দেশের সময়, বাগদা: উত্তর২৪ পরগনার বাগদায় তরুণীর গণধর্ষণ কাণ্ডে ইতিমধ্যেই অভিযুক্ত দুই বিএসএফ জওয়ানের বিরুদ্ধে রিপোর্ট তৈরি করে ফেলেছেন বিএসএফের অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি। থানাতেও দায়ের হয়েছে অভিযোগ। গ্রেফতার হয়েছেন ৬৮ নম্বর ব্যাটেলিয়ানের অভিযুক্ত ২ জওয়ান।

এদিকে ঘটনার পর থেকেই কার্যত আতঙ্কে দিন কাটছে নির্যাতিতার পরিবারের সদস্যদের। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার রাতে গোটা ঘটনা ঘটে নির্যাতিতার আড়াই বছরের শিশু কন্যার সামনে। এমনটাই দাবি করেছেন নির্যাতিতার মা। 

তাঁর দাবি, এই ঘটনার পর থেকেই শিশু কন্যাটি পুরোপুরি ট্রমায় রয়েছে। মাঝে মাঝে ভয় পেয়ে যাচ্ছে, চমকে উঠছে বলেও দাবি করেছেন তিনি। এদিকে বিএসএফের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ওই মহিলা দু বছর আগে বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসেছিলেন। বর্তমানে ফের বাংলাদেশে ফিরে যেতে দালাল ধরেছিলেন তিনি। সেই দালালের হাত ধরেই তিনি আবার গত ২৫ অগাস্ট রাতে বেআইনিভাবে বাংলাদেশে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। অবৈধভাবে ভাবে কাঁটাতার পার হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। তখনই পড়ে যান বিএসএফের নজরে। 

যদিও নির্যাতিতার পরিবারের দাবি তাঁদের মেয়ে বাগদায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়েছিল। আবার এও বলে ওই গৃহবধুর স্বামী বাংলাদেশে থাকে। তার ফলে বাড়ছে জল্পনা।

বিএসএফের ভয়ে লুকিয়ে পড়েছিলেন কাঁকরোলের মাচার নীচে। মধ্যরাতে সেখান থেকে টেনে বার করে ধর্ষণ করা হয় বছর তেইশের তরুণীকে! বিএসএফের কমান্ডার পদমর্যাদার এক অফিসারের নির্দেশেই ওই তরুণীকে ধর্ষণ করেছেন বাহিনীর এক কনস্টেবল! বাগদায় ধর্ষণের ঘটনায় এমন চাঞ্চল্যকর তথ্যই জানতে পেরেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতের ওই ঘটনায় শুক্রবার গ্রেফতার হওয়া দুই বিএসএফ-কর্মীকে শনিবার বনগাঁ মহকুমা আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক তাঁদের সাত দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

যদিও এই ঘটনার জন্য দোষীদের কঠিন ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে নির্যাতিতার পরিবার। এদিকে অভিযুক্ত দুই জওয়ানের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই কোর্ট অফ এনকোয়ারি গঠন করা হয়েছে। সাসপেন্ডও করা হয়েছে দু’জন অভিযুক্ত জওয়ানকে।

শনিবারই ঘটনাস্থলে যান বাগদার বিধায়ক তথা তৃণমূলের বনগাঁ সংসদীয় জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস। এলাকা ঘুরে দেখেন তিনি। বিএসএফকে বিঁধে তাঁর অভিযোগ, ‘‘বিএসএফ এক জন অসহায় মহিলাকে ধর্ষণ করেছে। এ নিয়ে এলাকায় মানুষের মধ্যে চাপা আতঙ্ক আছে। বিএসএস যা করেছে তাতে সাধারণ মানুষ আরও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবেন। আমরা আগামিদিনে এটা নিয়ে মিছিল ও সভা করব। এখানে এসে যা দেখলাম তা সবিস্তারে মুখ্যমন্ত্রীকে জানাব।

সেই মতো আজ রবিবার বিকালে বনগাঁ সংসদীয় জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাসের নেতৃত্বে স্থানীয় কাশীপুর গ্রাম সভা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে জন সভার আয়োজন করেছে তৃণমূল ৷ সেই সভায় উপস্থিত হওয়ার কথা রয়েছে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ সহ শশী পাঁজা, কাকলি ঘোষ দস্তিদার এবং পার্থ ভৌমিকেরও৷

এমনিতে ধর্ষণ খুনের ঘটনায় ভিনরাজ্যে টিম পাঠানোর বিষয়টি তৃণমূল বছর তিনেক ধরে করে আসছে। হাথরাস কাণ্ডের সময়েও কাকলি ঘোষ দস্তিদার, দোলা সেনদের পাঠিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাগদায় যখন ধর্ষণে নাম জড়িয়েছে বিএসএফের, এবার সেখানেও টিম পাঠাল বাংলার শাসকদল।

বাগদার ঘটনাকে জাতীয়স্তরেও তুলে ধরতে চাইছে তৃণমূল। দেখাতে চাইছে, এই হল অমিত শাহের অধীনে থাকা বিএসএফের ভূমিকা। শনিবার শশী পাঁজা, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যরা ভিডিও বার্তা দিয়ে এ নিয়ে তো সমালোচনায় মুখর হয়েছেন,  বাংলা, হিন্দি, ইংরেজিতে দলের প্রতিবাদের কথা জানিয়েছেন তৃণমূলের তিন নেত্রী।

তা ছাড়া একই সঙ্গে পৃথকভাবে তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন কুণাল ঘোষও। এখন দেখার আজ তাঁরা বাগাদার গ্রামে এসে পৌঁছে কি বার্তা দেন স্থানীয় বাসিন্দারের জন্য ৷ এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত কাশীপুরে তৃণমূলের জনসভার – মঞ্চে এসে পৌঁছাননি কুনাল ঘোষ, শশী পাঁজা, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যরা৷ তবে স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের উপস্থিতিতে সভার কাজ শুরু হয়েছে৷ মাঠে ভির জমিয়েছেন এলার মানুষ ৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here