দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ “বাপ্পিদা মাঝেমধ্যেই বলতেন দু’টো গান লিখে দিও”, দেশপ্রিয় পার্কে ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে এমনই মন্তব্য করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার বাংলা গানে-কবিতায় একুশে উদযাপন হয়। এদিনের অনুষ্ঠানে প্রয়াত শিল্পীদের কথা স্মরণ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “বাংলা ভাষায় নিয়ে কথা বলতে গিয়ে খুবই খারাপ লাগে। সন্ধ্যা দি চলে গেলেন। সুচিত্রা সেন থেকে সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, মাধবী মুখোপাধ্যায়, শর্মিলা ঠাকুর সকলের কণ্ঠে তিনি গান গেয়েছেন। সংগীতের স্বর্ণযুগ ছিল সেটি। কোনওদিনও সেই দিন আর ফিরে আসবে না। কোনও বিকল্প নেই তাঁর। এখন তো কত বাদ্যযন্ত্র, প্রযুক্তি আছে। তখন তো এতকিছু ছিল না।শুধু তাঁদের গলার জোরেই তাঁরা গান গেয়েছেন। সুরের সরস্বতীকে আর ফিরে পাওয়া যায় না।”

ভাষা দিবসের বিশেষ সাজে দেখা গেল তাঁকে। গলায় এদিন এমন এক উত্তরীয় পরেছেন তিনি যেখানে রয়েছে সব ভাষা। যেন ‘সব কা সাথ’ বার্তা দিতে চাইলেন তিনি।

প্রতি বছরের মতোই এবারও ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবস উপলক্ষ্যে দেশপ্রিয় পার্কে সরকারি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বাংলার একাধিক গুণী শিল্পী ও বিদ্বজনেরা। ভাষা দিবস নিয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মমতা বলেন, ‘আমি সব ভাষাকেই সম্মান করি, ভালবাসি। তবে নিজের মাতৃভাষাকে বেশি করে ভালবাসতে হবে।‘

মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, আজকালকার ছেলেমেয়েদের বাংলা শেখায় উৎসাহ দেওয়া জরুরি। এতে বাচ্চাদের কোনও দোষ নেই। অভিভাবকদেরও বাংলা শেখানোর উদ্যোগ নিতে হবে। এরপরই তিনি বলেন নিজের উত্তরীয়র কথা। তাঁর কথায়, আমি এই যে উত্তরীয় পরে আছি, সেখানে সমস্ত রকম ভাষা আছে। সব ভাষাকেই শ্রদ্ধা করি আমি।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, একটা সময় এই বাংলায় ভাষা দিবস পালনের কোনও চল ছিল না। সেসময় আমরা সরকারে না থাকলেও দেশপ্রিয় পার্কের এই শহিদ স্মৃতিস্তম্ভ এমপি ল্যাডের টাকা দিয়ে তৈরি করে দিয়েছিলাম।

দেশপ্রিয় পার্কের অনুষ্ঠানে এদিন উপস্থিত ছিলেন প্রতুল মুখোপাধ্যায়, শুভাপ্রসন্ন ভট্টাচার্য থেকে শুরু করে একাধিক বিশিষ্টজন। প্রতুল মুখোপাধ্যায় বলেন, বাংলা ভাষা আজকালকার ছেলেমেয়েরা বলতে পারে ঠিকই, কিন্তু লিখতে পারে না। আক্ষেপ হয়।

এই বাংলা আমাদের গর্ব। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের অসুস্থতার কারণে তাঁর পরিবর্তে অনুষ্ঠানে এসেছিলেন তাঁর মেয়ে দেবলিনা। বাংলা নিয়ে তাঁর গলাতেও আক্ষেপের সুর। বললেন, আজকাল তো বাংলা ভাল করে না বলতে পারাটাই গর্বের বিষয় হয়ে উঠেছে। বাংলা ভাষাটা আমাদের জানতে হবে। শুভাপ্রসন্ন ভট্টাচার্য বলেন, বাবাকে আজকাল অনেকেই ‘ড্যাড’, ‘ড্যাডি’ ইত্যাদি নানা নামে ডাকছে। বাবা-মাকে তো বাবা-মা বলেই ডাকা উচিত।

সবমিলিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের দিন মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে বাংলার শিল্পী সাহিত্যিকদের মুখে আক্ষেপ শোনা গেল ভাষা নিয়ে। মুখ্যমন্ত্রী দিলেন সব ভাষাভাষির সঙ্গে থাকার বার্তা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here