দেশের সময় : দত্তপুকুরে অভিঘাত যে কত বড় তা এখন টের পাওয়া যাচ্ছে। রবিবার বিস্ফোরণ ঘটেছে। সোমবার সকালেও ইতিউতি থেকে পাওয়া যাচ্ছে ছিন্ন ভিন্ন দেহাংশ। যে বাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটেছিল তার থেকে প্রায় ৮০ মিটার দূরে সোমবার সকালে উদ্ধার হয়েছে একটি ছিন্ন হাত।

রবিবারের বিস্ফোরণে মৃতদের দেহ একেবারে ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল। পাশের বাড়ির দোতলার ছাদে পাওয়া যায় একটি দেহাংশ। সোমবার সকালে এক প্রতিবেশীর বাঁশ বাগানের পাশে পরে থাকতে দেখা যায় দেহ থেকে ছিন্ন হওয়া মাথা।

ওই বিস্ফোরণ কাণ্ডে সোমবার সকালে প্রথম গ্রেফতার হয়েছে। নীলগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে সফিকুল ইসলামকে। ধৃত সফিকুলকে এলাকায় সবাই কেরামতের অংশীদার বলেই চেনে। তার আগে রবিবার রাতভর মোচপোল নামে ওই গ্রামে তল্লাশি চালায় পুলিশ । মোট ৪ জনের বিরুদ্ধে ভারতীয় ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৩০৪, ২৮৬, ৩০৮, ৩৪, ও বিস্ফোরক আইনের ৯বি ধারা এবং ২৪/২৬ ফায়ার সার্ভিস আইনে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
নীলগঞ্জে চোরাগোপ্তা বেশ কিছু বাড়িতে যে বাজি ও বাজির মশলা মজুত থাকে তা এলাকায় ওপেন সিক্রেট।

এই বিস্ফোরণ কাণ্ডে পুলিশি নিস্ক্রিয়তার অভিযোগ এনে কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের হল জোড়া জনস্বার্থ মামলা। অবিলম্বে রাজ্য পুলিশের হাত থেকে তদন্তভার নিয়ে সিবিআই ও এনআইএ-র হাতে তুলে দেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে।

সোমবার প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে মামলার আবেদন জানানো হয়। মামলাটি গ্রহণ করেছে বেঞ্চ। আগামীকাল সকালে মামলার শুনানি হবে। মামলাকারীর আইনজীবীর অভিযোগ, বিস্ফোরণ কাণ্ডের সঙ্গে তৃণমূলের স্থানীয় নেতার জড়িত থাকার প্রমাণ স্পষ্ট। রাজ্য পুলিশের হাতে তদন্তভার থাকলে তাঁরা প্রভাবিত হতে পারেন। নষ্ট করে দেওয়া হতে পারে বিস্ফোরণ কাণ্ডের বহু তথ্য। তাই সিবিআই ও এনআইএ-র মতো কেন্দ্রীয় বা জাতীয় তদন্তকারী সংস্থাকে দিয়ে তদন্ত করা জরুরি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশ সব জানলেও নিস্ক্রিয় ছিল। তা না হলে এমন ভয়াবহ বিস্ফোরণ, এত মানুষের মৃত্যু হয়তো এড়ানো যেত।

বিজেপি এবং সিপিএম এর পক্ষ থেকে সোমবার পৃথক পৃথকভাবে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়। আগামীকাল সকাল সাড়ে দশটায় প্রধান বিচারপতি ডিভিশন বেঞ্চে মামলার শুনানি হবে।

এদিকে রবিবার বিস্ফোরণের পর এখন নবান্নের গুঁতো খেয়ে তল্লাশি অভিযানে নেমেছে পুলিশ। রবিবার যে বাড়িটি বিস্ফোরণে উড়ে যায় তার পাশের দুটি বাড়িতে রবিবার রাতে তল্লাশি করে জেলা পুলিশ। রাত ১টার কিছু পর থেকে পুলিশের অভিযান শুরু হয়। প্রথমে পুলিশ একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে ঢোকে। তালা ভেঙে বেশ কয়েকটি বস্তা বারুদ পায় পুলিশ। তাতে সাদা পাউডার ছিল।

এর পর শেখ শাহির হোসেন নামে আর এক ব্যবসায়ীর গোডাউনে তল্লাশি চালানো হয়। সদর দরজা বন্ধ থাকায়, পুলিশ পাঁচিল টপকে ভিতরে গিয়ে প্রচুর পরিমাণে নিষিদ্ধ বাজি দেখতে পায়। ওই গোডাউনের সামনে রাতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এলাকার লোকজনের অভিযোগ, ৩ বছরের বেশি সময় ধরে ওই গোডাউনে বাজি মজুত করা হচ্ছিল। স্থানীয়দের এও দাবি, তল্লাশির সময়ে পুলিশ নাকি বাজি পায়নি! পুলিশ বেরিয়ে যেতে স্থানীয়রা ফের ডেকে এনে বাজি উদ্ধার করায়। শুধু তা নয়, পুলিশের উপর ভরসা না রেখে রাত জেগে গোডাউন পাহারা দেন এলাকার মানুষ। কারণ তাঁদের অভিযোগ, পুলিশই বাজি সরিয়ে দিতে পারে!

স্থানীয়দের আরও অভিযোগ, শেখ সাহির তৃণমূল নেতা বলেই পুলিশ এই বেআইনি কারবার বন্ধ করতে ব্যবস্থা নেয়নি। বরং তাঁকে আড়াল করার চেষ্টা করছে পুলিশ! শেখ সাহির ছাড়া বাজিকাণ্ডে উঠে এসেছে আরও একটি নাম। তিনি হলেন আবদুল মহিদ।

মহিদ এলাকায় প্রোমোটারিংয়ের কাজ করেন। সেও নাকি এই নিষিদ্ধ বাজি কারবারের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ। রবিবার রাত সাড়ে ৩টে নাগাদ এক আইপিএস অফিসার সহ বেশ কিছু পুলিশ আধিকারিক মহিদের বাড়িতে যান। কিন্তু তাঁকে সেখানে পাওয়া যায়নি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here