দেশের সময়: বাংলায় তৃণমূলকে আক্রমণ করে জোট হবে না। কংগ্রেসকে কড়া বার্তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পাল্টা তোপ দেগেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা লোকসভার বিরোধী দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী। তাঁর আক্রমণ, হাওয়া ঘুরছে দেখে ঝাঁকের কই হয়ে দিদি এখন কংগ্রেসের পাশে ভিড়তে চেষ্টা করছেন। কংগ্রেস নেতা তথা সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্যের বক্তব্য, বাংলায় যদি সুশাসন থাকত, তাহলে তো আক্রমণ করতে হত না।

আগামী বছর লোকসভা নির্বাচন। মোদি-অমিত শাহদের গদি থেকে নামাতে বিরোধী জোটের সলতে পাকানোর কাজ শুরু হয়েছে। মূলত এই উদ্যোগের কাণ্ডারী বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। ইতিমধ্যেই তিনি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন, মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবসেনার উদ্ধব ঠাকরে সহ অনেকের সঙ্গেই বৈঠক করেছেন। কিন্তু কর্ণাটক ভোটের ফল জোট গঠনের এই প্রেক্ষাপটকে অনেকটাই বদলে দিয়েছে। বিজেপিকে হটানোর লড়াইয়ে অত্যন্ত সঙ্গতভাবেই নেতৃত্বের দাবিদার হয়ে দাঁড়িয়েছে কগ্রেস। দাক্ষিণাত্য থেকে বিজেপিকে সাফ করে দেওয়ার পর গোটা দেশে চাঙ্গা কংগ্রেস শিবির। ফলে কংগ্রেসকে ‘দুধেভাতে’ করে রেখে আদৌও যে এখন আর বিরোধী জোট গড়া সম্ভব নয়, তা বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন অ-বিজেপি দলগুলি।

আর ঠিক এই পরিস্থিতিতেই কংগ্রেসকে কার্যত কড়া বার্তা দিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। তিনি সাফ বলেছেন, কংগ্রেসকে সমর্থন করতে রাজি। কিন্তু একটা জিনিস তাদের মনে রাখতে হবে, সর্বত্র ‘দাদাগিরি’ চলবে না। যে দল যেখানে শক্তিশালী, সেখানে তাদেরকে জায়গা ছেড়ে দিতে হবে। এরপরই তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, জোটের প্রশ্নে তিনি কংগ্রেসকে সমর্থন দেবেন। আর এদিকে বাংলায় প্রতিদিন কংগ্রেস নেতারা তৃণমূল ও তাঁর সরকারকে আক্রমণ করে চলবেন, এমনটা মোটেই হতে পারে না।

ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, জোটের প্রশ্নে মমতা বল ঠেলে দিয়েছেন সোনিয়া, রাহুল গান্ধীর কোর্টেই। এখন তাঁরা কি আদৌও পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলকে তাঁদের ‘বন্ধু’ বলে মেনে নেবেন? সেক্ষেত্রে অধীরের গোঁসা হতে পারে। তা হলে কি শেষমেশ তৃণমূলকে ছাড়াই জাতীয় স্তরে জোট হবে? কারণ, কংগ্রেস যদি মমতার দেওয়া শর্ত মেনে তৃণমূলকে লাগাতার আক্রমণের রাস্তা থেকে সরে না আসে, তা হলে মমতা যে আদৌও ওই জোটে থাকবেন না, তা একপ্রকার স্পষ্ট। সেক্ষেত্রে কি তৃণমূলকে ছাড়াই জোট হবে? জাতীয় রাজনীতিতে আবারও ‘একা’ হয়ে যাবেন মমতা? এমন প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহলে।

ওয়াকিবহাল মহলের অবশ্য বক্তব্য, কর্ণাটকে সরকার গঠন এবং তার পরবর্তী সময়ের উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু হয় না। প্রতিদিনই পরিস্থিতির বদল ঘটতে পারে। ইতিমধ্যেই কানাঘুষো শুরু হয়ে গিয়েছে, কর্ণাটকে মুখ্যমন্ত্রী বাছাই নিয়ে কংগ্রেসের অন্দরে একটা ঠান্ডা লড়াই শুরু হয়েছে। দিল্লি যাননি কর্ণাটকে কংগ্রেসের প্রদেশ সভাপতি তথা এবারের ঐতিহাসিক জয়ের অন্যতম কাণ্ডারী ডি কে শিবকুমার। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার অন্যতম দাবিদার তিনি। তাঁকে বাদ দিয়ে সিদ্দারামাইয়াকে মুখ্যমন্ত্রী করা হলে দলের অন্দরে চাপা অসন্তোষ তৈরি হতে পারে। অথচ তিনিও জনপ্রিয়তায় মোটেই কম কিছু নন। সেক্ষেত্রে দলের ভাঙন ঠেকাতে কংগ্রেস কি শেষ পর্যন্ত কর্ণাটকে ৫০-৫০ ফর্মুলায় মুখ্যমন্ত্রী বাছাই করবে? সেক্ষেত্রে প্রথম আড়াই বছর সিদ্দারামাইয়া মুখ্যমন্ত্রী থাকতে পারেন। পরের আড়াই বছর মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন ডি কে শিবকুমার।

এদিকে, বঙ্গের জোট ইস্যুতে বামেদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। বিজেপিকে হঠাতে বামেরা যদি জাতীয় স্তরে বিরোধী জোটে শামিল হয়, সেক্ষেত্রে বাংলায় তাদের বাংলায় তাদের ভূমিকা কী হবে, সেটাও বড় প্রশ্ন। কারণ, এমনিতেই এরাজ্যে এমনিতেই সিপিএম-কংগ্রেসের একটা অলিখিত জোট রয়ে গিয়েছে, আর সেই জোট মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের বিরুদ্ধে প্রার্থী দেবে, এটাই স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে এখানে যদি তৃণমূল বনাম কংগ্রেস-সিপিএম জোটের লড়াই হয়, তা হলে কি আদৌও জাতীয় স্তরে সেই কংগ্রেস ও সিপিএমের সঙ্গে তৃণমূল জোট গড়তে রাজি হবে, রাজনৈতিক মহলে এখন ঘুরপাক খাচ্ছে জটিল এই সমীকরণই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here