অর্পিতা বনিক, দেশেরসময়:

অশোকনগরের জগদ্ধাত্রী পুজো মানেই নতুন চমক। আর তা দেখার জন্য দূর দুরান্ত থেকে ছুটে আসেন দর্শনার্থীরা। মণ্ডপ কিংবা শোভাযাত্রা নয়, প্রতি বছরই জগদ্ধাত্রী পুজোর থিমও চমকে দেয় সকলকে। আশোকনগরের বিভিন্ন জায়গতেই জগদ্ধাত্রী পুজোর জাঁকজমক চোখে পড়ে। এলাহি আয়োজনের সঙ্গে এখানকার পুজোকে ঘিরে রয়েছে স্থানীয় মানুষের আনন্দ ও আন্তরিকতা ৷কল্যাণগড়ে মহিলা পরিচালিত স্কাইলারের জগদ্ধাত্রী পুজো এবার ৪৫ তম বছরে পদার্পণ করল। এবার আদিবাসী আঙিনার আদলে তৈরি হয়েছে তাদের মণ্ডপ।  দেখুনভিডিও

শীতের আমেজ সবে পড়তে শুরু করেছে। এই সময় দেবী জগদ্ধাত্রীর আরাধনা এক অন্য রূপ নেয় ৷একই দেবীর দুই রূপ। একজন দুর্গা, অন্য জন জগদ্ধাত্রী। দুর্গা পুজোর ঠিক একমাস পরেই হয় জগদ্ধাত্রী পুজো। আশ্বিন মাসের শুক্লা অষ্ঠমীতে দেবী দুর্গার মূল পুজো আর কার্তিকের শুক্লা নবমীতে দেবী জগদ্ধাত্রীর পুজো হয়। শুধু আশোকনগর নয় বলাই যায় গোটা বাংলা এই সময় মেতে উঠেছে জগদ্বাত্রীর আরাধনায় ৷

জগদ্ধাত্রী পুজোয় চন্দননগর ও কৃষ্ণনগরের পাশাপাশি
উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার অশোকনগর কল্যাণগড় রাজ্যের মধ্যে বিশেষ নজর কাড়ে।

অশোকনগর পৌরসভার অন্তর্গত কল্যাণগড় এলাকায় প্রায় ৬০ টি জগদ্ধাত্রী পুজো হয়ে থাকে। চন্দননগর ও কৃষ্ণনগরে কিছুটা আগে থেকেই পুজো শুরু হলেও, দশমীর পর থেকেই মানুষের ভিড় বাড়ে কল্যাণগড়ে প্রতিমা দর্শনের জন্য। এ বছরও একাধিক বিগ বাজেটের পুজো আয়োজন করা হয়েছে কল্যাণগড়ে।

অন্যদিকে, নেতাজি বাগ ওয়েলফেয়ার সোসাইটির ৪৯ তম বর্ষে থিম ভাবনায় ফুটিয়ে তুলছে লৌহ মানব। লোহার বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে এবার তারা মণ্ডপ তৈরি করেছেন। কল্যাণগড় ফুটবল কোচিং সেন্টারের জগদ্ধাত্রী পুজো এবছর ২৩ বছরে পড়ল। এবার তাদের থিমের মধ্যে দিয়েই ফুটে উঠবে যমালয়ের বিচারসভা। জীবনে পাপ ও পুণ্যের ফল মানুষ এই জীবনেই পেয়ে যান। পরজন্ম বলে কিছু হয় না। যমালয়ে বিচারসভার মাধ্যমে সেটা তুলে ধরা হচ্ছে। বিচারসভায় দেখা যাবে চিত্রগুপ্ত, যমরাজের মতো জীবন্ত চরিত্র।

ইতিমধ্যেই ভিড় সামাল দিতে চূড়ান্ত পর্বের প্রস্তুতি সেরে নিয়েছে প্রশাসনের আধিকারিকেরা। দর্শনার্থীদের পরিষেবা দেওয়ার জন্য সহায়তা কেন্দ্র ও পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে পুরসভার তরফেও। অশোকনগর পুরসভার হরিপুর মোড় থেকে কল্যাণগড় এলাকাকেই জগদ্ধাত্রী পুজোর ‘হটস্পট’ হিসাবে ধরা হয়।

কল্যাণগড়েই ৩০টি পূজো হয়। এর মধ্যে বিগ বাজেটের পুজো ১৯টি। কোথাও হচ্ছে হ্যারি পটারের জাদুনগরী, কোথাও যমালয়ে বিচারসভা আবার বেশ কয়েকটি মন্ডপের ভাবনায় এবার উঠে আসছে আদিযোগী। কোথাও আবার থিম গুজরাটের স্বামীবাপ্পা স্মৃতি মন্দির, আদিবাসীদের আঙিনাও ফুটে উঠছে মন্ডপের সাজে।

কল্যাণগড় কয়াডাঙার নেতাজি সংঘের ৪৫ তম বছরে থিম গুজরাটের মুক্ত জীবন স্বামীবাপ্পা স্মৃতি মন্দির। প্রায় ৬০ ফুট উঁচু মণ্ডপ। সামঞ্জস্য রেখে তৈরি হয়েছে প্রতিমা। সঙ্গে রয়েছে চোখ ধাঁধানো আলো। এদিকে কল্যাণগড়ে মহিলা পরিচালিত স্কাইলারের জগদ্ধাত্রী পুজো এবার ৪৫ তম বছরে পদার্পণ করল। এবার আদিবাসী আঙিনার আদলে তৈরি হয়েছে তাদের মণ্ডপ। দেবীনগর অধিবাসী বৃন্দের জগদ্ধাত্রী পুজো এ বছর ১২ বছরে পড়ল।উত্তরাখণ্ডের কেদারনাথ মন্দিরের আদলে তৈরি হয়েছে এই পুজো মণ্ডপ।

২৪ নভেম্বর পর্যন্ত পুজোর অনুমতি রয়েছে বলেই জানালেন ক্লাব উদ্যোক্তারা। ফলে অশোকনগর ও কল্যাণগড়ের জগদ্ধাত্রী পুজো দেখতে মানুষের ঢল বেশ কয়েকদিন ধরেই দেখা যাবে বলে আশাবাদী উদ্যোক্তারা। ভিড় সামাল দিতে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মোড় গুলিতে পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন রাখা হচ্ছে। থাকছে বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থাও।

শহরে ৬ টি পুলিশি সহায়তা কেন্দ্র খোলা হবে বলেও পুলিশ প্রশাসনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে। দর্শনার্থীদের সুষ্ঠুভাবে পথ নির্দেশিকার জন্য পুরসভার তরফ ৫৫ জন ভলান্টিয়ার মোতায়েন করা হয়েছে বলেও জানানো হয়। এদিন বেশ কয়েকটি পুজো মন্ডপের উদ্বোধন হয়ে গিয়েছে, তবে এখনও বহু মণ্ডপে চলছে শেষ মুহূর্তের চূড়ান্ত পর্যায়ের প্রস্তুতি। আগামী কয়েক দিন এই জগদ্ধাত্রী পুজোকে কেন্দ্র করে অশোকনগর কল্যাণগড় এলাকা উৎসবের চেহারা নেবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here