দেশের সময়: আড়াই বছর বাদে কলকাতায় ডার্বি ম্যাচে মুখোমুখি হবে মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গল। সমর্থকদের উত্তেজনা থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। সেই পারদ চড়ছে। টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা স্পট হয়ে গেল। মোহনবাগান মাঠে এক ঘণ্টার মধ্যে টিকিট উধাও। সকাল থেকে যারা লাইন দিয়ে ছিলেন, তারা ক্ষুদ্ধ হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন।

এমনকী ইডেনের সামনে রাস্তা অবরোধ করেন। কিছুক্ষণ পর পুলিশ হস্তক্ষেপ করলে অবরোধ উঠে যায়। পরে আবার কিছু টিকিট বিক্রি হয়। কিন্তু নিমেষে তা শেষ হয়ে যায়। অন্যদিকে ইস্টবেঙ্গল মাঠে একটা করে টিকিট বিক্রি করা হয় সমর্থকদের কাছে। শান্তভাবেই তা চলে।

সার্বিকভাবে টিকিটের হাহাকার। সবারই অনুরোধ একটা টিকিট। কীভাবে সামাল দেওয়া যায় পরিস্থিতি, কর্মীদের বড় চিন্তা। ডুরান্ড কাপ কমিটি পর্যাপ্ত টিকিট না দেওয়ায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। খেলার দিন কঠোর নিরাপত্তা থাকবে। দুই দলই জেতার জন্যে মরিয়া।

২০২২ সালে প্রথম বড়ম্যাচঘিরে তুমুল উত্তেজনা গড়ের মাঠে।


তিন বছর পর ডার্বি ফিরছে কলকাতায় ৷ করোনার প্রকোপে যা দু’বছর আগে মাণ্ডবীর তীরে চলে গিয়েছিল, তা আবার ফিরেছে গঙ্গাপাড়ের শহরে। আগামী রবিবার যুবভারতীতে ডুরান্ড কাপের খেলায় ফের মুখোমুখি হতে চলেছে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান। আর এই ম্যাচ ঘিরেই গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সোশ্যাল ওয়ালে উত্তেজনার পারা চড়ছিল।

ম্যাচের ৭২ ঘণ্টা আগে সমর্থকদের বাঁধভাঙা আবেগ আছড়ে পড়ল লেসলি ক্লডিয়াস সরণি এবং গোষ্ঠ পাল সরণিতে।

ডুরান্ড কাপের আয়োজক অর্থাৎ ভারতীয় সেনা বহু আগেই অনলাইনে বড় ম্যাচের টিকিট ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু অনেকেই তখন টিকিট কাটতে পারেননি। কারণ, ১০ মিনিটের মধ্যেই সোল্ড আউট হয়ে গিয়েছিল সমস্ত টিকিট। তাই বাধ্য হয়েই অফলাইন টিকিট বিক্রির অপেক্ষায় বসেছিলেন দুই ক্লাবের সমর্থকরা।

অনলাইন টিকিট বহু আগেই শেষ। অফলাইনেও টিকিট প্রায় নেই বললেই চলে। মোহনবাগান ক্লাব থেকে মাথাপিছু দুটি টিকিট ও ইস্টবেঙ্গল জনপিছু একটি করে টিকিট দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। এরপরেও সমর্থকদের উন্মাদনায় ভাটা পড়েনি। শুক্রবার মোহনবাগান ক্লাবের সামনে সেই টিকিট না পাওয়া নিয়েই উত্তেজনা ছড়ায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ছুটে আসতে হয় ময়দান থানার পুলিশকে।

শুক্রবার দুপুর থেকেই ডার্বি ম‍্যাচের অফলাইন টিকিট দেওয়া শুরু হয়। মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গল ক্লাব তাঁবু থেকে সেই টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। টিকিটের জন্য কার্যত মারামারি লেগে যাওয়ার উপক্রম। ইতিমধ্যে কলকাতা ডার্বির টিকিট নিয়ে এটিকে মোহনবাগান সমর্থকদের মধ্যে চূড়ান্ত বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। সকাল সাতটা থেকে ক্লাব তাঁবুর সামনে সমর্থকেরা লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। অভিযোগ, ১০০ টিকিট দেওয়ার পরেই বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

৫০ এবং ১০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে ডুরান্ড কাপের ডার্বির টিকিট। আগে এলে আগে পাওয়া যাবে, এই ভিত্তিতে জন প্রতি ১টি করে ৫০ কিংবা ১০০ টাকার টিকিট দেওয়া হচ্ছিল দুই ক্লাবেই। তবে টিকিটের চাহিদা যা, তাতে অল্প টিকিটে সেই চাহিদা পূরণ হওয়ার নয়। মোহনবাগান সচিব দেবাশিস দত্ত আগেই বলেছিলেন, ‘মাত্র ৬০ হাজার দর্শকের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যার মধ্যে ৩৮ হাজার টিকিট দেওয়া হয়েছে দুই প্রধানকে।’ ফলে টিকিটের জন্য হাহাকার তীব্র। আর তার জেরেই শুরু হয়েছে বিক্ষোভ, ঝামেলা। কী কারণে মাত্র ১০০ টিকিট দেওয়ার পরই মোহনবাগানের কাউন্টার বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, সে ব্যাপারে স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি। আগামীকাল সাধারণ সমর্থকদের কোনও টিকিট দেওয়া হবে না। শনিবার শুধুমাত্র মোহনবাগান সদস্যদের টিকিট দেওয়া হবে।

এদিন ভোররাত থেকেই মোহনবাগানের তাঁবুর সামনে সমর্থকরা টিকিটের জন্য ভিড় করতে শুরু করেন। বেলা যত বাড়তে থাকে সেই ইডেন উদ্যান ছাড়িয়ে প্রায় বাবুঘাটের দিকে চলে যায়। সকাল থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও দুপুর গড়াতেই তা লাগামছাড়া হয়ে যায়। সমর্থকদের অভিযোগ, ভোর থেকে লাইন দিয়েও টিকিট পাননি তাঁরা। এরপরই পথে নেমে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। একটা সময় পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যায়। ভিড় নিয়ন্ত্রণে করতে নামানো হয় মাউন্টেন পুলিশও। তাদের তাড়া খেয়ে ছন্নছাড়া হয়ে যায় উত্তেজিত সমর্থকেরা।

মোহনবাগানে যখন উন্মত্ত জনতার দাপাদাপি, ইস্টবেঙ্গলে তখন ঠিক যেন উল্টো ছবি ধরা পড়ল। এদিন দুপুর দুটো থেকে অফলাইন টিকিট বিক্রির ঘোষণা করা হয়েছিল ক্লাবের তরফে। সেই মতো সকাল আটটা থেকেই লাইন পড়তে শুরু করে লাল-হলুদ তাঁবুর সামনে। ধীরে ধীরে সেই লাইন পৌঁছে যায় সেন্ট্রাল এক্সাইজ ক্যান্টিনের কাছাকাছি। তবে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সামনে কোনওরকম উত্তেজনা ছড়ায়নি।

সোশ্যাল মিডিয়ায় এক সমর্থকের পোস্ট করা একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, সকলেই ছাতা মাথায় বসে আছে। কড়া রোদে তখন কমবেশি সকলেই কাহিল। তাই লাইনে না দাঁড়িয়ে সকলেই প্রায় বসে পড়েছেন পিচের রাস্তায়। পাঁচ হাত দূর দূর তখন সমর্থকদের জটলা। একটা-দুটো ছাতার তলায় গোল করে কোনওরকমে বসে আছেন পাঁচ-সাতজন।

সাত, আটের দশকে এমনটা দেখা যেত। টিকিটের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইন। টিকিট না পেলে সমর্থকরা বিক্ষোভ, পথ অবরোধ করতেন। ডার্বি নিয়ে আবেগটা যে এতটুকু বদলায়নি তা প্রমাণিত হল ফের একবার। রবিবার ডুরান্ড কাপে ইলিশ-চিংড়ির লড়াই। তার আগে শুক্রবার দুই ক্লাবের সামনে টিকিট নেওয়ার লম্বা লাইন। দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকেও মোহনবাগান সমর্থকদের অনেকেই টিকিট পেলেন না। যার ক্ষোভ আছড়ে পড়ল কলকাতার রাজপথে। তুমুল বিক্ষোভ, ‘টিকিট চাই’ এই স্লোগান তুলে পথ অবরোধ করেন বাগান সমর্থকরা। বিক্ষোভ সামলাতে হস্তক্ষেপ করতে হয় পুলিশকে। বিক্ষোভের কারণে দাঁড়িয়ে যায় বাস, গাড়ি।

অনেক প্রবীণ সমর্থকদের কথায়, আশির দশকে ডার্বি নিয়ে এমন উত্তেজনা দেখা যেত। তাই বলাই যায়, এখনও পর্যন্ত ডুরান্ড কাপে ময়দানের দুই প্রধান দল খুব একটা ভাল ফলাফল করতে না পারলেও আঠাশের ডার্বি নিয়ে আলাদাই মেজাজে দু’দলের সমর্থকরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here