দেশের সময় কলকাতা ও বনগাঁ:আজ ষষ্ঠ বার। এখনও পর্যন্ত আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষেকে দফায় দফায় ৫০ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন সিবিআই তদন্তকারীরা। আরজি কর মামলা এখন সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন।
আরজি করের ঘটনায় সন্দীপের ভূমিকা নিয়ে বারংবার প্রশ্ন তুলছেন আন্দোলনকারীরা। চিকিৎসকের একাংশও তাঁর বিরুদ্ধে সরব। কিন্তু, সংবাদ মাধ্যমে স্কুলের মেধাবী ছাত্রের বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগে হতবাক তাঁর স্কুলের শিক্ষককরা।
বনগাঁ উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন তিনি। ১৯৮৯ সালে প্রায় ৮০ শতাংশ নম্বর নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন সন্দীপ। স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক দেবাশিস রায়চৌধুরী বলেন, ‘ও যখন স্কুলে পড়ত আমি তখন তরুণ। সন্দীপ পড়াশোনায় ভালো ছিল। স্কুলের বিভিন্ন গঠনমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকত। কোনওদিন দুষ্টুমি করতে দেখিনি। টিভিতে যখন প্রথম সন্দীপ নামটা দেখি তখনও ভাবতে পারিনি ও আমার ছাত্র। আমরাও বিষ্মিত।’
বনগাঁ হাইস্কুলের শিক্ষক চন্দন ঘোষ বলেন, ‘ও অত্যন্ত মেধাবী ছিল। সেই সময় ডাক্তারিতে সুযোগ পাওয়া অত্যন্ত কঠিন ছিল। ওর বিষয়ে অভিযোগগুলো এখন জানতে পারছি। যদি ওর দোষ প্রমাণিত হয় তাহলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।’
সন্দীপের স্কুলের এক ছাত্র প্রদীপ দে বলেন, তিনি বিশ্বাসই করতে পারছেন না তাঁর প্রিয় স্কুলের মেধাবী ছাত্র এই ধরনের কোনও ঘটনার সঙ্গে যুক্ত। স্কুল বোর্ডের মেধাবী তালিকায় এখনও তার নাম যেমন জ্বল জ্বল করছে, ঠিক তেমনই বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমেও তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের ভিত্তিতে ওই নাম এই মুহুর্তে শুধু বনগাঁ স্কুল নয় গোটা দেশের নাম কলুষিত করেছে । যদি প্রামাণিত হয় সন্দীপ দোষী তাহলে শুধু আমি না গোটা দেশবাসীর পক্ষ থেকে চাই ওর কঠোর শাস্তি হোক ।
বনগাঁর আরও এক ছাত্র কৌস্তব ঘোষ বলেন, আমারও একই স্কুল তবে সন্দীপ ঘোষের ঘটনায় আঘাত হেনেছে,তার নাম উচ্চারণ করলে বনগাঁবাসী হিসাবে ‘লজ্জিত’ হই, তার নাম বাদ দিলে এই স্কুলের নামে গর্ববোধ করি ।
অন্য দিকে সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদে যে তথ্য এল সামনে
আরজি কর মামলা এখন সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। মঙ্গলবার এই মামলায় সুপ্রিম কোর্টে কড়া চাপের মুখে পড়ে রাজ্য। বৃহস্পতিবারের মধ্যে এই মামলার তদন্তের গতি রিপোর্ট আকারে সিবিআই-কে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। সিবিআই সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বয়ানে একাধিক ক্ষেত্রে অসঙ্গতি রয়েছে। এখনও অনেক ক্ষেত্রে মিসিং লিঙ্ক রয়েছে সন্দীপের বয়ানে।
তবে জানা যাচ্ছে, সিবিআই-এর কাছে সন্দীপ ঘোষ দাবি করেছেন, তিনি কোনও অন্যায় করেন। এই ঘটনার প্রকাশ্যে আসার আগে থেকেই সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে একাধিক বেনিয়মের অভিযোগ ওঠে। তাঁর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন আরজি করের প্রাক্তন ডেপুটি সুপার আখতার আলি। তিলোত্তমা-র পর্ব সামনে আসতে পুরনো বিষয়গুলো আরও মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। জিজ্ঞাসাবাদে সে প্রসঙ্গ উঠতে সন্দীপ ঘোষ দাবি করেছেন, তিনি কোনও অনিয়ম করেননি।
সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, সন্দীপ ঘোষ দাবি করেছেন, “খারাপ খবরটা পাওয়ার পর নিয়ম মেনে যা যা করার সব করেছি। কোনও প্রমান লোপাট হয়নি।” ঘটনার পর পরিবারের তরফ থেকেও দাবি করা হচ্ছে, হাসপাতালের তরফ থেকে ফোন করে প্রথমে বলা হয়েছিল, তাঁদের মেয়ে আত্মহত্যা করেছেন। যা নিয়ে চরম বিতর্ক তৈরি হয়।
সুপ্রিম কোর্ট এই বিষয়ে উষ্মা প্রকাশ করে। যদিও সন্দীপ ঘোষ দাবি করেছেন, তিলোত্তমার বাড়িতে হাসপাতালে তরফে করা ২টি ফোন কলের বিষয়ে তিনি জানেন না। তিনি কাউকে ফোন করতে বলেননি বলে দাবি করেছেন বলে সিবিআই সূত্রে খবর। ইতিমধ্যেই তদন্তকারীরা প্লেস অফ অকারেন্সে থ্রি ডি স্ক্যানিং করা হয়েছে। কিন্তু সেখান থেকে কোনও রকমের সূত্র খুঁজে পাননি তদন্তকারীরা ।