দেশের সময় : বনগাঁ দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক স্বপন মজুমদারকে গ্রেফতার-সহ কয়েক দফা দাবিতে বৃহস্পতিবার তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার পক্ষ থেকে স্মারকলিপি দেওয়া হয় বনগাঁর পুলিশ সুপার তরুণ হালদারের কাছে। দলীয় সূত্রে জানানো হয়েছে, স্থানীয় কিছু সমস্যার কথাও পুলিশ সুপারকে জানানো হয়েছে। পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, অভিযোগ এবং দাবিগুলি খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হবে।

স্মারকলিপিতে তৃণমূলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, বিজেপি বিধায়ক একজন মাদক পাচারকারী। অভিযোগ, দিন কয়েক আগে গাইঘাটার চাঁদপাড়ায় একটি অরাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে বিজেপি বিধায়ক স্বপন অনুব্রত মণ্ডল এবং মুখ্যমন্ত্রীর নাম নিয়ে উসকানিমূলক মন্তব্য করেছেন। ওই ঘটনায় তৃণমূলের পক্ষ থেকে বনগাঁ, গাইঘাটা, গোপালনগর থানায় বিধায়কের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছিল। বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি গোপাল শেঠ বলেন, ‘‘পুলিশ সুপারের কাছে আমরা বিজেপি বিধায়ককে গ্রেফতারের দাবি করেছি।’’

এদিন বনগাঁ শহরে রামনগর রোডের মোড় এলাকায় একটি সভা করেন তৃণমূল নেতৃত্ব। উপস্থিত ছিলেন দলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি গোপাল শেঠ, সাংগঠনিক জেলার চেয়ারম্যান শঙ্কর দত্ত-সহ অনেকে।

জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, পুলিশের এনফোর্সমেন্ট ডিপার্টমেন্ট পাট ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ফড়ে ও আড়তদারদের কাছ থেকে অসাধু উপায়ে টাকা চাইছে। টাকা না দিলে পাট বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে। গোপাল বলেন, ‘‘পুলিশ সুপারের কাছে অবিলম্বে এই বিষয়টি বন্ধ করার দাবি জানানো হয়েছে। না হলে পাট চাষিরা পাট বিক্রির জায়গা পাবেন না।’’

শহরবাসীর অভিজ্ঞতা, বনগাঁ শহরে যখন জেলা পুলিশের কর্তারা যাতায়াত করেন, তখন পুলিশ সাধারণ যান চলাচল এবং মানুষের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করেন। সাধারণ মানুষের সঙ্গে পুলিশকর্মীরা সে সময়ে খারাপ ব্যবহার করেন পাশাপাশি জেলাপুলিশ কর্তার গাড়ি হঠাৎ করেই ভিড় বাজারের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ ধরে দাঁডিয়ে পড়ে ফলে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয় বলে অভিযোগ তুলেছেন শহরবাসীর একাংশ।

তৃণমূলের অভিযোগ, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের নামে স্কুল পড়ুয়া ও অভিভাবকদের হয়রান করা হচ্ছে। এটা বন্ধ করতে হবে। যান নিয়ন্ত্রণের জন্য পরিকল্পনামাফিক কাজ করতে হবে।

স্মারকলিপিতে জানানো হয়েছে, সিবিআই-ইডিকে প্রভাবিত করে তৃণমূল নেতাদের ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। রাজ্যপালকে ভুল পথে পরিচালিত করার চেষ্টা চলছে।

সীমান্ত এলাকায় বিএসএফ কৃষকদের উপরে নির্যাতন চালাচ্ছে, কাঁটাতারের বাইরে জমিতে চাষের কাজ করতে যেতে দেওয়া হচ্ছে না— এ ধরনের অভিযোগও করা হয়েছে লিখিত ভাবে। অথচ, সীমান্ত এলাকা পাচারকারীদের মুক্তাঞ্চলে পরিণত হয়েছে, উত্তরপ্রদেশ থেকে গরু এনে সীমান্ত দিয়ে পাচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। পুলিশের কাছে তাঁদের দাবি, তাঁরা যেন ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে পদক্ষেপ করেন।

এ দিনের সভা থেকে শঙ্কর বলেন, ‘‘বিজেপি বিধায়ক কুরুচিকর কথা বলে যাচ্ছেন।’’ তাঁর জন্য ‘মুগুরের’ ব্যবস্থা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

স্বপন এব্যাপারে পরে জানান, ‘‘আমাকে গ্রেফতারের দাবি তোলা হচ্ছে, সেটা কিসের ভিত্তিতে? সত্যি কথা বলেছিলাম বলে? বিরোধীদের কন্ঠরোধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’’ শঙ্কর, গোপালরা গোবরডাঙা ও বনগাঁর পুরপ্রধানের পদে বসেছেন মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার লুট করে, এমনই মন্তব্য করেন স্বপন।

শাসক দলের কর্মসূচি নিয়ে সিপিএম নেতা পীযূষকান্তি সাহা বলেন, ‘‘পুলিশমন্ত্রী বলছেন, পুলিশ ব্যর্থ। সেই ফল তো ব্লক পর্যায়েও আসবে। সেটাই হল এ দিন। রাজ্যে পুলিশ-প্রশাসন বলে কিছু নেই।’’

বিজেপিতে নেতা দেবদাস মণ্ডলের কথায়, ‘‘তৃণমূল এখানে গোষ্ঠীকোন্দলে জেরবার। ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে গোলমাল। তা থেকে মানুষের দৃষ্টি ঘোরাতে স্মারকলিপি কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। তবে মানুষ বোকা নন।’’

তৃণমূলের এ দিনের কর্মসূচিকে কটাক্ষ করেছে বিরোধী দলগুলি। তাদের বক্তব্য, শাসক দল হয়ে তৃণমূল তাদেরই পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি দিচ্ছে। এমনটা আগে দেখা যায়নি। পুলিশ-প্রশাসন-তৃণমূল সব মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে। এই কর্মসূচি মানুষকে বোকা বানানোর কৌশল ছাড়া কিছু নয়।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর নিজের হাতে থাকা দফতরের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন বুধবারই। পুলিশের বিরুদ্ধে তাঁর সেই বার্তা নিয়ে বিরোধী শিবির সমালোচনায় মুখর। এ বার শাসকদলের পক্ষ থেকে পুলিশ সুপারের কাছে নানা দাবিতে স্মারকলিপি দেওয়াকে কেন্দ্র করে বিতর্ক দানা বাঁধল বনগাঁয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here