প্রদীপ দে, ঢাকা: শিলিগুড়ি থেকে এক ট্রেনেই ঢাকা, মিতালির ঐতিহাসিক যাত্রা শুরু৷ বহু কাঙ্ক্ষিত সেই মিতালি এক্সপ্রেস হলদিবাড়ি সীমান্ত পার হয়ে ছুটে গেল বাংলাদেশ। ৫৭ বছর পর আবার ঐতিহাসিক যাত্রা শুরু হল। 

 দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও এই পথে রেল চলেছে। ১৯৬৫ সালের ভারত–পাকিস্তান যুদ্ধের পর বন্ধ হয়ে যাওয়া সেই পথে আবার ছুটল রেলগাড়ি। এদিন থেকে যেন জীবন ফিরে পেল রেলপথটি। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট পর্যন্ত এই যাত্রা ১০ ঘণ্টার। এদিনই রাতে ঢাকা পৌঁছে যাবে এই আন্তর্জাতিক এক্সপ্রেসটি। 

বুধবার সকালে নির্ধারিত সময়ের আগেই ৯টা ৪০ মিনিটে যাত্রা শুরু করে ট্রেনটি। প্রথম যাত্রায় এনজেপি ও হলদিবাড়িতে অনুষ্ঠান করা হয়েছিল। যাত্রীদের ফুল–মিষ্টি এবং খাদা পরিয়ে সংবর্ধনা জানায় রেল। জলপাইগুড়ি ও হলদিবাড়িতে নাগরিক মঞ্চ ও বণিক মহল যাত্রীদের সংবর্ধনা দেয়। ভারতের রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব ও বাংলাদেশের রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন দিল্লিতে রেলভবনে পতাকা নেড়ে এই ট্রেন যাত্রার ভার্চুয়াল সূচনা করেন।

একই সময়ে এনজেপিতে রেলের উচ্চপদস্থ আধিকারিক ও আমন্ত্রিত জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত থেকে পতাকা নাড়েন। আর এর মধ্যে দিয়েই দুই দেশের সম্পর্কে আরও একটি পালক জুড়ল। প্রথম যাত্রায় ১৮ জন যাত্রী নিয়ে ট্রেনটি জলপাইগুড়ি হয়ে হলদিবাড়ি স্টেশনে পৌঁছয়। সেখানে বিএসএফ ট্রেনটি নিয়মমতো যাত্রীদের পাসপোর্ট, ব্যাগ তল্লাশি করে সীমান্ত পার করার অনুমতি দেয়।

এর পর ট্রেনটি বাংলাদেশের সীমান্ত স্টেশন চিলাহাটি ঢুকে পড়ে। সেখানে গিয়ে লোকো পাইলট পরিবর্তন হয়। যাত্রা পথে এখনও কোনও স্টপ দেওয়া হয়নি। যাত্রা শুরুর আগে দিল্লিতে রেলমন্ত্রী ঐতিহাসিক এই ট্রেন দিয়ে দু’‌দেশের বন্ধুত্বের সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশের রেলমন্ত্রী ভারতের কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রথম যাত্রাতেই সপ্তাহে দু’দিন নয়, অন্তত পাঁচ দিন যাতে মিতালি যাতায়াত করতে পারে, সেই দাবি রাখেন।

আপাতত এনজেপি থেকে সপ্তাহে দু’দিন এবং ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকেও সপ্তাহে দু’দিন চলাচল করবে ট্রেনটি। এনজেপি থেকে বুধ এবং রবিবার সকাল ১১টা ৪৫ মিনিটে ছাড়বে। ঢাকা পৌঁছবে সেদিনই রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ। পাসপোর্ট ও ভিসা দেখিয়ে এনজেপিতেই টিকিট কাটা যাবে।

এ ছাড়া কলকাতার ফেয়ারলি প্লেস থেকেও টিকিট মিলবে। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে বৃহস্পতিবার ও সোমবার রাত ৯টা ৫০ মিনিটে ট্রেনটি ছেড়ে এনজেপিতে আসবে পরের দিন সকাল ৭টা ৫ মিনিটে। টিকিট পাওয়া যাবে কমলাপুর, চট্টগ্রাম থেকেও। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের দূরত্ব ৫৯৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৬৯ কিলোমিটার ভারত ভূখণ্ডে পড়েছে।

এই পথে যেতে ট্রেনটির সময় লাগবে ১০ ঘণ্টা। ১০ বগির ট্রেনটি ডিজেল ইঞ্জিনের। এর মধ্যে চারটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কেবিন কোচ এবং চারটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত চেয়ার কার। ট্রেনটির এসি কেবিন বার্থের ভাড়া ৪ হাজার ৯০৫ টাকা, এসি কেবিন চেয়ারকারের ভাড়া ৩ হাজার ৮০৫ টাকা, এসি চেয়ার কারের ভাড়া ২ হাজার ৭০৭ টাকা। শিশুদের ৫ বছর পর্যন্ত ভাড়ায় ৫০ শতাংশ ছাড় রয়েছে। এক যাত্রী সর্বোচ্চ ৩৫ কেজি ওজনের জিনিসপত্র বিনামূল্যে বহন করতে পারবে। 

এদিন উত্তর–পূর্ব সীমান্ত রেলের জেনারেল ম্যানেজার অনশুল গুপ্তা বলেন, ‘অনেক বছর থেকে আলোচনা চলছিল। এদিন ঐতিহাসিক যাত্রার সাক্ষী থাকলাম আমরাও। এই মিতালি দুই দেশের সম্পর্ক আরও দৃঢ় করবে। এবার এই ট্রেনে ঢাকা গেলে দূরত্ব ও সময় অনেকটাই বঁচবে।’ উত্তর–পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সব্যসাচী দে বলেন, ‘এই ট্রেনে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে এখানকার পর্যটন ব্যবসায়ী এবং দুই প্রান্তের বাসিন্দারা।

বাংলাদেশ থেকে যাঁরা চিকিৎসার প্রয়োজনে আসেন, তাঁদের জন্য বেশি সুবিধা হবে।’ বাংলাদেশের রেলমন্ত্রী দাবি করেছিলেন সপ্তাহে পাঁচদিন মিতালি চালানোর জন্য। এদিন এনজেপি থেকে জলপাইগুড়ির সাংসদ জয়ন্ত রায় বলেন, ‘আমরা দাবি করছি সপ্তাহে সাত দিন যাতে ট্রেন চালানো যায়।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here