দেশের সময় : সবরমতির জলে ভেসে গেল ভারতবাসীর স্বপ্ন।  ২০ বছর আগের বদলা হল না। ১২ বছর পর বিশ্বকাপ জয় হল না। ১০ বছর ধরে আইসিসি ট্রফি না পাওয়ার খরা কাটল না। আমদাবাদে নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ভারত হেরে গেল। এ বারের বিশ্বকাপে একটি মাত্র ম্যাচ হারল ভারত। আর সেটা ফাইনাল ম্যাচ। প্রথমে ব্যাট করে ২৪০ রান করা ভারতের বিরুদ্ধে ট্রেভিস হেডের শতরানে ভর করে অস্ট্রেলিয়া জিতল ৬ উইকেটে।

অস্ট্রেলিয়ার একটা সময় ৪৭ রানে তিন উইকেট পড়ে গিয়েছিল। সেইসময় ভারতীয় দলকে দেখে মনে হয়েছে তারাই শেষ মুহূর্তে বাজিমাত করবে। যেভাবে টানা দশটি ম্যাচ জিতেছিল। সেইভাবেই ম্যাচ বের করে দেবে। কিন্তু হল না। ভারতকে ছয় উইকেটে হারিয়ে ষষ্ঠবারের মতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া।

ভারতের ২৪০ রান খুব সহজেই তুলে দিয়েছেন হেড ও লাবুশানে।  ৪২ বল আগেই খেলা শেষ করে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। হেড করলেন ১২০ বলে ১৩৭ রান, যারমধ্যে রয়েছে ১৫টি চার ও চারটি ছক্কা। পাশাপাশি লাবুশানে করলেন ৫৮ রান।

নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামের প্রেস বক্স থেকে পাশের সবরমতী নদী পরিষ্কার দেখতে পাওয়া যায়। আপন গতিতে বয়ে চলেছে এই শান্ত নদী। যেমনভাবে নিজেদের লক্ষ্যে অবিচল থেকে অস্ট্রেলিয়ার ট্রেভিস হেড সেঞ্চুরি করে ম্যাচ বের করে দিলেন। বরং সবরমতীতে ভাসল রোহিতদের কাপ জয়ের স্বপ্ন। যোগ্য দল হিসেবে তারা চ্যাম্পিয়ন হতো। কিন্তু তারা হারল ১৪০ কোটি মানুষের অসীম প্রত্যাশার কাছে। আসল ম্যাচেই স্নায়ু হারালেন সূর্যকুমার যাদব, শুভমন গিল, জাদেজারা।

সারা টুর্নামেন্টে ট্রেভিস হেড ভাল খেলেছেন। শুরুতেই শামি, বুমরাদের বলে ওয়ার্নার, মিচেল মার্শ, স্মিথরা ফিরে গিয়ে যে চাপ তৈরি হয়েছিল, সেটি কাটিয়ে দিলেন হেড। তাঁর জন্যই কামিন্সরা মাথা উঁচু করে মাঠ ছাড়লেন। তিনি মার্নাশ লাবুশানকে নিয়ে রাজার মতো খেলে দলকে বিশ্বসেরা করে মাঠ ছাড়লেন। অজিরা প্রমাণ করলেন তাঁরাই সবসময় বড় মঞ্চের দল। মোট নয়বার ফাইনালে খেলে ছয়বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। তারা চোকার্স হতে জানে না, সেটাই প্রমাণিত আবারও।

কোহলি রোহিত ও রাহুল ছাড়া ভারতের বাকিরা সফলই হলেন না। এই চাপের কাছে বাকি দল নতিস্বীকার করল।  মেগা মঞ্চে খেলার স্নায়ু ধরে রাখতে ব্যর্থ দেশের ক্রিকেটারররা। 

বুমরার বলে লেগ বিফোর আউট ছিলেন না স্টিভ স্মিথ। কিন্তু তিনি ডিআরএস না নিয়ে সোজা প্যাভিলিয়নের পথ ধরলেন। কেন ধরলেন, সেটি পরিষ্কার নয়।

ম্যাচের অনফিল্ড আম্পায়ার আউট দিয়ে দিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু সেইসময় স্মিথ রিভিউ নিলে বেঁচে যেতেন। এটাই না পার্থক্য হয়ে যায়। রিভিউতে দেখা গিয়েছে বল লেগ স্টাম্প দিয়ে বাইরে চলে যাচ্ছে।
স্মিথ রিভিউ না নেওয়ায় সোশ্যাল সাইটে তাঁর নামে জয়ধ্বনি চলছে। বলা হচ্ছে, স্মিথ স্যার আপনাকে ধন্যবাদ, আপনি আমাদের অনেক উপকার করেছেন। অনেকেই লিখেছেন, থ্যাঙ্কিউ স্মিথ!    

ফাইনালে জসপ্রীত বুমরার বলে স্মিথকে এলবিডব্লুউ দেন অনফিল্ড আম্পায়ার। ট্র্যাভিস হেডের সঙ্গে আলোচনার পরে ডিআরএস না নিয়েই ড্রেসিংরুমের দিকে হাঁটা লাগান স্মিথ। কিন্তু পরে রিভিউয়ে দেখা যায় যে আউট ছিলেন না অস্ট্রেলিয়ার তারকা।

‘ইমপ্যাক্ট’ আউটসাইড হওয়ায় রিভিউ নিলে বেঁচে যেতেন। পালটে যেত অনফিল্ড আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত। ১২০ কিমি বেগে ফুল লেংথ অফকাটার ছিল। বুমরা যে বলের গতির হেরফের করেছেন, তা বুঝতে পারেননি স্মিথ। বলটা পুরোপুরি মিস করেন তিনি। পিছনের প্যাডে আছড়ে পড়ে বল। ভারতীয়রা জোরালো আবেদন করতেই আম্পায়ার আঙুল তুলে দেন। সেইসময় ধারাভাষ্যকাররা বলতে থাকেন, স্মিথ ভুল করলেন আপনি। এই ম্যাচে সুযোগ নিলেন না কেন!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here