হায় বাঙালি হায়, তুই আর বাঙালি নয়/ তোর চলন, বলন, কথার ধরন নিজের মতো নাই…

পার্থ সারথি নন্দী, বনগাঁ: কে বলেছে বাঙালি ভুলতে বসেছে তাঁর ঐতিহ্য-সংস্কৃতি, এমনকী ব্যুৎপত্তি। সারাবছর ইংরেজি ভাষা, দেশ-বিদেশের ক্যুইজিন কিংবা ক্রস কালচার পোশাকের পিছনে ছুটে মরে। তবে জেনারেশন ওয়াই যতই হ্যাট-কোট-বুটে মেমসাহেব সাজুক না কেন, বছরের ক’টা দিন তাঁরাই কিন্তু বাঙালিয়ানায় মেতে ওঠে।

এদিনগুলোতে পাট ভাঙা শাড়ি-পাঞ্জাবিতেই নিজেদের সাজাতে ভালবাসে তারা। বর্ষবরণ উপলক্ষে শুক্রবার এবছরের বাংলা নববর্ষে বনগাঁ ফের মেতে উঠেছে। করোনার চোখ রাঙানি কাটিয়ে উঠে ফের নববর্ষ উদযাপনে পথে নেমেছে সীমান্ত এলাকার মানুষ। শহরের বুকে আয়োজিত হয়েছে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। সেখানে সকাল থেকে যেমন ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ডালি, তেমনই ছিল খাওয়া দাওয়া, আড্ডা।

নববর্ষের দিন বাঙালি উৎসবের মেজাজে থাকে। এবার সেই আবেগকে আরও কিছুটা উসকে দিতে বনগাঁ পুরসভার উদ্যোগে খেলাঘর ময়দান প্রাঙ্গণ সহ বিভিন্ন পাড়ায় বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে৷

যেমন এদিন সকালে বসাক পাড়া ডায়মন্ড ক্লাব ইছামতি নদী বরণ থেকে শুরু করে নাচ, গান, কবিতা এবং নাটকের মাধ্যমে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে সকলের নজর কেড়েছে৷ এদিন তাঁদের সদস্য- সদস্যারা পাট ভাঙা শাড়ি-পাঞ্জাবিতেই নিজেদেরকে সাজিয়ে ইছামতি নদীতে নৌকা ভাসিয়ে নিজেরাও বাঙালিয়ানায় মেতে ওঠে।

বনগাঁর একটি সাংস্কৃতিক সংস্থা ‘ নতুন আশা’ তাঁদের এক সদস্যা অর্পিতা বণিক জানান বসাক পাড়া ডায়মন্ড ক্লাব বাংলা বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল তাঁদের ডাকে আমাদের বহু সদস্য ও সদস্যারাও এই অনুষ্ঠানে নাচ ও গানে অংশগ্রহণ করেছি৷ করোনার দাপট পেরিয়ে দু বছর পর সবাই মিলে এই অনুষ্ঠান উদযাপন করতে পেরে খুব খুশী হয়েছি৷

শুধু সাজগোজ কেন, খাবার পাতেও এদিনের জন্য ফেরে সম্পূর্ণ বাঙালিয়ানা! ব্রাত্য থাকে ইতালিয়ান পাস্তা, চাইনিজ, মোগলাই কিংবা পাঞ্জাবি। সেরকমই একটা দিন আজ শুক্রবার বাংলা নববর্ষ ।১৪২৯ বঙ্গাব্দ। 

এদিন বর্ষবরণ উৎসবে বনগাঁর খাদ্যরসিক বাঙালির রসনার তৃপ্তিতে উদ্যোগ নিয়েছিল পুরসভার চার নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর তথা ভাইস চেয়ারম্যান জ্যোৎস্না আঢ্য৷ ইলিশ উৎসবের মধ্যে দিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানালেন প্রায় হাজারদুয়েক স্থানীয় মানুষ ৷ জ্যোৎস্না দেবী জানান, ওই ওয়ার্ডের বিএস ক্লাব প্রাঙ্গণে শুক্রবার দুপুরে পান্তা ভাত সঙ্গে ইলিশমাছ ভাজা , বিউলির ডাল , শেষ পাতে জিলাপিতে মিষ্টি মুখ, সব মিলিয়ে খাঁটি বাঙালিয়ানার স্বাদ নিলেন এলাকার বাসিন্দারা৷

এক স্থানীয় বাসিন্দার কথায়,বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে নাচ,গানতো ছিলই এবং উপরি পাওনা হিসাবে বর্ষার আগেই ইলিশ উৎসবে অংশগ্রহণ করতে পেরে তাঁরা খুশি৷

 

চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করে ১৪২৯-এর সূর্যোদয়ের অপেক্ষায় কর্পোরেট পাঁচতারা থেকে যশোররোডের দু ধারে ওপার বাংলার নানা পদের রেস্তরাঁ ও মিষ্টির দোকান৷

স্থানীয় রেস্টুরেন্ট-র সবার হেঁশেলেই শেফরা চিংড়ির মালাইকারি থেকে ছানার ডালনা, নারকেল দিয়ে ছোলার ডাল, ভেটকি পাতুরি ও কচি পাঁঠার নানা পদ তৈরিতে ব্যস্ত।

ঠাকুরবাড়ির রান্না বা উত্তমকুমারের পছন্দের পদকে হাতিয়ার করে শহরের দুই রেস্তোরাঁ রসনা তৃপ্তির আয়োজন করেছে। ‘ষোলো আনা বাঙালি’র মতো কুলীন বঙ্গ-রেস্তরাঁতেও ১৪২৯ বঙ্গাব্দের প্রথম দিনের বুকিং ‘হাউসফুল’।

সবমিলিয়ে করোনার ভয় কাটিয়ে ফের বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে মাতল সীমান্ত শহর বনগাঁ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here