল্লেখ করেছেন।

এছাড়া আদর্শ মানুষের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেছেন তিনি।মেয়েরা অনেক সময়ই নিজেদের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু চাইতে সংকোচ বোধ করে এবং যেকোনো সমস্যার সাথে মানিয়ে নিতে নিতে অনেকটাই পিছিয়ে পড়ে- এই সমস্যার দিকে তিনি আলোকপাত করেন এবং এর সমাধানের উল্লেখ করেন।

নারী দিবসের উপলক্ষে প্রদীপ প্রজ্বলন করেন চারজন সেই সঙ্গে থাকলেন ভূপেন্দ্র কাইন্থোলা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here