দেশের সময়  ওয়েবডেস্ক: আগেই ঘোষণা করেছিলেন, বিচারপতির পদ থেকে ইস্তফা দেবেন তিনি। মঙ্গলবার সকালে নজর ছিল সেদিকেই। এদিন সকালে দেখা গেল, শেষবারের মতো বিচারপতি হিসেবে কলকাতা হাইকোর্টে গেলেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় । সকাল ১০টার কিছু পরেই পৌঁছে যান আদালতে। তার কিছুক্ষণেই বিচারপতির পদ থেকে ইস্তফা দিলেন তিনি। ডাকযোগে নিজের ইস্তফা পত্র পাঠান দেশের রাষ্ট্রপতি এবং দেশের প্রধান বিচারপতিকে। পদত্যাগের পর তিনি কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাত করেন।

তাঁর পদত্যাগের ঘোষণার পর থেকেই শুরু হয় জল্পনা। তিনি কোন রাজনৈতিক দলে যোগ দিচ্ছেন তা নিয়ে।

বিচারপতি পদ ছাড়ার ঘোষণা করার সঙ্গেই তাঁর পরবর্তী পদক্ষেপ মঙ্গলবার ঘোষণা করবেন বলে জানিয়েছিলেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সেই জন্য তিনি বেছে নিয়েছিলেন হাইকোর্টের সামনে মাস্টারদা সূর্য সেনের মূর্তির পাদদেশকে। কিন্তু, মঙ্গলবার সকাল থেকেই জানিয়ে দেওয়া হয়, হাইকোর্টে নয়, বেলা দেড়টা নাগাদ তাঁর সেই ‘বিগ এন্ড এক্সক্লুসিভ’ ঘোষণা হবে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সল্টলেকের বাড়ির সামনে।

এই নিয়ে ফের চর্চা শুরু হয়। যদিও এই পট পরিবর্তনের কারণ হিসেবে জানানো হয়, যেহেতু গোটা হাইকোর্ট চত্বরে ১৪৪ ধারা থাকে ১২ মাস, তাই সেখানে তিনি সাংবাদিক বৈঠক করতে চান না। নাগরিক হিসেবে আইন ভঙ্গ করার বিরোধী তিনি। যদিও বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের একেবারে লোকসভা ভোটের মুখে চাকরির মেয়াদ শেষের পাঁচ মাস আগেই বিচারপতি পদ ছাড়া নিয়ে আইনজীবীদের একটা বড় অংশই বিরক্ত, প্রবল অসন্তুষ্ট হাইকোর্টের বা বিচার ব্যবস্থার গরিমা নষ্টের অভিযোগে।

মঙ্গলবার তিনি কলকাতা হাইকোর্টের সামনে সাংবাদিক বৈঠক করলে তাঁকে ঘিরে কালো পতাকা দেখানোরও পরিকল্পনা করে আইনজীবীদের একটি সংগঠন। সেই খোঁজখবর নিয়ে পুলিশও সতর্ক হয়। এমনকী, লালবাজার থেকে অন্যান্য দিনের তুলনায় বাড়তি ফোর্স হাইকোর্টের আনারও তোড়জোড় করে পুলিশ। শেষ পর্যন্ত তিনি হাইকোর্টে কোনও কর্মকাণ্ড করবেন না বলে জানার পর হাঁফ ছাড়ে পুলিশ।

এই খবর সামনে আসার পর তাঁর প্রতি তৃণমূলের আক্রমণ কিন্তু আরও বেড়েছে। কুণাল ঘোষ, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়রা ইতিমধ্যেই দাবি করেছেন, একটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে গেছে যে এতদিন ধরে বিচারপতি হিসেবে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় যে যে রায় দিয়েছেন তা রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল। 

২০১৮ সালে বিচারপতি পদে বসেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ২০২০ সালে কলেজিয়েমের একাংশের আপত্তির মধ্যেও তিনি স্থায়ী হন। আগে শ্রম দফতর সহ বিভিন্ন বিভাগের মামলা শুনলেও ২০২১ সালের জুন মাস থেকে তাঁর ভার পড়ে স্কুল সার্ভিস কমিশন সংক্রান্ত মামলা শোনার। আর তারপরেই ব্যতিক্রমী বিচারপতি হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে থাকেন তিনি।

স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে শুনানির মধ্যে বাছা বাছা শব্দ প্রয়োগ করে পর্যবেক্ষণ, শাসক দলের নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলা — মিডিয়া থেকে আম জনতা তখন তাঁর ঘরে ভিড় জমত বিস্তর। তিনি কোর্টে বসতেন একেবারে নিজের সময়ে। সাড়ে ১০ টায় কোর্ট বসার কথা থাকলেও তিনি তাঁর কোর্টে আসা বা এজলাসে বসার মধ্যে একটা নিজস্বতা তৈরি করেছিলেন। যদিও সেই তাঁর গাড়ি মঙ্গলবার হাইকোর্টে ঢোকে ১০টা ২৭-এ।

এদিন সাড়ে ১০টা নাগাদ তিনি পদত্যাগপত্র পাঠান রাষ্ট্রপতির কাছে। সেই পদত্যাগপত্র গৃহীত হওয়ার পরে তিনি সাধারণ মানুষ হিসেবে তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানাবেন। তিনি সোমবার পদত্যাগ পত্র না করলেও কলকাতা হাইকোর্ট পরের দিনের বিচার কাজের যে সূচি আগের দিন প্রকাশ করে, সেই তালিকায় নাম রাখা হয়নি বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের। যা নিয়ে বিস্মিত আইনজীবীদের একাংশ। তার এজলাসে চালু শ্রম সংক্রান্ত মামলাগুলো পাঠানো হয়েছে বিচারপতি অরিন্দম মুখোপাধ্যায়ের এজলাসে।

আজ মঙ্গলবার দুপুর ২টোয় নিজের সল্টলেকের বাড়িতে সাংবাদিক বৈঠক করবেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।ওয়াকিবহাল মহলের মতে, এদিনের সাংবাদিক বৈঠকেই অবসান হবে জল্পনার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here