দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ দীর্ঘদিন বকেয়া মহার্ঘভাতা বা ডিএ মেটানোর দাবি নিয়ে সরব ছিলেন রাজ্যের সরকারি কর্মচারীরা। বুধবার বিধানসভায় বাজেট পেশ করে অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য জানান, সরকারি কর্মচারী ও অবসরপ্রাপ্তদের জন্য আরও ৩ শতাংশ ডিএ দেওয়া হবে । কিন্তু এই ঘোষণায় যখন সরকারি কর্মীদের একাংশ খুশি নন ৷

কেন্দ্রীয় হারে ডিএ-র দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই সুর চড়াচ্ছিলেন রাজ্য সরকারি কর্মীরা। মামলার জল গড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। দফতরে দফতরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে রাজ্য সরকারি কর্মীরা।

বুধবার রাজ্য বাজেটে সরকারি কর্মী, শিক্ষক, অশিক্ষক কর্মী এবং পেনশনভোগীদের জন্য অতিরিক্ত তিন শতাংশ ডিএ-র ঘোষণা করেছেন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। বাজেট শেষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সীমিত আর্থিক ক্ষমতার মধ্যে যতটা পেরেছি দিয়েছি।” আগামী মার্চ মাসের বেতন থেকেই এই বর্ধিত ডিএ পেতে চলেছেন রাজ্য সরকারি কর্মীরা। কিন্তু, এই ঘোষণার পর কি আদৌ কিছুটা প্রশমিত হল রাজ্য সরকারি কর্মীদের ক্ষোভ?

ডি এ নিয়ে রাজ্যের ঘোষণার পর রীতিমতো ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন সরকারি কর্মীদের একাংশ। রাজ্য ‘ডিএ-র নামে ভিক্ষা দিয়েছে’, এমনটাই দাবি রাজ্য সরকারি কর্মচারি পরিষদের সভাপতি দেবাশিস শীলের। তিনি বলেন, “আমরা প্রাপ্য ডিএ-র নিরিখে ৩৫ শতাংশ পিছিয়ে ছিলাম। রাজ্য মাত্র ৩ শতাংশ অতিরিক্ত
ঘোষণা করেছে। ফলে মহার্ঘ্যভাতায় ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের নিরিখে আমরা এখনও ৩২ শতাংশ পিছিয়ে রয়েছি। এটা আমাদের ভিক্ষা দেওয়া হল। তামাশা ছাড়া কিছুই নয়। যে পরিমাণ দাবিতে আমরা লড়াই করছি তা নিয়ে এক লাইন শব্দ খরচ করা হল না।”

এখানেই শেষ নয়, আন্দোলন আরও বৃহত্তর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার হুঙ্কার দিয়েছেন তিনি। দেবাশিস শীলের কথায়, “ যৌথ আন্দোলনকে ধর্মঘটের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা আহ্বান জানাচ্ছি। দফতরে দফতরে আমাদের বিক্ষোভ চলবে। ১ জানুয়ারি থেকে কেন্দ্র ডিএ বাড়িয়ে দিলে এই ঘাটতিটা ৩৬ শতাংশ গিয়ে দাঁড়াবে।”

রাজ্য সরকারি কর্মচারিদের সংগঠন ইউনিটি ফোরামের পক্ষ থেকে দেবপ্রসাদ হালদার বলেন, ” তিন শতাংশ ডিএ ঘোষণার জন্য সরকারকে ধিক্কার জানাই। ৩৮ শতাংশ ডিএ বকেয়া রয়েছে। তার জায়গায় দিল ৩ শতাংশ! কমপক্ষে ২০ শতাংশ দিলে কর্মীরা খুশি হত। । এই ঘোষণার পর সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হবে।”

উল্লেখ্য, ডিএ-র দাবিতে শহিদ মিনারের সামনে টানা ২০ দিন আন্দোলন চালাচ্ছে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ। এই ঘোষণার পর তাদের আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হবে বলেই জানিয়েছেন আন্দোলনকারী কিংকর অধিকারী। তিনি বলেন, “এই ঘোষণার পর একটি বিষয় স্পষ্ট যে ডিএ দেওয়ার ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট বাধা নয়। সরকারি কর্মীদের ভুল বোঝানো হচ্ছে।” রাজ্যের ডিএ ঘোষণার পর ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন পেনশনভোগী রাজ্য সরকারি কর্মীদের একাংশ।

অন্যদিকে বিধানসভা চত্বরে উড়ল সবুজ আবির। সরকারি কর্মচারীদের একাংশের মধ্যে দেখা গেল এই উল্লাসের ছবি। যা থেকে স্পষ্ট, ডিএ বৃদ্ধির সিদ্ধান্তে খুশি তাঁরা।

এদিন ডিএ বৃদ্ধি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, কেন্দ্রীয় সরকার প্রাপ্য টাকা দিচ্ছে না। রাজ্যের টাকা দিয়েই সব করতে হচ্ছে। তার মধ্যেও এই মহার্ঘভাতা বাড়ানোর চেষ্টা করা হল। এর জন্য রাজ্য সরকারের প্রতিমাসে অতিরিক্ত খরচ হবে ১৬০ কোটি টাকা। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, টানাটানির মধ্যেও সরকারি কর্মচারীদের আরও ৩ শতাংশ মহার্ঘভাতা ঘোষণা করা হল।

সরকারি কর্মচারীদের অন্য এক সংগঠন জানায়, নবান্নের ডিএ বৃদ্ধির সিদ্ধান্তে খুশি তারা। এই জন্য তারা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।

কর্মীদের একাংশের উষ্মা প্রকাশের মাঝেই এবার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানালেন তৃণমূলের কর্মচারি সংগঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের মন্ত্রী মানস ভ্যুঁইয়া। তিনি বলেন, ” রাজ্য সরকারি কর্মী, পেনশন প্রাপকদের ৩ শতাংশ বর্ধিত হারে ডিএ দেওয়ার জন্য আমি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সম্মান জানাই।”

তাঁর আরও সংযোজন, “এই বাজেট ঐতিহাসিক এবং জনগণের বাজেট। কেন্দ্র রাজ্যকে বকেয়া মেটাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতেও রাজ্য বাজেট বাংলার অগ্রগতিতে অবদান রাখবে।” রাজ্যের ডিএ ঘোষণা নিয়ে একদিকে যখন আন্দোলনের ঝাঁঝ আরও বাড়ানোর কথা ভাবছেন সরকারি কর্মীরা, সেখানে মানস ভ্যুঁইয়ার এই মন্তব্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ।

উল্লেখ্য, এর আগেও ডিএ নিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য শোনা গিয়েছিল তাঁর কণ্ঠে। মানস ভ্যুঁইয়া বলেছিলেন, “রাজ্য ডিএ দেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক ভূমিকা নিতে চায়। কিন্তু, কেন্দ্র রাজ্যের বহু বকেয়া পাওনা মেটায়নি। আর্থিক দিক থেকে অবরোধ করার চেষ্টা করছে। সরকারি কর্মীদের পাশেই রয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।”

প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরেই ডিএ-র দাবিতে লড়াই করে চলেছেন রাজ্যের সরকারি কর্মীরা। গত বছর ২০ মে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছিল তিন মাসের মধ্যে রাজ্য সরকারি কর্মীদের বকেয়া ডিএ মেটাতে হবে। যদিও পরে রাজ্যের তরফে এই রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আর্জি জানানো হয়েছিল।
পরে এই মামলার জল গড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। এদিকে রাজ্যেও সরকারি কর্মীদের একাধিক সংগঠন বিভিন্ন দফতরে দফতরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। রাজ্যের তিন শতাংশ ডিএ বৃদ্ধির বিষয়টি সামনে আসার পরেই আন্দোলন আরও জোরাল করার কথা শোনা গিয়েছে রাজ্য সরকারি কর্মীদের একাংশের কণ্ঠে

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ১ জুলাইয়ের হিসাব অনুযায়ী, কেরালার সরকারি কর্মীরা ৩৬ শতাংশ হারে ডিএ পায়। ২০২২-এর জুলাইয়ের হিসাব অনুযায়ী তামিলনাডুর সরকারি কর্মীরা ৩৪ শতাংশ হারে পান। মধ্যপ্রদেশের সরকারি কর্মীরা ৩৪ শতাংশ হারে ডিএ পান। ২০২১ সালের ডিসেম্বরের হিসেব অনুযায়ী, উত্তরপ্রদেশের সরকারি কর্মীরা ৩১ শতাংশ হারে ডিএ পান। ঝাড়খণ্ড হোক বা মহারাষ্ট্র-কর্নাটক-ডিএ নিয়ে আন্দোলনরতদের দাবি, “মহার্ঘ্যভাতা নিয়ে এই রাজ্যের মতো বৈষম্য অন্য কোথাও নেই।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here