শনিবার কলকাতার ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে বিজেপির সাংগঠনিক বৈঠক হয় (Bengal BJP Organisational Meeting) ৷ সেখানে দলের সংগঠনের অবস্থা নিয়ে পর্যালোচনা করে গেরুয়া শিবির ৷

দেশের সময় , ওয়েবডেস্কঃ তৃণমূল ছেড়ে সিপিএমকে আক্রমণ বিজেপি-র ! পুরভোটের পর রাজ্যে দলকে ঘুরে দাঁড় করানোর দিশা খুঁজতে বিশেষ সাংগঠনিক বৈঠক ডেকেছিল রাজ্য। সেই বৈঠকের শুরুতে রাজ্য সভাপতির ভাষনে সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘লোকে বলে তৃণমূল – বিজেপি আঁতাত। অথচ, তৃণমূল সিপিএম এখন ফিশফ্রাই জোট। তৃণমূলের নতুন ডাক, কাস্তে হাতুড়ি বেঁচে থাক।’

যদিও, বৈঠকে ডাক পাওয়া এক নেতার মতে, ‘রাজ্য সভাপতির ভাষণে পুরভোটে তণমূলের সন্ত্রাস নিয়ে একটা শব্দও খরচ না করে সিপিএমকে আক্রমণ করে কার্যত বামেদেরই প্রাসঙ্গিক করলাম আমরা।’

বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ভোট পেয়েছিল ৩৮ শতাংশ৷ পুরভোটে তা কমে হয়েছে ১২ শতাংশ। পুরভোটের ফল প্রকাশের পর বিজেপি নেতৃত্ব তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোট লুঠ ও সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে এই ফলকে গ্রহণ করেনি। বনধ ডেকেছে রাজ্য জুড়ে। যদিও, জনজীবনে সেই বনধ আদৌ কতটা প্রভাব ফেলতে পেরেছে তা নিয়ে সংশয় রয়ছে বিজেপিতেই।

চার কর্পোরেশন ও ১০৮ পুরসভায় কোথাও বোর্ড গড়তে পারেনি বিজেপি। ১০৮ পুরসভায় বিজেপি সাকুল্যে আসন পেয়েছে ৬৩টি৷ এমনকি মতুয়াগড় বনগাঁ পুরসভায় ২২টি ওয়ার্ডে তীব্র সবুজ ঝাড়ের দাপট সামলে ১০৩১ টি ভোট পেয়ে একমাত্র গেরুয়া আসন দখলে রেখেছে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের জয়ী প্রার্থী দেবদাস মন্ডল ৷ এদিন সাংগঠনিক বৈঠক অনুষ্ঠানের মঞ্চে বিজেপি-র কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের উপস্থিতিতে দেবদাস মন্ডল কে ফুলের মালা পরিয়ে সংবর্ধনা দেন৷ অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সামনে বর্ষীয়ান এক নেতা বলেন, এবারের পুরভোটে বিজেপি-র ফার্স্টবয় দেবদাস মন্ডল ৷

এই আবহে এদিনের দলের সাংগঠনিক বৈঠকে রাজ্য সভাপতির মুখ থেকে শাসক দল তৃণমূলকে নিশানা করে আক্রমণ শানানোর আশা করেছিলেন বিজেপি নেতারা। কিন্তু, তার বদলে শুনতে হল সিপিএম তথা বামেদের বিরুদ্ধে ফিশ ফ্রাই জোটের পুরনো অভিযোগ। কলকাতা কর্পোরেশনের ভোটে বিজেপিকে পিছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসার পর থেকেই সিপিএমকে তোল্লা দিয়ে বিজেপিকে খাটো করার চেষ্টা করছে বলে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব হওয়া শুরু করে বিজেপি।

এই আবহে শনিবার দলের সাংগঠনিক বৈঠকে রাজ্য সভাপতির মুখ থেকে শাসক দল তৃণমূলকে নিশানা করে আক্রমণ শানানোর আশা করেছিলেন বিজেপি নেতারা। কিন্তু, তার বদলে শুনতে হল সিপিএম তথা বামেদের বিরুদ্ধে ফিশ ফ্রাই জোটের পুরনো অভিযোগ। কলকাতা কর্পোরেশনের ভোটে বিজেপিকে পিছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসার পর থেকেই সিপিএমকে তোল্লা দিয়ে বিজেপিকে খাটো করার চেষ্টা করছে বলে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব হওয়া শুরু করে বিজেপি।

কলকাতা-সহ চার পৌরনিগম ও ১০৮ টি পৌরসভার ভোটে বিজেপির যে ভরাডুবি হয়েছে, তার জন্য সাংগঠনিক দুর্বলতাই দায়ী ৷ শনিবার কলকাতার ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে আয়োজিত বিজেপির সাংগঠনিক বৈঠকে এই তত্ত্বই উঠে এসেছে ৷ যেহেতু গোটা বিষয়টি গেরুয়া শিবিরের অন্দরে আলোচনা হয়েছে, তাই এই নিয়ে কেউই মুখ খুলতে নারাজ ৷ তবে বিজেপির একটি সূত্র থেকে এমনই তথ্য পাওয়া গিয়েছে৷

সূত্রের দাবি, এদিন বঙ্গ বিজেপির সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী বৈঠকে জানিয়েছেন যে পশ্চিমবঙ্গে সাংগঠনিকভাবে বহু জায়গায় বিজেপি এখনও দুর্বল । উত্তরবঙ্গ ছাড়া বাকি অংশে দলের সংগঠনিক পরিস্থিতি খারাপ । সেই কারণেই পৌর নির্বাচনে ব্যর্থ হতে হয়েছে ৷ তবে সাংগঠনিক এই দুর্বলতা দূর করে ঘুরে দাঁড়ানোর বার্তাও দেওয়া হয়েছে ৷ দলের অভিজ্ঞ নেতাদের এই বিষয়ে বাড়তি দায়িত্বও নিতে বলা হয়েছে বলে ওই সূত্রের দাবি

বিজেপির একটি সূত্র থেকে জানা গিয়েছে, চলতি মার্চেও দলের নিচুস্তরে সাংগঠনিক রদবদল করা হবে ৷ জেলা কমিটি আগেই গঠন করা হয়েছে ৷ এবার মণ্ডল, শক্তিকেন্দ্র, মোর্চা কমিটি গঠন করতে জেলা নেতৃত্বকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ৷ ৩১ মার্চের মধ্যে এই কাজ শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছেন অমিতাভ চক্রবর্তী ৷

তাঁর নির্দেশ, যাঁদের দায়িত্ব দেওয়া হবে, তাঁদের মাপকাঠিও নির্ধারণ রাজ্য নেতৃত্ব করেছে বলে ওই সূত্রের দাবি ৷ ৪৫ বছরের কমবয়সীদের দায়িত্ব দিতে হবে ৷ যেহেতু একেবারে স্থানীয় এলাকায় লড়াই করতে হবে, তাই লড়াকু মনোভাবের নেতাদেরই মণ্ডল সভাপতি করতে হবে ৷ আর দেখে নিতে হবে যাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে, তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতা কতটা রয়েছে ৷

বিজেপির সাম্প্রতিক সাংগঠনিক রদবদলের পর বিভিন্ন নেতা বিদ্রোহ করেছেন ৷ কখনও তা রাজ্যস্তরে হয়েছে, আবার কখনও জেলাস্তরে বিদ্রোহ হয়েছে ৷ ওই সূত্রের দাবি, অমিতাভ বৈঠকে জানিয়েছেন, পদ না থাকলে, কার্যকর্তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করছেন । এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় স্থানীয়স্তরে দলের মধ্যে আলোচনা করতে হবে ৷ এছাড়া রাজ্যস্তরের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেও সমস্যার সমাধানের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি ৷

বিশেষ সূত্রের দাবি, একই সঙ্গে অমিতাভ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘টিম নিয়ে কাজ করার প্রবণতা এখন কম । আমাদের নজর এখন টিমে জোর দেওয়াই । দল কাঠামো মেনে চলেছে বলেই এগিয়েছে ।’’ তাই দ্রুত সংগঠনের কাঠামো ঠিক করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি ৷ পাশাপাশি বলেছেন, ‘‘কোথাও কোথাও দেখি একজনই সব দায়িত্ব নিচ্ছেন, এটা কেন হবে ? আর কোথাও কেউ নেই ? এগুলো বদলাতে হবে । সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে । ১৯-এ আমরা এগিয়েছি, কারণ আমাদের সংগঠন জয়ের একটা বাতাবরণ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল, তাই আমরা জিতেছি । জয়ের স্বাদ পেয়েছি । আর এখন নেই বলেই এই মুহূর্তটা চ্যালেঞ্জিং ।’’

অন্যদিকে পৌর নির্বাচনে হেরে যাওয়া ওয়ার্ডগুলিতে জনসংযোগ বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি ৷ তাঁর নির্দেশ, কনভেনার বাড়াতে হবে প্রয়োজনে । ব্লক কমিটি, অঞ্চল কমিটিতে ভাগ হবে । একটা একটা অঞ্চল কমিটির মধ্যে ‘অঞ্চল সমিতি’ গড়তে হবে । এলাকায় যাতে প্রভাব বেশি, তাঁদেরই অঞ্চলের দায়িত্ব দিতে হবে ৷

তাছাড়া বিধানসভা সমিতি, ব্লক সমিতি, ওয়ার্ড সমিতি, অঞ্চল সমিতি ৩১ মার্চের মধ্যে তৈরির করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি । প্রতিটি সমিতির নির্দিষ্ট কার্যযোজনা তৈরিরও নির্দেশ দিয়েছেন ৷ জগন্নাথ সরকার, রথীন্দ্রনাথ বসু, জোত্যির্ময় মাহাতোদের সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ।

এছাড়া তিনি বলেন, ‘‘মে মাসের ১৫ তারিখের পর রাজ্যে প্রশিক্ষণ শিবির হবে । লকেট চট্টোপাধ্যায় মহিলা মোর্চার সভানেত্রী ছিলেন, তিনিও দায়িত্ব নেবেন । তফশিলি সম্প্রদায়ের প্রচুর সমর্থন আমরা পেয়েছি । তফশিলি মোর্চার জন্য আম্বেদকর জয়ন্তীতে বড় প্রোগ্রাম নিন । রাম নবমীতেও আমরা প্রোগ্রাম নেব ।’’

এদিন সাংগঠনিক পর্যালোচনা শুরুর আগে ভাষণ দেন বঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ৷ তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যের অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের পেনশন বন্ধ৷ এসএসসির একাধিক প্যানেল বাতিল হয়ে যাচ্ছে । সিবিআই তদন্ত করতে বলছে আদালত । জনগণের রায়ের সময় সেই পুলিশকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে ৷’’

পুরভোটে সিপিএম তাহেরপুরে বোর্ড গড়তে সক্ষম হলেও, বিজেপি-র বোর্ড গড়ার স্বপ্ন অধরাই থেকে গিয়েছে। তার পরেই, বামেদের নিশানা করা শুরু করে বিজেপি। পর্যবেক্ষকদের মতে, প্রকাশ্যে সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক কারণে কিছু বাধ্যবাধকতা হয়ত থাকে। কিন্তু, দলের ”ক্লোজড ডোর ” বৈঠকের আগে যদি এই বার্তা দেওয়া হয়, তাহলে কার্যত ভাবের ঘরে চুরি করা হবে। শুক্রবারই সাংবাদিক সম্মলনে রাজ্য সভাপতি আত্মসমীক্ষার কথা বলেছিলেন। কিন্তু, এই যদি সেই আত্মসমীক্ষার পরিণতি হয়, তাহলে বিজেপি-র দিশাহীনতা যে এখনও কাটেনি সেটাই আবার স্পষ্ট হয়ে গেল মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here