ঝড়ে বিধ্বস্ত এলাকার পরিস্থিতি দেখতে জলপাইগুড়ির পথে রাজ্যপাল, যাচ্ছেন শুভেন্দু অধিকারীও

দেশের সময় জলপাইগুড়ি: জলপাইগুড়ির ঝড় বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শন করতে রবিবার রাতেই সেখানে পৌঁছেযান  মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাত জেগে জলপাইগুড়ির পরিস্থিতি ঘুরে দেখলেন মুখ্যমন্ত্রী। 

মৃতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। হাসপাতালে গিয়ে আহতদের সঙ্গেও কথা বলেন। জলপাইগুড়ি, ময়নাগুড়ির যে যে এলাকা রবিবারের ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সে সব জায়গায় রাতেই গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিজে খতিয়ে দেখেছেন। পরিস্থিতির তদারকি করেছেন। সব মিটিয়ে তাঁর হোটেলে ফিরতে রাত আড়াইটে বেজে গিয়েছিল। আপাতত মালবাজারের চালসার একটি হোটেলে আছেন মমতা।

ঝড়ের ঘটনার কথা জানার পরই তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় শোকপ্রকাশ করেছিলেন। প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এমনকী মৃতদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে জানান, নির্বাচনী আদর্শ বিধি অনুসরণ করে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াবে সরকার। পরে জানা যায়, তিনি নিজেই জলপাইগুড়ি যাবেন। সেই মতো বিশেষ বিমানে সেখানে গেলেন মমতা।

জলপাইগুড়ি শহর, ধূপগুড়ি, ময়নাগুড়ির বেশ কিছু এলাকা ঝড়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ময়নাগুড়িতে ৫০০ গ্রাম ওজনের শিল পড়েছে বলে দাবি এলাকাবাসীদের। মাত্র কিছুক্ষণের ঝড়ের তাণ্ডবে জলপাইগুড়ি সদর ব্লক, ময়নাগুড়ি ব্লকের বেশ কিছু এলাকায় বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়।  ঘটনার পর প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এমনকী মৃতদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে জানান, নির্বাচনী আদর্শ বিধি অনুসরণ করে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াবে সরকার। 

রবিবার রাতে বাগডোগরা পৌঁছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ”আমি এখন জলপাইগুড়ি সদরে যাব। অল্প সময়ের জন্য বড় ঝড় এসেছিল। ক্ষতি আলিপুরদুয়ার, কোচবিহারেও হয়েছে। কিন্তু জলপাইগুড়িতে ৫ জন মারা গেছে।” সূত্রে খবর, ঝড়ে আহতদের দেখতে রাতেই মমতা জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল হাসপাতালে যাচ্ছেন। তার আগে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে এবং মৃতদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।  

রবিবার বেলা সাড়ে ৩ টে নাগাদ জলপাইগুড়ি জেলায় ব্যাপক কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টি শুরু হয়। ১৫ মিনিটের কালবৈশাখী ঝড়ে প্রাথমিকভাবে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল বলে খবর। বাগডোগরা পৌঁছে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। পাশাপাশি জানা গেছে, আহতের সংখ্যা অন্তত ২০০।

ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আহতদের দেখতে সোমবার বিকেলে জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার কথা তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের।

জলপাইগুড়ির ঝড়ের ঘটনার কথা জানার পরই সোশ্যাল মিডিয়ায় শোকপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি। 
এক্স হ্যান্ডলে মোদী লিখেছেন, “পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি-ময়নাগুড়ি এলাকায় বহু পরিবার ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যারা প্রিয়জনকে হারিয়েছেন তাঁদের প্রতি আমার সমবেদনা রইল।”

বঙ্গ বিজেপিকে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকার এবং ত্রাণকাজে নামার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। একইসঙ্গে তিনি লেখেন, “রাজ্যের আধিকারিকদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। এই ভারী বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ সহায়তা নিশ্চিত করতে বলেছি।” 

রবিবার কালবৈশাখী ঝড়ের তাণ্ডবে জলপাইগুড়ির বিস্তীর্ণ এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বহু মানুষ। তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। রাতেই উত্তরবঙ্গে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাত আড়াইটে পর্যন্ত পরিস্থিতি ঘুরে দেখেন তিনি। সোমবার সকালে জলপাইগুড়ি গেলেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। এলাকায় গিয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৃত ও আহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করবেন তিনি।

দমদম বিমানবন্দর থেকে ভোর ৬টা নাগাদ বাগডোগরার উদ্দেশে  রওনা দেন রাজ্যপাল। এরপর সড়কপথে পৌঁছবেন জলপাইগুড়িতে। কলকাতা বিমানবন্দর থেকে জলপাইগুড়ির ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন রাজ্যপাল। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে বলে জানান বোস।

বিমানবন্দরে ঢোকার আগে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে রাজ্যপাল বলেন, “জলপাইগুড়িতে ঝড়ের ঘটনায় আমি উদ্বিগ্ন। সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। সকলে একসঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলার কাজ করছেন। আমি ওখানে গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখব, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সঙ্গে কথা বলব। আমার পক্ষে যা যা করা সম্ভব নিশ্চয়ই করব।’’একইসঙ্গে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীরও ইতিমধ্যে জলপাইগুড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। 

বাগডোগরায় পৌঁছে রাজ্যপাল বলেন, ‘‘আমি নিজে পরিস্থিতির তদারকি করব। মানুষের সঙ্গে কথা বলব। তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা শুনব। যা যা করা সম্ভব করব। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর এবং সংশ্লিষ্ট অন্য়ান্য দফতরের সঙ্গেও আমি কথা বলব।’’

জলপাইগুড়িতে সোমবার সকালে যাচ্ছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, ‘‘জলপাইগুড়িতে প্রায় ৮০০ বাড়ি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। বাড়িগুলি টিন দিয়ে তৈরি ছিল। এই সময়ে সরকারের উচিত মানুষের পাশে দাঁড়ানো। কারণ বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে সরকার আদর্শ আচরণবিধির আওতায় পড়ে না। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও জলপাইগুড়িতে কাজ করছে। তাদের বেশি করে দায়িত্ব নিতে হবে। আমরা রাজনৈতিক কর্মী বা জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচনী বিধির কারণে বেশি কিছু করতে পারব না। কেবল পাশে থাকতে পারি। তাই সংগঠনগুলিকে দায়িত্ব নিতে হবে। আশা করব অন্য রাজনৈতিক দল এবং প্রশাসন রাজনীতি দূরে রেখে কাজ করবে।’’ বিকেলে জলপাইগুড়িতে পৌঁছে যাবেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

সোমবার সকালেও আবহাওয়া প্রতিকূল জলপাইগুড়িতে। উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায় ঝোড়ো হাওয়া বইছে। আকাশের মুখও ভার। মাঝেমাঝে মেঘ ডাকছে। বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে উত্তরের জেলাগুলিতে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here