দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ শনিবার দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে খুশির ইদ । রেড রোডে ইদের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যা জানিয়ে দিলেন, বাংলায় কোনও কোনও গদ্দার বিজেপির থেকে টাকা নিয়ে সংখ্যালঘু ভোট ভাগ করার চেষ্টা করছে। কিন্তু তা হতে দেব না।

২০০৮ সাল থেকেই বাংলার সংখ্যালঘু ভোট বামেদের থেকে তৃণমূলের দিকে সরতে শুরু করেছিল। তারপর যত ভোট হয়েছে দেখা গিয়েছে, সেই ভোট ঢেলে গিয়ে পড়েছে তৃণমূলের দিকে। সম্প্রতি সাগরদিঘি উপনির্বাচনে শাসকদলের হারের পর রাজনৈতিক মহলে এই চর্চা শুরু হয়েছিল, তাহলে কি তৃণমূলের দিক থেকে মুসলিম ভোট সরে যাচ্ছে? সেই প্রেক্ষাপটে শনিবার রেড রোডে ইদের অনুষ্ঠানে তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এদিন মমতা বলেন, ‘কেউ কেউ বিজেপির থেকে টাকা নিয়ে ভাবছে মুসলমান ভোট ভেঙে দেবে। কিন্তু আমরা তা হতে দেব না।’ মুখ্যমন্ত্রী বুঝিয়ে দিয়েছেন, বিজেপির বিরুদ্ধে যদি কেউ লড়তে পারে, সংখ্যালঘুদের যদি সুরক্ষা দিতে পারে তাহলে সেটা তিনি এবং তাঁর দল।

পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, মমতা এদিন সংখ্যালঘু ভোট ভাগের কথা বলতে গিয়ে আইএসএফ, সিপিএম, কংগ্রেসকেই ইঙ্গিত করতে চেয়েছেন।

যদিও এ নিয়ে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘একটা উৎসবে গিয়ে কেউ যদি এরকম ভোটের কথা বলেন তাহলে বুঝতে হবে তিনি ভয় পেয়েছেন।’ তাঁর কথায়, ‘মুখ্যমন্ত্রীর মাথা কাজ করছে না। তাই ইদের অনুষ্ঠানকেও ভোটের মঞ্চ বানিয়ে ছাড়লেন। সেইসঙ্গে বুঝিয়ে দিলেন বাংলার মুসলমানরা তাঁর কাছে শুধু ভোটার। মানুষ নন।’

দেশের সংবিধান এবং ইতিহাস বদলানোর অভিযোগ এনেও এদিন কেন্দ্রের সরকারের বিরুদ্ধে সরব হন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘লোকতন্ত্র চলে গেলে সব চলে যায়। আজ দেশের সংবিধান এবং ইতিহাস বদলে যাচ্ছে। যা খুশি করছে। তার পর এনআরসি আনার কথা বলেছে। কিন্তু আমি ও সব কিছু হতে দেব না। আমি মাথা ঝোঁকাব না। ভরসা রাখুন। আমরা লড়াই করব, ভয় পাব না।’’

মমতা এদিন আরও বলেন,‘কোনও কোনও গদ্দার পার্টি অশান্তি লাগাতে চাইছে। কিন্তু আমরা তা হতে দেব না। আপনারা শান্তিতে থাকুন। ভয় পাবেন না। আমরা আছি।’ সেইসঙ্গে আগামী বছর লোকসভা ভোটে বিজেপি সরকারকে উৎখাত করারও ডাক দেন ইদের অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে। সুর চড়িয়ে বলেন, ‘‘বিজেপি বিভেদের রাজনীতি করে। আর এক বছর পর লোকসভা নির্বাচন। ঠিক হয়ে যাবে সরকারে কে থাকবে। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে সবাই এসে ভোট দেবেন।’’

একই সঙ্গে রেড রোডের অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে সকলকে এক জোট হওয়ার বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বলে রাখলেন, সকলে এক জোট হলে কেন্দ্রের গদি উল্টে যেতে পারে। তাঁর কথায়, ‘‘তাঁরাই মানুষ, যাঁরা মানবিক। যাঁরা সবাইকে নিয়ে চলেন, তাঁরাই দেশের নেতা। এ রকম ভাঙচুর করে দেশের নেতা হওয়া যায় না। আমি প্রার্থনা করব যেন এই দাদাগিরি আটকে দেওয়া হয়। আমরা এক সঙ্গে হলে চেয়ার নড়ে যাবে।’’ মমতা যখন রেড রোডে একথা বলছেন তখন হাততালিতে ফেটে পড়ে রেড রোড।

এদিনের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এদিনও কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে আর্থিক বঞ্চনা এবং এজেন্সির অতিসক্রিয়তা নিয়ে সরব হন মমতা। তাঁর কথায়, ‘আমরা টাকা পাওয়ার জন্য লড়ছি, এজেন্সির বিরুদ্ধে লড়ছি, এই লড়াই চলবে। কিন্তু মাথা ঝোঁকাব না।’ গরম থেকে বাঁচতে মমতা পরামর্শ দেন, ‘বেশি করে ওআরএস খান, ঠান্ডা জল খান।’

উল্লেখ্য, সাগরদিঘি উপ নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর সংখ্যালঘু ভোট নিয়ে বিশেষ তৎপর হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিষয়টা দেখার জন্য দায়িত্বও দিয়েছেন দলের নেতাদের ওপর।

সাগরদিঘি উপ নির্বাচনে তৃণমূল হেরে যাওয়ার পর রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছিলেন সংখ্যালঘু ভোট একটা বড় ফ্যাক্টর হয়েছে এক্ষেত্রে। সেই মমতা মমতা তাঁর দলের নেতাদের বলেছিলেন, সংখ্যালঘু ভোট আমাদের থেকে সরে যায়নি। আমরা ১২ বছরে সংখ্যালঘুদের জন্য অনেক কাজ করেছি। তাহলে এমন একটা ফলাফল হল কেন? সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী, সাবিনা ইয়াসমিন, জাকির হোসেন, ফিরহাদ হাকিম ও শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে বিষয়টা দেখার দায়িত্বও দিয়েছিলেন তিনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here