দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ দাবদাহে পুড়ছে দেশের একাংশ। গা-জ্বালানি গরমে ক্ষণিকের জন্য বৃষ্টি স্বস্তি দিলেও পুরোপুরি রেহাই মিলছে না। এই পরিস্থিতিতে বর্ষার জন্য পথ চেয়ে বসে সকলে। এই আবহে সুখবর শোনাল আবহাওয়া দফতর।
সময়ের আগেই এবার এসে গেল বর্ষা। দেশে বর্ষা আসার স্বাভাবিক সময় ১ জুন।আইএমডি সূত্রে জানানো হয়েছে, এ বছর তার আগেই বর্ষা ঢুকবে দেশে। নির্ধারিত সময়ের ছয় দিন আগে আগামী ২৭ মে কেরলে বর্ষার প্রবেশ ঘটবে। দেশের মধ্যে কেরলেই প্রথম বর্ষা ঢোকে।
ইতিমধ্যে আন্দামান সাগরে ঢুকে পড়েছে বর্ষা। আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ু প্রবেশের নির্ধারিত দিন ছিল ২২ মে। কিন্তু এবার নির্ধারিত সময়ের আগেই বর্ষা প্রবেশ করল আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে ৷
সোমবার দিল্লির মৌসম ভবন জানিয়েছে, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর সৌজন্যে ১৬ মে বর্ষা প্রবেশ করেছে আন্দামান-নিকোবরে ৷ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরের কিছু অংশেও সক্রিয় রয়েছে বর্ষা ৷
আগামী ৫ দিন আন্দামানে ভারি বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে হাওয়া অফিস ৷ বজ্র-বিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে ৷ সেইসঙ্গে ঘণ্টায় ৪০-৫০ কিমি বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে, যা সর্বোচ্চ ৬০ কিমি প্রতি ঘণ্টায় পৌঁছতে পারে ৷
তবে, আন্দামানে মৌসুমী বায়ু প্রবেশ করে গেলেও এখনই বর্ষা আসছে না দেশের মূল ভূ-খণ্ডে ৷ কেরল হয়েই দেশে বর্ষার আগমন হয় ৷ সাধারাণত পয়লা জুন বর্ষা আসে কেরলে ৷ এবছর তা সময়ের আগেই আসতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর ৷ এবছর ২৭ মে থেকে কেরলে বর্ষার বৃষ্টি শুরু হতে পারে ৷
আন্দামান-কেরলের পথে বাংলাতেও কি আগে ঢুকছে বর্ষা? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন আবহবিদেরা। অন্যদিকে, বর্ষার বৃষ্টি শুরু না হলেও আলিপুর আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী তিন থেকে চার দিন উত্তরবঙ্গের উপরের পাঁচটি জেলাতেই হালকা থেকে মাঝাারি বৃষ্টি হবে। আর নীচের দিকের তিনটি জেলা মালদা ও দুই দিনাজপুরে বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টি হবে।
সর্তকতা হিসেবে, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহারের ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে, জলপাইগুড়ি, কালিম্পং ও দার্জিলিঙে শুধু ভারী বৃষ্টি হবে। বৃষ্টির সঙ্গে উত্তরবঙ্গে ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হওয়া বইবে।
অন্যদিকে, দক্ষিণবঙ্গের মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও পশ্চিম বর্ধমান জেলায় বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সঙ্গে ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইবে।
বুধবার পর্যন্ত উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব বর্ধমান ও নদিয়ায় বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হাল্কা বৃষ্টির সম্ভাবনা। সঙ্গে ঘন্টায় ৩০-৪০ কিমি বেগে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
কলকাতার ক্ষেত্রেও আগামী ২৪ ঘণ্টায় আংশিক মেঘলা আকাশ ও বজ্রবিদ্যুৎ সহ ঝোড়ো হাওয়া এবং বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। মঙ্গলবার শহরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৮.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের ২ ডিগ্রি বেশি। সোমবার বিকেলে শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের ১ ডিগ্রি কম।
দক্ষিণ পশ্চিম দিক থেকে বাতাস প্রচুর পরিমাণে জলীয়বাষ্প প্রবেশ করছে, রাজ্যে সেটাই এই বৃষ্টির কারণ বলে জানাচ্ছে হাওয়া অফিস।
বৃষ্টি হলেও দুই বঙ্গেই আপাতত দিনের তাপমাত্রার পরিবর্তনের সম্ভাবনা তেমন নাই, ফলে অস্বস্তির আবহাওয়া বিরাজ করবে। আবহাওয়া দফতরের তরফে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিত ঝড়ের পূর্বাভাসও দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, যে হারে বৃষ্টি হচ্ছে এবং ধস নেমেছে, তাতে অসমে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ চেহারা ধারণ করেছে। বন্যা পরিস্থিতিতে অসমে পাঁচ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। কয়েকজন নিখোঁজ বলে জানা গিয়েছে। প্রায় ৬৬ হাজার ৬৭১ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ৩৯৯টি গ্রাম বিপর্যস্ত হয়েছে। অসমের কাছার জেলার পরিস্থিতিও ভয়ানক। সেখানে ৪১ হাজারেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
২০৯৯.৬ হেক্টর জমি জলে ডুবে গিয়েছে। টানা বৃষ্টির জেরে চলতি বছরে প্রথমবার বন্যা প্লাবন পরিস্থিতির মুখোমুখি হল উত্তর-পূর্বের এই রাজ্য। নগাঁওয়ে বাড়িতে আটকে পড়া ৭০-৮০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। নিউ হাফলঙে টানা বর্ষণের রেললাইনে ধসের জেরে ট্রেনের মধ্যেই আটকে পড়েছিলেন প্রায় ২৮০০ যাত্রী। কোনওরকমে তাঁদের উদ্ধার করা হল।আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃষ্টির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।
অন্য দিকে, আই এমডি সূত্রে জানা যাচ্ছে, আগামী ১৯ মে নাগাদ বঙ্গোপসাগরে আরও একটি নতুন নিম্নচাপ তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে। এই প্রসঙ্গে আইএমডি-র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ”এক-দু’দিনের মধ্যেই দক্ষিণ আন্দামান সাগরে প্রক্রিয়া তৈরি হবে। তারপরই নিম্নচাপ তৈরি ও তার প্রভাব নিয়ে বলা যাবে।”