দেশের সময়: একসময়ের সফল অভিনেত্রী। বহু হিট বাণিজ্যিক বাংলা সিনেমার নায়িকা। কিন্তু তিনিই এখন দীর্ঘদিন ধরে টলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে কোনও কাজ পাচ্ছেন না। এনিয়ে আফশোস অবশ্য কম নেই অভিনেত্রী দেবীকা মুখার্জির। পরিচালকরা তাঁদের ছবিতে কেন তাঁকে বাছাই করেন না, সেটাই প্রশ্ন তাঁর।

অঞ্জন চৌধুরীর ‘ছোট বউ’ এসেছিলেন বনগাঁয় একটি অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি হিসেবে। ‘দেশের সময়’-এর সঙ্গে খোলামেলা সাক্ষাৎকারে উগরে দিলেন তাঁর যাবতীয় আক্ষেপ। বললেন, আমার ভুলটা কোথায়, সেটা অন্তত ধরিয়ে দিক পরিচালকরা। এটা তো বলুক, আমি ঠিক এই ভুলের জন্য কাজ পাচ্ছি না। তা হলে তো আমি নিজের সেই ভুলটা সংশোধন করতে পারি। দীর্ঘদিন টলিউডে কাজ না পেয়ে তিনি যে হতাশ, তা ধরা পড়ল অভিনেত্রীর কথাবার্তায়। বললেন, আমি তো ফুরিয়ে যাইনি। আবার বড়পর্দায় ফিরতে চাই।

জানিয়ে দিলেন, ভাল পরিচালকের কাছে কাজ চাইতেও কোনও লজ্জা নেই তাঁর। পরিচালক কৌশিক গাঙ্গুলীর অর্ধাঙ্গিনী ছবি দেখে তিনি কৌশিক ও চুর্ণীর ফ্যান (ভক্ত) হয়ে গিয়েছেন। বললেন, খুব ইচ্ছে করছে কৌশিক গাঙ্গুলীর সঙ্গে অন্তত একটা ছবিতে কাজ করার। কেমন ছবিতে কাজ করার ইচ্ছে?

অভিনেত্রীর জবাব, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ছবিতে সাহসী চরিত্রে কাজ করতে চাই। দেখুন ভিডিও

এ ধরনের চরিত্রে কাজ করার ইচ্ছে, শুধু কি একটা কাজ পাওয়ার জন্যই। দেবীকার জবাব, মোটেই তা নয়। দীর্ঘদিন ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করেছি। প্রচুর অভিজ্ঞতা রয়েছে। দর্শকরা বছরের পর বছর আমাকে এক ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখেছেন। আমার পরিণত মনস্কতাকে এবার কাজে লাগাতে চাই। অ্যাডাল্টদের জন্য গল্পে একটু বোল্ড চরিত্রে পর্দায় আসতে চাই। এটা নিজেকেও প্রমাণ করার একটা জায়গা।

এখন যে ধরনের বাংলা ছবি হচ্ছে, সেই নিরিখে কি দেবীকা মুখার্জির ‘বাজার’ নেই? প্রশ্ন শুনে সটান জবাব অভিনেত্রীর। বললেন, আমার ছবি তো ২৫ সপ্তাহ, ৩০ সপ্তাহ ধরে চলেছে। হাউসফুল শো হয়েছে। টিকিটের লাইনে মারপিট হয়েছে। এখন তো এমন সিনেমাও হচ্ছে, যেখানে একটা শোয়ে দু-তিনজন দর্শক হয়। তাহলে আমাদের বাজার নেই, এটা একেবারেই ভুল কথা।

আমাদের নিয়ে ছবি করলে সেই ছবি আজও হিট হতে পারে। তবে এটা তো পরিচালকদের সিরিয়াসলি ভাবতে হবে। আমাদের মতো করে গল্প বাছাই করতে হবে। এখন যে ধরনের ছবি হচ্ছে, তার কনটেন্টের মান কি পড়ছে? দেবীকার কথায়, এটা তো ঠিক যে, সব ছবি দর্শকদের মনে ধরছে না। দর্শক সব ছবি নিচ্ছে না। কিছু ছবি দারুণভাবে দর্শকদের মন ছুঁয়ে যাচ্ছে।

কিছু ছবি মানুষের মনের মধ্যে একটা ভাবনার বদল আনতে সাহায্য করছে। দর্শক নতুনভাবে ভাবতে শিখছে। যেমন, কৌশিক গাঙ্গুলী অর্ধাঙ্গিনী নামে যে ছবি বানিয়েছেন, আমি তো সত্যি কথা বলতে, সিনেমাটা দেখে কৌশিকের ফ্যান হয়ে গিয়েছি। চুর্ণীর অসাধারণ অভিনয়, সত্যি বলতে আমার হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছে। এই মুহূর্তে আপনি যদি আমায় জিজ্ঞাসা করেন, বড় পর্দায় কোন পরিচালকের সঙ্গে আবার কাজ করতে চান? আমি এক মুহূর্ত সময় না নিয়ে বলতে পারি, কৌশিক গাঙ্গুলী। ওঁর সঙ্গে কাজ করতে পারলে সত্যি সেটা আমার জীবনের একটা বড় প্রাপ্তি হবে।

অভিনেত্রী দেবীকা মুখার্জি কি ইন্ডাস্ট্রিতে বঞ্চনার শিকার? ছোট বউয়ের জবাব, বঞ্চনা কি না জানি না। তবে কেন আমাকে ওঁরা ছবির জন্য ডাকে না জানি না। কেন? এটাই আমারও প্রশ্ন। আমার কি কোথাও ভুল আছে? তাহলে সেই ভুলটা ওঁরা (পরিচালক) আমায় ডেকে ধরিয়ে দিক। সেটা তো আমার জন্য বেটার হয়।

ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ চাইতে যাবেন, নাকি কতদিনে পরিচালকের ফোন আসে তার জন্য অপেক্ষা করবেন? এক মুহূর্ত চুপ থেকে অভিনেত্রীর জবাব, বড় পরিচালকের কাছে কাজ চাইতে কোনও লজ্জা নেই।

প্রিয়জনের কাছে যেমন আবদার করা যায়, বাবার কাছে যেমন ভালবেসে কিছু চাওয়া যায়, একজন পরিচালকও তো তাই। তিনি আমাদের (অভিনেত্রীদের) অভিভাবক। আবার যদি শুরু করেন, দেবীকা মুখার্জিকে কোথায় দেখতে পাবেন দর্শকরা, বড় পর্দায় নাকি ছোট পর্দায়? অবশ্যই বড় পর্দায়। কিন্তু বলেই ফের হতাশা উগরে দিলেন অভিনেত্রী। বললেন, কিন্তু সুযোগটা পেলে তো! ওটিটি প্ল্যাটফর্মকে কীভাবে দেখেন?

দেখুন, একজন দর্শক বদলাচ্ছে। তাঁদের সিনেমা দেখার ধরন বদলাচ্ছে। ওটিটি ভাল। আমি তো ওই প্ল্যাটফর্মে কাজ শুরু করেছি। কিন্তু মন পড়ে রয়েছে বড় পর্দায়। বলতে পারেন, পেটের খিদে মিটলেও মনের খিদে কিছুতেই মিটছে না। আমি আবার সেই দিন দেখতে চাই, যেদিন আমার ছবি সুপার ডুপার হিট হবে। সপ্তাহের পর সপ্তাহ চলবে। তবে অন্য মোড়কে। ঘরোয়া চরিত্রে অনেক অভিনয় করেছি। এবার অ্যাডাল্টদের জন্য ছবিতে সাহসী চরিত্রে ফিরতে চাই। উজাড় করে দিতে চাই নিজেকে।
একটা সময় প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে চুটিয়ে অভিনয় করেছেন, কিন্তু এখন সিনে দুনিয়া থেকে অনেকটাই দূরে, অনেকের মতো এই নায়িকাও কি হারিয়ে যাবেন দর্শকদের মন থেকে? ফিকে হয়ে যাবেন? সময় বলবে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here