দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ কোনও সংবাদমাধ্যম মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোভিড হওয়া নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক খবর পরিবেশন করেছিল। মুখ্যমন্ত্রী পরপর কয়েকদিন নবান্নে আসেননি বলে সংশ্লিষ্ট সংবাদমাধ্যমগুলি সেই জল্পনা ভাসিয়ে দিয়েছিল। বৃহস্পতিবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে বিরক্তির সঙ্গেই মুখ্যমন্ত্রী জানালেন, দায়িত্ব নিয়ে খবর করুন। কেউ কেউ আমার সম্পর্কে লিখে দিলেন। আমার বাড়িতে পাঁচটা ফোন চলে এল। আরে আমার কোভিড হলে তো জানতেই পারতেন। এটা লুকনোর কিছু আছে নাকি! সারা দুনিয়ার লোকের কোভিড হচ্ছে।

কেন পরপর কয়েকদিন মুখ্যমন্ত্রী নবান্নে আসতে পারেননি এদিন তাও জানান তিনি। মমতা বলেন, “আমার দু’জন গাড়ির ড্রাইভার কোভিড পজিটিভ হয়ে গিয়েছেন। আমি আসবটা কী করে! সবটা বুঝতে হবে তো!”
মুখ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলও কোভিড আক্রান্ত। ৩১ ডিসেম্বর কলকাতার নগরপাল হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন বিনীত। এরমধ্যেই তিনি কোভিড আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। এমনিতেই লালবাজারে কোভিড সংক্রমণের ছড়াছড়ি। এদিন মুখ্যমন্ত্রী জানালেন খোদ সিপিও আক্রান্ত।

প্রতিদিনই লাফিয়ে বাংলায় বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। রাজ্য করোনা তৃতীয় ঢেউ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে যদি করোনা সংক্রমণ আরও ভয়াবহ ভাবে বাড়ে, তাহলে আরও কড়া বিধিনিষেধের দিকে এগোতে পারে রাজ্য, এমনই ইঙ্গিত দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । এদিন তিনি বলেন, ”আমি হাতজোড় করে বলব মাস্কটা পরুন। গত এক সপ্তাহে করোনা বেড়েছে। আরো বাড়ছে যদি কোভিডটা আরো বাড়ে, তাহলে কড়া বিধিনিষেধ করব। প্রশাসন জোর করে, অ্যারেস্ট করে কাউকে মাস্ক পরাতে পারে না। এটা মানুষ কেই সচেতন হতে হবে।”

ওমিক্রন নিয়ে ভয় না পেয়ে সতর্ক থাকুন, করোনা আবহে সাংবাদিক বৈঠক করে রাজ্যবাসীকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘কোভিডের জন্য ১৯৪টি হাসপাতাল আমরা চিহ্নিত করেছি। করোনা আক্রান্ত সকলের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। মারাত্মক নয়, তবে খুব দ্রুত ছড়াচ্ছে। গত ৭-৮দিনে ৪৫ হাজারের বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। তবে হাসপাতালে ভর্তি ২ হাজারের কিছু বেশি। সকলে মাস্ক পরুন, হাত ভাল করে ধুয়ে নিন।’

এদিন নবান্নের সাংবাদিক বৈঠকে মাস্ক তো বটেই, মুখ্যমন্ত্রীকে হ্যান্ড গ্লাভস পরে থাকতে দেখা যায়। সেখানেই তিনি বলেন, ”তিনদিন জর থাকলে ডাক্তারকে দেখানো উচিত।” এই পরিস্থিতিতে গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে বিশেষ কিছু বলতে চাননি। তাঁর কথায়, ”গঙ্গাসাগর মেলা এখন কোর্টে বিবেচনাধীন। তাই এটা নিয়ে বলব না।”

মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘প্রশাসন জোর করে মাস্ক পরাতে পারে না। এদিকে লোকাল ট্রেন বন্ধ করলেও দোষ, না করলেও দোষ। বলবে আসতে পারছে না। কিন্তু রাস্তাঘাটে মাস্ক পরার বিষয়টা পুলিশকে কঠোরভাবে দেখার জন্য বলছি।’ রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যেই ১০ কোটি ৭৭ লক্ষ ৬৪ হাজার ৭ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে। ১৪ হাজারের বেশি মানুষ প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছেন।

২৩.১৭ শতাংশ পজিটিভিটি রেট। সুস্থতার হার তবে মৃত্যুর হার অনেকটা কম। ৩০ হাজার ৮৮১ জন হোম আইসোলেশনে রয়েছেন। শুনেছি তিনটে ঢেউয়ের পর নাকি এন্ডেমিক হয়ে যায়। যাওয়ার আগে করোনা সবাইকে ভাবিয়ে যাচ্ছে। আগামী ১৫ দিন খুব গুরুত্বপূর্ণ। যদি আরও বাড়ে তাহলে বিধিনিষেধ আরও কঠোর করতে হবে‌।’

এদিকে সাংবাদিক বৈঠকে শুক্রবার চিত্তরঞ্জন ক্যান্সার হাসপাতালের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের উদ্বোধনের কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সেটি শুক্রবার ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করবেন। যদিও মোট প্রকল্পের ২৫ শতাংশ টাকা রাজ্যের। আমি কালীঘাটের অফিস থেকে ভার্চুয়ালি উপস্থিত থাকব।’

মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানান, রাজ্যে বিগত কয়েকদিনে ৪৫ হাজার ৪১৭ জন রোগী পাওয়া গিয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ২৯২০ জন। হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা খুব কম। রোগটা এবার মারাত্মক না হলেও সংক্রমণ খুব বেশি হচ্ছে। তবে রাজ্যে কোভিডের জন্য ১৯৮টি হাসপাতাল রয়েছে। সেখানে ১৯ হাজার ৫৭০ বেড রয়েছে। ৪১০০ ICU বেড রয়েছে। তবে কম উপসর্গ থাকলে হাসপাতালে যাওয়ার দরকার নেই বলেই এদিন জানান তিনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here