কর্মবিরতির জেরে পেট্রাপোল বন্দরে ব্যাহত সীমান্ত বাণিজ্য৷

পার্থ সারথি নন্দী,পেট্রাপোল:বিএসএফ ও পেট্রাপোল ল্যান্ড পোর্ট অথরিটির হঠকারী সিদ্ধান্তে সমস্যায় পোর্টের ব্যবসায়ীরা, চেকিং এর নামে অত্যাচার করছে বিএসএফ। তার প্রতিবাদে সোমবার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি শুরু করে দিল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশন ,বনগাঁ গুডস ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন, বনগাঁ নব মালিক সমিতি, বনগাঁ মোটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, সীমান্ত পরিবহন মালিক সমিতি ও শ্রমিক সংগঠন সহ একাধিক সংগঠন ৷

অনির্দিষ্টকালের জন্য রপ্তানী বানিজ্য বন্ধে সামিল পেট্রাপোল সীমান্তে পরিবহণের সঙ্গে যুক্ত কয়েক হাজার শ্রমিকক।সোমবার এই সিদ্ধান্তের কথা যৌথ ভাবে ঘোষণা করা হয়েছে পেট্রাপোল বন্দরের সঙ্গে যুক্ত সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে৷

আজ সোমবার (৩১ জানুয়ারি) থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে ভারত-বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক পেট্রাপোল- বেনাপোল স্থলবন্দর। কেন এই সিদ্ধান্ত?

ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে পেট্রাপোল বন্দর ব্যবহারকারী ৮ টি সংগঠন। পেট্রাপোল সেন্ট্রাল পার্কিং (ল্যান্ড পোর্ট)-এর নতুন ম্যানেজার কমলেশ সাইনীর খামখেয়ালি সিদ্ধান্তের কারণে অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে পরিবহনের সঙ্গে যুক্ত কর্মীসহ বন্দর ব্যবহারকারীদের। সংগঠনের পক্ষ থেকে সংবাদমাধ্যমকে জানানো হয়েছে,করোনার আবহে এমনিতেই তাদের আয় কমে এসেছে। নতুন ম্যানেজার তাঁদের সঙ্গে কথা না বলে নতুন নতুন আইন তৈরি করছে। শুধু তাই নয়, নতুন ল্যান্ড পোর্ট ম্যানেজারের বিরুদ্ধে পরিবহন কর্মীরা অভিযোগ এনেছেন যে, বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) কে কাজে লাগিয়ে তাঁদের কে পোর্টের ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। এসবের প্রতিবাদে এবং শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবিকে সামনে রেখে এই কর্মবিরতি শুরু করেছেন ৮টি সংগঠনের কয়েক হাজার শ্রমিক৷ সোমবার এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছেন পেট্রাপোল সীমান্তে পরিবহনের সঙ্গে যুক্ত কর্মীরাসহ বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন সংগঠন।


আমদানি-রপ্তানি কাজে নানা হয়রানি বন্ধসহ নতুন ল্যান্ড পোর্ট ম্যানেজার কমলেশ সাইনীর প্রত্যাহারের দাবিতে গত এক সপ্তাহ ধরে দফায় দফায় বৈঠক ও বিক্ষোভ সমাবেশ করছেন তাঁরা। বনগাঁ শহর এবং সীমান্ত এলাকায় শনি ও রবিবার তারা মাইকিং করে সকলকে কাজ করা থেকে বিরত থাকার আহবান জানান। সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত তাঁদের দাবি মেনে নেওয়া না হলে এদিন সকাল থেকে পেট্রাপোল বন্দরে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বন্দর ব্যবহারকারীরা।

এ সময় বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে।এই ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বনগাঁ গুডস ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন, বনগাঁ ট্রাক মালিক সমিতি, পেট্রাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টস স্টাফ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন ও বনগাঁ মহকুমা ট্রাক শ্রমিক ইউনয়ন। 

স্থানীয় এক রপ্তানিকারক বলেন, পার্কিংয়ে তাঁদের লোকজনকে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। যার ফলে কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে আমদানি এবং রপ্তানিও বন্ধ করা ছাড়া বিকল্প কোনো রাস্তা নেই। একটি গাড়ি বাংলাদেশে ঢোকার সময় অনেক রকম কাজ আছে। সেই কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ল্যান্ড পোর্ট ম্যানেজার সেটা বন্ধ করেছেন। তাঁর নির্দেশে বিএসএফ শ্রমিকদের ঢুকতে দিচ্ছে না।


বনগাঁ গুডস ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খোকন পাল অভিযোগ করে বলেন, ‘পেট্রাপোল স্থল বন্দরের বর্তমান ম্যানেজার কমলেশ সাইনী পরিবহন সংগঠনগুলির সঙ্গে কোনওরকম আলোচনা ছাড়াই নতুন নতুন নিয়ম চালু করছেন। এর ফলে রপ্তানী বানিজ্যে ক্ষতি হচ্ছে। আমাদের দাবি যতদিন না মানা হচ্ছে ততদিন অর্থাৎ অনির্দিষ্টকালের জন্য এই সীমান্ত দিয়ে বানিজ্য বন্ধ রাখা হবে।’‌ বেশকিছু দাবিতে সোমবার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্দরে আমদানি-রপ্তানি কাজ বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয় সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে৷

তাঁদের দাবি, নতুন কার্ড তৈরি না হওয়া পর্যন্ত পুরোনো নিয়মে তাদের আইসিপিতে প্রবেশ করতে দেওয়া হোক। যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের দাবি মানা হবে না ততক্ষণ পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলেও হুমকি দিয়েছেন।

পেট্রাপোল এক্সপোর্ট এন্ড ইমপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক প্রদীপ দে বলেন, আমদানি-রপ্তানির কাজ চালু রেখে সমস্যা সমাধানের পক্ষ্যে তাঁদের সংগঠন৷ বন্দর অভ্যন্তরে প্রবেশসহ নানা হয়রানি বন্ধ হোক এটা তাঁদের ও দাবি তবে কাজ বন্ধ রেখে ব্যাবসার ক্ষতি করে কোন উন্নয়ন হবে বলে তাঁরা মনে করেননা। শ্রমিকদের দাবি সঠিক তবে তাঁদেরকে প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে তাঁদের প্রকৃত সমস্যা সানালে এর সমাধানসূত্র বেড়িয়ে আসবে বলেও জানান প্রদীব বাবু৷

পেট্রাপোল স্থল বন্দরের বর্তমান ম্যানেজার কমলেশ সাইনী সোমবার সাংবাদিকদেরকে সমস্ত সংগঠনের উদ্যেশ্যে জানান সীমান্তের শ্রমিক সংগঠনের কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিদের সঙ্গে তিনি এবং বিএসএফ এর উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বৈঠকের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করতে চাইছে, আমআমদানি-রপ্তানি কাজে যাতে কোন বাঁধা না আসে সেই দিকে নজর দেওয়ার কথা বলেন , পাশাপাশি জানান বিএসএফ এবং কাস্টমস যৌথভাবে কিছু সতর্কতা মুলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে তবে সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতামত বিনিময় করে সীমান্ত বাণিজ্যে গতি আনার কথা বলেন৷

সূত্রের খবর,বন্দরের ভিতরে প্রবেশ করতে না পারায় আমদানি-রপ্তানি কাজে জড়িতদের নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এসব সমস্যার কারণে গত সপ্তাহে দু’দিন ৪ ঘন্টা করে বাংলাদেশে পণ্য রপ্তানি বন্ধ রাখা হয়েছিল। ব্যবসায়ীসহ পরিবহন কর্মিদের দাবি নতুন কার্ড তৈরি না হওয়া পর্যন্ত পূর্বের নিয়মে তাঁদেরকে আইসিপিতে প্রবেশ করতে দিতে হবে। তাদের দাবি না মানা পর্যন্ত এ আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনগুলি৷


পেট্রাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টস এন্ড স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী জানান, কভিড ১৯-এর কারণে তাঁদের ব্যবসা-বাণিজ্যে আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। আগে যেখানে ২৪ ঘন্টায় ৭০০ থেকে সাড়ে ৭৫০ পণ্যবাহী ট্রাক বাংলাদেশে রপ্তানি হতো। করোনার কারণে এখন মাত্র সাড়ে ৩ ০০ ট্রাক পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। এরপর নতুন ল্যান্ড পোর্ট ম্যানেজার ব্যবসায়ীদের কোনো কথা না বলে বন্দর এলাকায় প্রবেশের ওপর নতুন নতুন আইন তৈরি করে আমাদের বাণিজ্যে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। নতুন ম্যানেজার বিএসএফকে কাজে লাগিয়ে পরিবহন কর্মিদের বন্দরের ভিতরে ঢুকতে দিচ্ছেনা। পরিবহন কাজে জড়িত কর্মিদের আইসিপিতে প্রবেশের মুখে বিএসএফের বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে। যা এর আগে কখনো দেখেনি কয়েক হাজার শ্রমিক ও সীমান্তের বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত ব্যাবসায়ীরা৷ এর সমাধান সূত্র বার করে শীঘ্র ব্যবস্থা না নিলে এশিযার বৃহত্তম পেট্রাপোল স্থল বন্দর মুখ থুবড়ে পড়বে৷

গত এক সপ্তাহ ধরে তারা পেট্রাপোল সেন্ট্রাল পার্কিং-এর সামনে বিক্ষোভ করেছেন ম্যানেজারের নানা হয়রানির বিরুদ্ধে। পণ্য খালাস এবং বোঝাই করা যাদের দায়িত্ব তাদের প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তার ফলে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে। এর জন্য সরকারি আধিকারিকদের অযোগ্যতাই দায়ী।


ভারতের স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে আইসিপি-পেট্রাপোলে একাধিক চোরাচালানের ঘটনা ঘটেছে সেই সব নজরে আসতেই, বিএসএফ তাদের নজরদারি এবং সতর্কতা ব্যবস্থা আরো কড়াকড়ি করার জন্য বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে। সম্প্রতি দেশের নিরাপত্তার প্রশ্নে পরিবহন কর্মীদের সেখানে যাওয়ার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

বিএসএফ সাফ জানিয়েছে, জাল ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী চালককে কোনোভাবেই বাংলাদেশে যেতে দেওয়া যাবে না কারণ এই ধরনের চালকরা জাল ড্রাইভিং লাইসেন্সের ভিত্তিতে শুল্ক বিভাগ থেকে গাড়ির পাস নেয়, যার ভিত্তিতে বিএসএফ ট্রাকগুলিকে বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমতি দেয়। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যের সুষ্ঠু পরিচালনা নিশ্চিত করার জন্য, বিএসএফ বনগাঁ ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনকে একটি স্থায়ী অপারেটিং পদ্ধতি অনুসরণ করতে বলেছে যাতে দেশের নিরাপত্তা এবং স্বার্থের সঙ্গে আপস করা না হয়। এখন দেখার বন্ধের জেরে প্রশাসন কতটা নড়েচড়ে বসে এবং শ্রমিক সংগঠনের দাবি মেনে কবে স্বাভাবিক হয় পেট্রাপোল বন্দরের আমদানি-রপ্তানির কাজ৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here