দেশের সময়,কলকাতা: ‘দিদি আপনার সময় শেষ হয়ে গিয়েছে’.. আজ বাংলার ১৮ লোকসভা আসন, ৭৭ বিধানসভা আসন বিজেপিকে দিয়ে বাংলার মানুষ বুঝিয়ে দিয়েছে এখানে পরের সরকার ভারতীয় জনতা পার্টির সরকার হবে। : অমিত শাহ 


মমতার বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে অমিত শাহ বলেন, “২ কোটি ৩০ লাখ ভোট বাংলায় ভারতীয় জনতা পার্টি পেয়েছে। আমাদের নেতা শুভেন্দু অধিকারীকে দিদি দ্বিতীয়বার বিধানসভা থেকে বরখাস্ত করে দিয়েছেন। আমি বলছি, দিদি কান খুলে শুনে নিন শুভেন্দুজিকে আপনি বিধানসভার বাইরে বের করতে পারেন। কিন্তু, বাংলার জনতাকে চুপ করাতে পারবেন না। বাংলার মানুষ বলছে দিদি আপনার সময় এবার শেষ হয়ে গিয়েছে।”  

বুধবার শহরে বিজেপির হাইভোল্টেজ সভা। কলকাতায় পা রাখছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে বিজেপির সভাকে ঘিরে এককথায় স্তব্ধ হতে পারে শহর কলকাতা।

অন্তত ৩ লক্ষ মানুষের সমাবেশ হবে ধর্মতলায়, সেই লক্ষ্যমাত্রাই স্থির করেছে বঙ্গ বিজেপি। গত কয়েকদিন ধরে জেলায় জেলায় গিয়ে সভা করেছেন নেতারা। বুধবার কর্মী আনার জন্য একাধিক ট্রেন ভাড়া করা হয়েছে।

প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়ালের নেতৃত্বে বিক্ষোভ, শাহের সভার আগেই উত্তেজনা ধর্মতলা চত্বরে ৷
স্লোগান তুলে রাস্তায় বসে পড়লেন কর্মী-সমর্থকেরা। আদালতের অনুমতি থাকা সত্ত্বেও কেন ব্য়ারিকেড করল না পুলিশ, কেন একের পর এক বাস চলে আসছে, সেই প্রশ্নই তুলেছেন কর্মী সমর্থকেরা। ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায় ধর্মতলা চত্বরে। উপস্থিত ছিলেন বিজেপি নেত্রী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল। পরে গাড়িগুলি ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

কেন্দ্রীয় সরকার বঞ্চনা করছে বাংলাকে, এই অভিযোগ তুলে দিল্লি পর্যন্ত ছুটে গিয়েছিল তৃণমূল। কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের দফতর পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্যায়। জব কার্ড হোল্ডারদের টাকা আটকে রাখার অভিযোগ তুলে যখন সরব রাজ্যের শাসক দল, তখনও পাল্টা অভিযোগে পিছিয়ে থাকতে রাজি নয় বঙ্গ বিজেপি। কেন্দ্রীয় সরকারি স্কিম থেকে বঞ্চনা করা হচ্ছে বলে এবার অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। অভিযোগ জানানোর জন্য ড্রপ বক্সেরও ব্যবস্থা করা হল এবার।

আজ, বুধবার ধর্মতলায় বিজেপির মেগা সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সেই সভামঞ্চের পাশে রাখা হয়েছে একাদিক টিনের বাক্স। পাশে লেখা রয়েছে ‘বঞ্চনা ভাণ্ডার’। শুধু বিজেপি নয়, যে কোনও দলের সদস্য বা অরাজনৈতিক ব্যক্তিরাও ওই বাক্সে বঞ্চনার অভিযোগ জানাতে পারেন বলে বিজেপি সূত্রে খবর।

এদিনের সভায় বিজেপির মূল ইস্যু হতে চলেছে কেন্দ্রীয় স্কিম থেকে বঞ্চনা আর দুর্নীতির অভিযোগ। বঙ্গ বিজেপির শীর্ষ নেতারাও এই বিষয়েই কথা বলবেন বলে জানা যাচ্ছে। আর তার সঙ্গেই থাকছে এই ড্রপ বক্স। আপাতত শহরের মঞ্চের পাশে বাক্সগুলি রাখা হলেও পরবর্তীতে জেলাতেও এই সব বাক্স পৌঁছে দেবে বিজেপি।

এদিকে, বিজেপি তথা কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে অমিত শাহকে খোলা চিঠি দিচ্ছেন তৃণমূলের নেতা-নেত্রী। সেখানে মূলত আর্থিক বঞ্চনার অভিযোগ সামনে আনছেন তাঁরা।

‘কেন্দ্রের কাছে ৭০০০ কোটি টাকা পায় রাজ্য’! বঙ্গ সফরের আগে অমিত শাহকে খোলা চিঠি তৃণমূলের, জোরাল আক্রমণ ৷

কী লেখা নেই চিঠিতে৷ ১০০ দিনের কাজের বকেয়া ৭০০০ কোটি পাওনা থেকে শুরু করে ইডি-সিবিআই রেড৷ মুদ্রাস্ফীতি থেকে শুরু করে বেকারত্ব৷ রান্নার গ্যাসের দাম বাড়া থেকে শুরু করে আনাজের আকাশছোঁয়া দাম৷ একেবারে যেন তালিকা ধরে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ করল তৃণমূল৷ চিঠির ছত্রে ছত্রে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা, বকেয়া আদায়ের দাবি৷ বুধবার বঙ্গ বিজেপির মহা সমাবেশে যোগ দিতে কয়েক ঘণ্টার ঝটিকা সফরে কলকাতায় আসছেন অমিত শাহ৷ তার আগেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে লেখা এই খোলা চিঠি প্রকাশ করল তৃণমূল৷


চিঠিটি লিখেছেন, যুব তৃণমূলের সভানেত্রী সায়নী ঘোষ৷ চিঠির শুরুতেই সায়নী জানিয়েছেন, তিনি জানেন, দলীয় কর্মী-সমর্থকদের প্রতি বার্তা দিতেই কলকাতায় আসছেন অমিত শাহ৷ কিন্তু, বাংলার একজন তরুণ ভোটার হিসাবে তাঁর কিছু প্রশ্ন আছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কাছে৷ যার প্রথমটিই হল মনরেগা প্রকল্পে ৭০০০ কোটি বকেয়ার প্রশ্ন৷


প্রসঙ্গত, মিড ডে মিল, মনরেগা, আবাস যোজনা, গ্রাম সড়ক যোজনা, সর্বশিক্ষা অভিযানের মতো বেশ কিছু সরকারি প্রকল্পের ক্ষেত্রে কোটি কোটি টাকা কেন্দ্রের কাছে বকেয়া রয়েছে বলে দাবি করে রাজ্য৷ এ নিয়ে চলতি বছরেই দিল্লি অভিযান করেছিলেন তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়৷ মন্ত্রকের সামনে ধর্নাও দিয়েছিলেন তৃণমূলের সাংসদ বিধায়কেরা৷ তারপরে কলকাতায় রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেও তাঁরা তাঁদের কথা জানিয়েছেন৷

ধর্মতলায় ত্রিস্তরীয় মঞ্চে শাহর সঙ্গে থাকবেন সুকান্ত মজুমদার ও শুভেন্দু অধিকারী। শুক্রবার রাত থেকেই শুরু হয়েছে মঞ্চ তৈরির কাজ সহ সভার প্রস্তুতি। বেলা বাড়তেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মিছিল পৌঁছবে ধর্মতলায়। ফলে তীব্র যানজটের আশঙ্কা রয়েছে।
বিজেপি সূত্রে খবর, দলীয় কর্মীদের উদ্দেশ্যে বার্তা রয়েছে, হাওড়া স্টেশনে ট্রেনে যাঁরা নামবেন, তাঁরা সেখান থেকে মিছিল করবেন। অর্থাৎ হাওড়া ব্রিজ হয়ে স্ট্র্যান্ড রোড হয়ে ধর্মতলায় পৌঁছবেন সেই সকল বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা। আবার যারা শিয়ালদহ স্টেশনে নামবেন, তাঁরা শিয়ালদহ থেকে এস এন ব্যানার্জি রোড হয়ে ধর্মতলায় মিছিল করে যাবেন। তাই শিয়ালদহ ও হাওড়া স্টেশন থেকে ধর্মতলা যাওয়ার রাস্তা যে অবরুদ্ধ হওয়ার পূর্ণ আশঙ্কা রয়েছে। বিবাদি বাগ-ডালহৌসি চত্বরেও গাড়ির গতি শ্লথ থাকতে পারে।

 ধর্মতলা লাগোয়া এলাকাগুলিতে অধিক যানজটের সম্ভাবনা রয়েছে। যে পথগুলি ধরে মিছিল করে কর্মীরা আসছেন সেখানেও হতে পারে যানজটের সমস্যা। এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবারই লালবাজারের তরফে বিকল্প রুটম্যাপ জানানো হয়েছে।

লালবাজারের কর্তারা জানিয়েছেন, উত্তর কলকাতা থেকে ধর্মতলা বা দক্ষিণ কলকাতার দিকে যাওয়ার ক্ষেত্রে, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ হয়ে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ দিয়ে বিবি গাঙ্গুলি রোড হয়ে যেতে হবে। অন্যদিকে, দক্ষিণ কলকাতা থেকে ধর্মতলা বা উত্তর কলকাতার দিকে যেতে হলে, জওহরলাল নেহেরু রোড, ডোরিনা ক্রসিং হয়ে কাউন্সিল হাউস স্ট্রিট থেকে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ-এর দিকে গাড়ি ঘুরিয়ে দেওয়া হবে।  এছাড়াও উত্তর ও দক্ষিণমুখী গাড়ি এপিসি রোড হয়ে এজেসি বোস রোড ধরে যাবে।

বিজেপি সূত্রে খবর, বুধবার বিজেপির সভা শুরু হবে বেলা ১২টায়। অমিত শাহ সভাস্থলে পৌঁছবেন দুপুর পৌনে ২টো নাগাদ। সোয়া ৩টে নাগাদ সভাস্থল থেকে বেরিয়ে যাবেন তিনি। এক্ষেত্রে যারা বাস-ট্রাক সহ অন্যান্য যানবাহনে সভায় আসবেন, তাঁদের ধর্মতলায় সভাস্থলের কাছাকাছি যানবাহন রাখা সম্ভব হবে না। কাজেই বেশ খানিকটা পথ মিছিল করে সভাস্থলের কাছে পৌঁছতে হবে বিজেপি নেতা-কর্মীদের।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here