দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ  রাজ্যে আরও তিন’জন নতুন করে ওমিক্রন আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। এদের মধ্যে এক জন ওমিক্রন পজিটিভ ওড়িশা থেকে ফিরেছিলেন। বাকি যে দু’ জনের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে, তাঁরা পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ থেকে রাজ্যে প্রবেশ করেছিলেন। এর ফলে রাজ্যে আপাতত সক্রিয় ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫।

রাজ্যে ক্রমশই চওড়া হচ্ছে করোনার থাবা। নতুন করে বাংলার কোভিড গ্রাফ চিন্তায় ফেলছে বিশেষজ্ঞদের। উদ্বেগ বাড়াচ্ছে ওমিক্রন (Omicron) আক্রান্তের সংখ্যাও। গত ২৪ ঘণ্টায় লম্বা লাফ দিয়েছে দৈনিক করোনা পরিসংখ্যান। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের শনিবারের বুলেটিন জানাচ্ছে, একদিনে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪৫১২ জন। যা গতদিনের তুলনায় প্রায় এক হাজার বেশি। একদিনে মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের এবং সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১৯১৩ জন। এই মুহূর্তে রাজ্যে অ্যাক্টিভ কেসের সংখ্যা ২৫৯০। বেড়েছে পজিটিভিটি রেটও। রাজ্যের বর্তমান পজিটিভিটি রেট ১২.০২ শতাংশ।

উদ্ভুত করোনা পরিস্থিত নিয়ে ইতিমধ্যে একে পর এক বৈঠক করতে শুরু করেছে প্রশাসন। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারির শেষে রাজ্যজুড়ে পুর নির্বাচন রয়েছে। সূত্রের খবর,  কোভিড পরিস্থিতিতে আগামী পুর নিগমগুলির নির্বাচন নিয়ে রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে বসছে নির্বাচন কমিশন। আগামী ৪ জানুয়ারি বৈঠক করবেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার। মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, ডিজি,  স্বাস্থ্য সচিবকে বৈঠকে ডেকেছেন কমিশনার। সূত্রের মতে,  ৩ জানুয়ারি কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে নবান্ন পর্যালোচনা বৈঠকে কী সিদ্ধান্ত নেয়, তা দেখে নিয়ে ৪ পুর নিগমের ভোট নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে  চাইছে কমিশন।

শহরের করোনা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। গত ২৪ ঘণ্টায় কেবলমাত্র কলকাতা শহরেই আক্রান্ত হয়েছেন ২৩৯৮ জন। দু’জন করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুও হয়েছে শহরে। উত্তরোত্তর এই সংখ্যা বেড়ে চলায় উদ্বিগ্ন চিকিৎসকমহল। বিশেষজ্ঞদের মতে শহরের দৈনিক গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার পেছনে রয়েছে অসতেচন জনতার লাগামছাড়া ভিড়। তবে কি উৎসবের মরশুমের জমায়েতের জেরেই মাশুল গুনতে হচ্ছে শহরবাসীকে?

ইতিমধ্যেই রাজ্য বাতিল করেছে ‘দুয়ারে সরকার’ (Duare Sarkar) ও ‘স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড’ (Student Credit Card) বিলি কর্মসূচি।

পাশাপাশি, আগামী সোমবার, অর্থাৎ ৩ জানুয়ারি স্টুডেন্ট উইক (Student Week) পালনের অনুষ্ঠানও স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে। রাজ্যে উদ্ভুত করোনা পরিস্থিতির কারণেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। পরিস্থিতির উপর বিচার করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামীদিনে পরিস্থিতি বিচার করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

কলকাতা হাইকোর্ট সোমবার থেকে সমস্ত মামলার কেবল ভার্চুয়াল শুনানি করবে বলেই জানিয়েছে। তাহলে কি ফের কড়া বিধিনিষেধ আরোপ হতে চলেছে রাজ্যে? এমন প্রশ্নই এখন মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে বিভিন্ন মহলে। যদিও এই বিষয়ে এখনই সরকারের তরফে কিছু ঘোষণা করা হয়নি। বরং কোনওভাবেই রাজ্যে লকডাউন হবে না বলেই ঘোষণা করা হয়েছে। 

তবে সংক্রমণ ঠেকাতে বিধিনিষেধ কড়াকড়ি করার কথা ভাবনা-চিন্তা করা হচ্ছে বলে কিছুদিন আগেই গঙ্গাসাগর থেকে ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রয়োজনে ফের স্কুল, কলেজ বন্ধ হতে পারে এবং এলাকাভিত্তিক কনটেইনমেন্ট জোন ঘোষণা করে সংক্রমণ আটকানোর চেষ্টা করা হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন। 

আগামী ৩ জানুয়ারি থেকে ব্রিটেনের বিমান কলকাতায় নামাও বন্ধ হচ্ছে। ফলে গত মে মাসের মতো এবছরের গোড়াতেই রাজ্যে ফের কড়া বিধিনিষেধ আরোপিত হতে পারে ভেবে আশঙ্কিত ব্যবসায়ী মহল থেকে সাধারণ মানুষ। যদিও সরকারের তরফে এখনও এ বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু ঘোষণা করা হয়নি। তবে শীঘ্রই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

রাজ্যে ফের নতুন করে তিনজনের শরীরে থাবা বসিয়েছে করোনার নয়া স্ট্রেন। তার মধ্যে একজন ওডিশার বাসিন্দা। সম্প্রতি তিনি কলকাতায় আসেন এবং তাঁর কোভিড উপসর্গ থাকায় শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে তাঁর জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে ওমিক্রনের রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এছাড়াও পেট্রাপোল সীমান্ত থেকে আসা দু’জনের শরীরেও ওমিক্রন ধরা পড়ে। তার মধ্যে একজনের রিপোর্ট ইতিমধ্যেই নেগেটিভ এসে যাওয়ায় এই মুহূর্তে রাজ্যের ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫।

অন্য দিকে শেষ ২৪ ঘণ্টার থেকে আরও এক হাজার বেড়েছে রাজ্যে দৈনিক করোনা সংক্রমণের পরিমাণ। আগের ২৪ ঘণ্টার রাজ্যে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৪৫১, শনিবার প্রকাশিত স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিনে দেখা গিয়েছে সেই দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার ৫১২। বেড়ে কলকাতায় দৈনিক সংক্রমিতের সংখ্যাও। আগের ২৪ ঘণ্টায় দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৯৫৪, সেটাই শনিবারের হিসাবে বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৩৯৮। অর্থাৎ এক কথায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here