Gold Smuggling: ঘটনার সূত্রপাত চলতি বছরের ১৮ অক্টোবর। শিয়ালদহ স্টেশনে দিল্লীগামী রাজধানী এক্সপ্রেস থেকে উদ্ধার হয় ২৬ টা সোনার বিস্কুট।
দেশের সময়, কলকাতা: সোনা ‘পাচারে’ ধৃত Bongaonবনগাঁর (TMC) ট তৃণমূল নেতা তথা বনগাঁ পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান শঙ্কর আচ্য-র ছেলে শুভ আঢ্য ও শ্যালক অমিত ঘোষ ৷
সোনা পাচারের ‘কিংপিন’ হিসেবে উল্লেখ করে গ্রেফতার করা হল বনগাঁর দাপুটে তৃণমূল নেতা শঙ্কর আঢ্যর ছেলে শুভ আঢ্যকে। সম্প্রতি শিয়ালদহ স্টেশনে রাজধানী এক্সপ্রেস থেকে প্রচুর সোনা উদ্ধার হয়। সেই ঘটনার তদন্তেই উঠে আসে এই শুভ আঢ্যর নাম। তাঁকেই বৃহস্পতিবার সকালে গ্রেফতার করল ডিরেক্টরেট অব রেভিনিউ ইনটেলিজেন্স। গ্রেফতার করা হয়েছে অমিত ঘোষ নামে আরও এক ব্যক্তিকে। এদিনই তাঁদের আদালতে পেশ করা হয়। হেফাজতে নেওয়ার আর্জি জানানো হয়েছে ডিআরআই-এর তরফ থেকে।
ঘটনার সূত্রপাত গত হয় চলতি বছরের ১৮ অক্টোবর। শিয়ালদহ স্টেশনে দিল্লীগামী রাজধানী এক্সপ্রেস থেকে ২৬ টা সোনার বিস্কুট সহ দুজনকে গ্রেফতার করেছিল ডিআরআই। তাঁদের নাম অনুপম মিত্র ও অলীক মণ্ডল। এই দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গিয়ে অমিত ঘোষের নাম উঠে আসে। সেই মতো তাঁকে তলব করা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার সকালে তিনি ডিআরআই-এর অফিসে হাজিরা দেন। তাঁর সঙ্গেই এসেছিলেন শুভ আঢ্য। খবর পেয়ে দুজনকেই গ্রেফতার করা হয়
শুধু অক্টোবরের ওই সোনা উদ্ধারের ঘটনাই নয়, জুলাই মাসে আরও সোনা উদ্ধারের ঘটনাতেও অমিত ঘোষের নাম সামনে এসেছিল। সেই মামলায় অমিতকে তলব করা হলেও তিনি বারবার হাজিরা এড়িয়ে যান। এদিন হাজিরা দিলেও অনুপম মিত্র বা অলীক মণ্ডলকে চেনেন না বলেই দাবি করেন অমিত। কিন্তু তাঁর মোবাইলে ওই দুজনের দিল্লির টিকিট পাওয়া যায়। এরপরই সোনা পাচারের সঙ্গে যোগ স্পষ্ট নয়।
জানা গেছে গত অক্টবর মাসে একটি সোনা পাচারের ঘটনা ঘটে৷(Rajdhani Express ) রাজধানী এক্সপ্রেস এ কলকাতা থেকে দিল্লি যাচ্ছিল৷ ডিআরআই DRI প্রথমে সেই খবর পায় এবং দুজনকে গ্রেফতার করে ৷ যদিও নভেম্বর মাসে তাদের দুজনের জামিন হয়ে যায় ৷ পাশাপাশি DRI সেই তদন্ত প্রক্রিয়া যখন এগিয়ে নিয়ে যায় তখন ফের শমণ পাঠানো হয় শুভ আঢ্য ও আমিত ঘোষকে ৷ তারপরই DRI গ্রেফতার করে ৷ সূত্রের খবর, ওই দুজনের মোবাইলে যে টিকিট পাওয়া গেছে মূলত সেই টিকিট যা রাজধানী এক্সপ্রেসে সোনা পাচারে ব্যবহৃত হয়েছিল৷ ডিআরআইDRI এর তরফে মনে করা হচ্ছে একেবারে প্রতক্ষ বা পরোক্ষভাবে শুভ আঢ্য ও অমিত ঘোষ যুক্ত ৷ তার জন্য পরবর্তী পর্যায়ের তদন্তের প্রয়োজনে ডিআরআইDRI তাঁদের হেফাজতে নিতে বৃহস্পতিবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে আবেদন জানায় বলে জানা গেছে ৷ দুজনের বিরুদ্ধে সোনা পাচারের অভিযোগ উঠেছে৷
জানা গেছে ধৃত শুভ আঢ্য বনগাঁ পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান শঙ্কর আঢ্যর ছেলে। ধৃত অমিত ঘোষ সম্পর্কে শঙ্কর আঢ্যর শ্যালক। গত মাসে বনগাঁ সীমান্ত থেকে ২ জনকে গ্রেপ্তার করে সোনা পাচারের মূল চক্রী হিসেবে এই দু’জনের নাম জানতে পারেন তদন্তকারীরা। এরপরই শুভ ও অমিতকে গ্রেপ্তার করে ডিআরআই। প্রসঙ্গত গত অক্টোবর মাসে বনগাঁয় বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ২ কেজি সোনা–সমেত অনুপম মিত্র ও অনীক মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করা হয়। ধৃতদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞসাবাদে বেশ কিছু তথ্য আসে তদন্তকারীদের হাতে। জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে সোনা এনে এখানে গয়না তৈরি করা হত। সেই গয়না আবার পাচার হত বাংলাদেশে। অনুপম ও অনীকের মোবাইলের কললিস্ট পরীক্ষা করে অমিত ঘোষের নাম হাতে পান তদন্তকারীরা। এরপর মেলে শুভ আঢ্যর নাম। কলকাতা থেকে বৃহস্পতিবার দু’জনকে গ্রেপ্তার করে ডিআরআই।
গ্রেফতারের পর দফায় দফায় জেরা। সোনা পাচারের অভিযোগে তৃণমূল নেতার ছেলে-শ্যালককে গ্রেফতার করল ডিআরআই। ‘তৃণমূল নেতা শঙ্কর আঢ্যের ছেলে-শ্যালক শুভ, অমিত-ই সোনা পাচারের কিংপিন’ আদালতে তৃণমূল নেতার ছেলে-শ্যালককে পেশ করে দাবি ডিআরআইয়ের। ডিআরআইয়ের হাতে গ্রেফতার হন তৃণমূল নেতার শ্যালক অমিত ঘোষ।
উল্লেখ্য, বনগাঁর দাপুটে তৃণমূল নেতা তথা বনগাঁ পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান শঙ্কর আঢ্যর ছেলে শুভ। তাঁর মা জ্যোৎস্না আঢ্য বর্তমানে ওই পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান পদে রয়েছে। শুভ ও অমিত সম্পর্কে মামা-ভাগ্নে। তাঁরা দুজনেই ফোরেক্স লিমিটেড নামে এখ সংস্থার ডিরেক্টর পদে রয়েছেন। কয়লা পাচার বা গরু পাচারের অভিযোগ যখন শাসক দলের একাধিক নেতার নাম জড়িয়ে যাচ্ছে, তারই মধ্যে সোনা পাচারে সামনে এল আরও এক তৃণমূল-যোগ ৷
এদিকে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই সরব বিজেপি। এ প্রসঙ্গে বিজেপি সাংগঠনিক বনগাঁ জেলার সাধারণ সম্পাদক তথা কাউন্সিলর দেবদাস মন্ডল বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছি যে শঙ্কর আঢ্য সোনার ব্যবসা করেন। আজ তা প্রমাণ হল। DRI তাঁর ছেলে শুভ আঢ্য ও শ্যালক অমিত ঘোষকে গ্রেফতার করেছে। এরা দু’জন আসলে মোহড়া, আসল মাথা শঙ্কর আঢ্য। শুধুই সোনার ব্যবসা নয়, তিনি বিদেশে টাকা পাচার করেন, ডলার কেনা-বেচা যতরকম খারাপ কাজ আছে সব করেন। DRI, ED এবং কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন করব যেন তদন্ত করে আসল বিষয়টি তাঁরা বের করেন।”
উন্নেখ্য,বৃহস্পতিবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে DRI-এর তরফে দাবি করা হয়, সোনা পাচারের তদন্তে দেখা যায় শুভ ও অমিত, সম্পর্কে মামা ও ভাগ্নে প্রায় দুই কেজি সোনা পাচার করছিল। তারাই এই ঘটনার মাস্টার মাইন্ড বা কিংপিং। তপন ঘোষ নামে এক ব্যাক্তির নাম তদন্তে আগেও একাধিকবার উঠে এলেও কার্যত তার নাগাল পাচ্ছিল না DRI, তবে এই ঘটনায় অমিত ঘোষের বাড়ির ঠিকানা ও পরিচয় তপন ঘোষের সঙ্গে মিলে যাওয়ায় তদন্তকারীরা জানকে পারে অমিত ঘোষ ও তপন ঘোষ একই ব্যাক্তি। যদিও অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবীদের তরফে তীব্র বিরোধিতা করে জানানো হয়, সমন পাঠিয়ে গ্রেফতার কি করে সম্ভব? দুইজনকেই জামিন দেওয়া হোক।
যদিও DRI-এর আইনজীবীর তরফে বলা হয়, দুই ব্যাক্তি রাজধানী এক্সপ্রেসে সোনা পাচারের কিংপিং তাই হেফাজতে নিয়ে তদন্তের প্রয়োজন। দুই পক্ষের সওয়াল জবাব শুনে ব্যাঙ্কশাল আদালত শুভ ও অমিতের জামিন মঞ্জুর করে ও সপ্তাহে ২বার তদন্তকারী অফিসারের কাছে হাজিরার নির্দেশ দেয়।