পার্থ সারথি নন্দী,দেশের সময়:পৌষ মাসের মাঝামাঝি এখন চড়ুইভাতির আমেজে মজেছেন বঙ্গবাসী। ভোজনরসিক বাঙালির পাতে এখন নানা রকমের পিঠেপুলির সঙ্গে অপরিহার্য খেজুড় গুড়ের পাটালি বা নলেন গুড়। আর এবার যেহেতু শীত অনেক দেরীতে এসেছে, তাই বাজারে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে এতদিন আগের বছরের মজুত করা গুড়ই বিক্রি করা হচ্ছিল। কিন্তু জাঁকিয়ে শীত পড়তেই খেজুরের রসের যোগান পাওয়া যাচ্ছে। তাই এবার সেই রসের থেকেই তৈরী হচ্ছে তাজা পাটালি গুড়।

রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে মূলত কৃষকরা খেজুর গাছ কেটে রস বার করে তা নিয়ে এসে জ্বালিয়ে গুড় তৈরির কাজ করে থাকেন। বনগাঁ,বাগদা,বসিরহাট, হাসনাবাদ, বাদুড়িয়া , স্বরূপনগর, হাড়োয়া ব্লকের বিভিন্ন গ্রামে কৃষক পরিবার খেজুর গুড় তৈরির কাজ করে। শহরের বাজারে, খেজুরের পাটালি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা কিলোগ্রাম দরে মিলছে । তবে গুড়ের দাম ধার্য করা হচ্ছে তৈরির পদ্ধতি উপর। খেজুর রস জ্বাল দেওয়ার সময় তাতে মেশানো চিনির পরিমাণ এবং শীতের তারতম্য অনুযায়ী বিভিন্ন দামে বিক্রি করা হচ্ছে খেজুরের পাটালি ।

এছাড়া, অ্যালুমিনিয়ামের ট্রেতে জ্বাল দিয়ে দ্রুত তৈরি করা গুড়ের গুণগত মান এবং কড়ায় ঢিমে আঁচে জ্বাল দেওয়া গুড়ের গুণগত মান পুরোপুরি আলাদা।

  • এ বছর ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহেই শীতের দেখা মিলেছে। আর তাই বাজারে এসে গিয়েছে খেজুর গুড়।
  • শীতের তারতম্যের উপরেই খেজুর গাছ থেকে ভালো রস পাওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে। শীত পড়লে গাছ থেকে ভালো রস মেলে।
  • এ বছর ডিসেম্বরের গোড়ায় শীত না-পড়ায় চিন্তায় ছিলেন গুড় প্রস্তুতকারী এবং ব্যবসায়ীরা।
  • তবে কিছুটা দেরিতে হলেও জাঁকিয়ে শীত পড়ায় গাছ থেকে মিলছে বেশি পরিমাণ রস।

শীতের তারতম্যের উপরেই খেজুর গাছ থেকে ভালো রস পাওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে। মূলত এই বছর ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহেই শীতের দেখা মিলেছে। আর তাই বাজারে এসে গিয়েছে খেজুর গুড়। যেহেতু শীত পড়লে খেজুর গাছ থেকে ভালো রস মেলে। তাই ডিসেম্বরের শুরুতে শীত পড়ছিল না বলে রীতিমত চিন্তায় ছিলেন গুড় প্রস্তুতকারী ও ব্যবসায়ীরা। তবে এখন সেই পরিস্থিতি অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা গেছে। তাই দেরিতে হলেও জাঁকিয়ে শীত পড়ায় গাছ থেকে মিলছে বেশি পরিমাণ রস।

“যশোরের যশ খেজুরের রস “এ প্রবাদকে সত্যি করে তুলতে বেনাপোল, শার্শাসহ পুরো যশোরে কয়েক দিন পর শুরু হবে খেজুরের গুড় ও পাটালি তৈরির মহোৎসব। বাড়ি বাড়ি খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে পিঠা-পায়েসসহ নাম না-জানা মুখরোচক খাবার তৈরির ধুম পড়ে যাবে। তাই শীত মৌসুম শুরু হওয়ার আগে থেকেই রস ও গুড়ের চাহিদা মেটাতে গাছিরা খেজুর গাছ খিলি দিতে শুরু করেছেন।

পেট্রাপোল সীমান্তে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশে ফেরার সময় বললেন সে দেশেরই এক চাষি

ধারালো দা (গাছিদা) দিয়ে খেজুর গাছের সোনালি অংশ বের করা হয়, একে বলে চাঁচ দেওয়া। চাঁচ দেওয়ার সপ্তাহখানেক পর নোলন স্থাপনের পর শুরু হবে রস আহরণ। কদিন আগে ভোরের শিশির ভেজা ঘাস আর ঘন কুয়াশার চাদর জানান দিচ্ছিল শীতের আগমনিবার্তা। হুট করে জেঁকে বসেছে হিমশীত। এ মৌসুমে খেজুরের রস গ্রামীণ জনপদে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে। শীতের আমেজ যেন পূর্ণতা পায়। শীত যত বাড়বে, রসের মিষ্টিও তত বাড়বে। এ জনপদে শীতের সবচেয়ে বড় আর্কষণ দিনের শুরুতে খেজুরের রস, সন্ধ্যা রস ও গুড়-পাটালি। পিঠা ও পায়েস তৈরিতে আবহমানকাল থেকে গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে খেজুরের গুড় ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এখানকার কারিগরদের দানা পাটালি তৈরির সুনাম রয়েছে। এখানের খেজুরের গুড় ও পাটালির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে দেশ-বিদেশে।

শার্শা উপজেলার গোগা কালিয়ানী গ্রামের গাছি শাহজাহান মোল্লার কথায়, এই খেজুরের রস ও পাটালি আমাদের গৌরব আর ঐতিহ্যের প্রতীক। দাম বেশি পাওয়ার আশায় এ অঞ্চলের গাছিরা শীতের আগেই গাছ থেকে রস আহরণের জন্য গাছ প্রস্তুত করে রাখেন। এতে রস ও গুড়ের দাম তুলনামূলক বেশি পাওয়া যায়। একটি গাছ থেকে রস আহরণের জন্য প্রস্তুত করতে গাছিকে খরচ করতে হয় প্রায় ১০০ টাকা। তিনি আরও বলেন, এ মৌসুমে আমি প্রায় ৩০০ গাছ থেকে রস পাব। তবে সব গাছ আমার একার নয়। চুক্তিতে অন্যের গাছ থেকে আমি রস নিয়ে থাকি। রস, গুড় ও পাটালি বিক্রি করে খরচ বাদে প্রায় ৩০ হাজার টাকা লাভ হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

উত্তর র্শাশার ডিহি ইউনিয়নের তেবাড়িয়া গ্রামের গাছি মইদুল ইসলাম জানান, দেশের অন্যতম প্রাচীন জনপদ যশোর। এই জেলার খেজুরের রস, গুড় ও পাটালির জন্য গর্ববোধ করি।

পেট্রাপোল সীমান্তে ওপার বাংলা থেকে আসা শার্শা উপজেলার এক কৃষি কর্মকর্তার কথায়, এবার সঠিক সময়ে গাছিরা খেজুর গাছ প্রস্তুত করে রেখেছেন। উপজেলায় প্রায় এক লাখ খেজুরের গাছ রয়েছে। এক কথায় বাংলাদেশে এবার খেজুর গুড়ের কোন অভাব নেই।

তবে এপার বাংলায় খেজুর গাছ সে ভাবে আর চোখে পড়েনা,গ্রাম গঞ্জে প্রায় গাছ কেটে জ্বালানির কাজে লাগানোয় ,দিনে দিনে প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে খেজুর গাছ।তার ফলে বাজারে যে সমস্ত পাটালি মিলছে তাতে বেশির ভাগই ভেজাল পাওয়ার অভিযোগ থেকেই যায়৷

বাগদা ব্লকের সীমান্ত লাগোয়া গ্রামের বাসিন্দা বিদ্যুৎ বিশ্বাসের কথায়, স্থানীয় হাটে ও বাজারে একটু নজর রাখলেই মিলে যাবে বাংলাদেশের যশোরের গ্রামে তৈরী খাটি নলেন গুড়৷ শীতের মরসুমে কাঁটা তার পেড়িয়ে অনায়াসে ওপার থেকে চলে আসছে মাটির কলসী ভর্তি নলেন গুড়৷ দামও হাতের নাগালে,তাই অনন্তত এই সমস্ত সীমান্ত লাগোয়া গ্রামের ভোজনরসিক বাঙালির পাতে নলেন গুড়ের কোন অভাব নেই বলেই জানান তিনি৷

বিএস এফ এর এক আধিকারিককে গুড় পাচার হওয়ার কথা বলেতই এক গাল হেসে বললেন এতো মিঠা খবর,তবে কখনও ধরা পড়েনি ৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here